১২শ’ কোটির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, পাকিস্তানের প্রাপ্তি কতটুকু?
Published: 7th, March 2025 GMT
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই আসর আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল তারা। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান দলের ওপর বন্দুক হামলার পর ছয় বছর লেগেছিল জিম্বাবুয়ের মতো দলকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেখানে নিয়ে যেতে। মাঝে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজও সফর করে।
এসব সাফল্য দেখিয়েই ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট পায় পাকিস্তান। এসবে কম খরচও হয়নি তাদের। পাকিস্তান রুপিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি খরচ করে দেশের তিনটি ক্রিকেট ভেন্যু সংস্কার করেছে। বিদেশি দলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু লাহোরেই ১০ হাজার পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে।
ক্রিকেটবিশ্বকে আস্থায় বিদেশি দর্শকদের জন্যও ভিসা সহজ করা হয়েছে। সফল আয়োজনে সামর্থ্যের সবটুকুই দিয়েছে পিসিবি (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড)। বুধবার নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটিই ছিল এবারের আসরে পাকিস্তানের ভেন্যুতে শেষ ম্যাচ। আসর শেষে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, কতটা সফল হয়েছে আয়োজক পাকিস্তান?
হয়তো বাবর আজমরা টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ জিততে পারেননি, বৃষ্টির কারণে তিনটি ম্যাচও পরিত্যক্ত হয়েছে। তার পরও নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হওয়ায় স্বস্তি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। আনন্দ তাদের এই মর্যাদার আসর আয়োজনেই। ‘ক্রিকেটবিশ্বের কাছে আমরা ইতিবাচক একটি বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি, পাকিস্তানে খেলাটা অন্য সব দেশের মতোই নিরাপদ। এখানকার মানুষ ক্রিকেট ভীষণ ভালোবাসে।’
পিসিবির মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক সামি উল হাসান এভাবেই নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
আসলে আইসিসির এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দুটি লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের। প্রথমত, তাদের ক্রিকেট দলের সাফল্য। ঘরের মাঠে চেনা দর্শকদের সামনে ফাইনালটা অন্তত খেলতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের প্রথম ম্যাচে করাচিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে এবং পরের ম্যাচে দুবাইয়ে ভারতের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় রিজওয়ানদের।
শেষ ম্যাচ রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তাই পাকিস্তান দল নিয়ে তাদের লক্ষ্য মোটেই পূরণ হয়নি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় লক্ষ্যটি ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের সামনে পাকিস্তানের মাটিতে সফল আয়োজন করে দেখানো।
বিদেশিদের নিরাপত্তা, টুর্নামেন্ট ঘিরে আবেগ-উত্তেজনার মতো কিছু বিষয় তারা দেখাতে চেয়েছিল। এই লক্ষ্যেও পুরোপুরি সফল তারা হতে পারেনি। বৃষ্টির কারণে লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে। দুটি মাঠের ড্রেনেজ ব্যবস্থা মোটেই বিশ্বমানের ছিল না।
এমনকি লাহোরের মতো নতুন সংস্কার করা ভেন্যুতেও পুরো মাঠ ঢেকে রাখার মতো কাভার ছিল না। একটি মাত্র সুপার শপার দিয়ে আউট ফিল্ড খেলা উপযোগী করা যায়নি। রাওয়ালপিন্ডির ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল আরও বাজে। লাহোরে পরিত্যক্ত ম্যাচে পয়েন্ট খুইয়ে হতাশ ছিল আফগানরা। লজিস্টিক এই ঘাটতির সঙ্গে নিরাপত্তার শিথিলতা নিয়েও সমালোচিত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে। আফগানিস্তানের দুটি ম্যাচেই মাঠে রাজনৈতিক এক নেতার ছবি নিয়ে দর্শক ঢুকে যাওয়াকে ভালোভাবে নেয়নি অনেকে।
এর সঙ্গে আয়োজক পাকিস্তান জোর ধাক্কা খেয়েছে আসলে আসরের শুরুতে হাইব্রিড মডেলের কারণে। ১৫ ম্যাচের এই আসরে ১০টি পেয়েছিল পাকিস্তানের তিনটি ভেন্যু। যার তিনটিই আবার বৃষ্টিতে ভেস্তে গেছে। তা ছাড়া পাকিস্তান তাদের প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর সেভাবে আসরের বাকি ম্যাচগুলোতেও দর্শক ঠাসা ছিল না। শুধু আফগানিস্তান ম্যাচে গ্যালারিতে আফগানদের উপস্থিতির বাড়বাড়ন্ত ছিল।
বরং দুবাই লাভবান হয়েছে ফাইনালসহ পাঁচটি ম্যাচ পেয়ে। ‘ঘরের মাঠে ভরা গ্যালারির সামনে আমরা ভালো ক্রিকেট উপহার দিতে চেয়েছিলাম। আমরা ভীষণভাবে হতাশ করেছি তাদের।’
বিদায় নেওয়ার পর এভাবেই দর্শকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন রিজওয়ান। এই আসরের পর আগামী ছয় বছরে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট নেই পাকিস্তানের মাটিতে। শুধু এ বছর নারী বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের কিছু ম্যাচ রয়েছে সেখানে। কে জানে, পরবর্তী আইসিসির আসর পেতে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ক স ত ন ক র ক ট দল আইস স র আফগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জবির লংমার্চে পুলিশের বাধা, স্মারকলিপি দেবে প্রতিনিধিদল
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে তাঁতীবাজার মোড় থেকে তারা লংমার্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ক্যাম্পাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দূতাবাসের উদ্দেশ্যে এ পদযাত্রা শুরু করেন তারা।
তবে আজ থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। পুলিশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিক্ষোভকারীরা তাঁতীবাজার মোড় থেকে রায়সাহেব বাজার দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
এ সময় ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইসরাইলের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ইসরাইলি আগ্রাসন, বন্ধ করো করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়াও তাদের হাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন দূতাবাস ও সৌদি আরবের দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান করবে প্রতিনিধিদল। স্মারকলিপিগুলো বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা হয়েছে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা মুসলিম জাতি, খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরি। কিন্তু আমরা তা ভুলে গেছি। আজ আমরা শুধু ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত। এরই সুযোগে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলিম ভাই-বোনদের হত্যা করছে। আমি মুসলিম যুবকদের জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “যদি গাজার ফিলিস্তিনদের উপর বর্বরতা বন্ধ না হয়, তাহলে জাতিসংঘের অফিসে পরের সপ্তাহে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। আমরা শিক্ষক সমিতি গাজায় গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
এর আগে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংহতি সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
তিন দফার মধ্যে রয়েছে—গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে লংমার্চ ও স্মারকলিপি দেওয়া এবং দেশে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ করা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী