গ্রাফিতিতে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন: পর্ব ২
Published: 7th, March 2025 GMT
দেশের দেয়ালজুড়ে আঁকা হচ্ছে আন্দোলনের গ্রাফিতি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। একে স্মরণীয় রাখতেই শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ। গ্রাফিতিতে রয়েছে তাদের রক্তের দাগ। বৈষম্যবিরোধী প্রতিবাদ, অভ্যুত্থানের চিত্র। রাষ্ট্র সংস্কারের কথা, বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প। দুর্নীতি, অত্যাচারের অবসান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক বাংলার দৃশ্য, অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যাশাসহ আরও অনেক কিছু। শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম নজর কেড়েছে। প্রায় সবাই এর প্রশংসা করেছে। রক্তাক্ত জুলাইকে তারা গ্রাফিতিতে তুলে এনেছে। শহরের দেয়াল যেন আজ গ্রাফিতির ক্যানভাস।
জুলাইয়ের আন্দোলনে নানা স্লোগান ও নানা চিত্রে ভরে উঠেছিল দেয়াল। ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘পানি লাগবে পানি’, ‘গর্জে উঠেছিলাম বলেই বাংলাদেশে’, ‘বিকল্প কে আমি, তুমি আমরা’, ‘ছিনিয়ে এনেছি বিজয়, শিখিনি পারাজয়’, ‘শোনো ধর্ম আর দেশকে মিলাইতে যেও না’, ‘ফুলের নাম কি দিবা ফাতেমাচূড়া?’, ‘রক্তাক্ত জুলাই’, ‘আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না’, ‘আমরা গড়ব আমাদের দেশ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই’, ‘নাটক কোরো না পিও’ ইত্যাদি শত শত স্লোগানের গ্রাফিতিতে ছেয়ে যায় বাংলাদেশ।
কেবল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ভবনের দেয়াল নয়, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের স্তম্ভসহ কোথায় নেই গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতিতে রয়েছে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাহসিকতার প্রতীক আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। আবু সাঈদের কত যে প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে, এর যেন শেষ নেই। আছে মুগ্ধর প্রতিকৃতি। ‘মুগ্ধ পানি’র বোতলের গ্রাফিতিও আঁকা হয়েছে। বাংলাদেশের দেয়াল যেন রক্তাক্ত জুলাই।
আন্দোলনে আরও যাঁরা জীবন দিয়েছেন—ফাইয়াজ, তামিম, হৃদয়, ইফাজ, শুভ, শান্ত, রাসেল, সোহাগ, ফয়েজসহ অনেক শিক্ষার্থীর প্রতিকৃতি গ্রাফিতিতে এসেছে। আরও রয়েছে দারুণ সব গান ও কবিতার পঙ্ক্তিমালার গ্রাফিতি। ‘বল বীর বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির…’! ‘…আঁধারে ভয় পেয়ো না আলো আছে আড়ালে/ আঁধার কেটে যাবে তুমি উঠে দাঁড়ালে…’। ‘…সব মানুষের স্বপ্ন তোমার, চোখের তারায় সত্যি হোক/ আমার কাছে দেশ মানে, এক লোকের পাশে অন্য লোক…’। এমন আরও অনেক কালজয়ী গান ও পঙ্ক্তি।
ছাত্রদের বীরত্বগাথা এই প্রথম নয়, ১৯৫২, ’৬৯, ’৭১, এমনকি ১৯৯০ সালেও তারা প্রমাণ করেছে কীভাবে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে হয়। চলবে.
..
লেখক: সংগঠক ও সাংবাদিক
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন নীতিতে হতভম্ব ইউরোপে নতুন যুগ
যুগ যুগ ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে বিভক্ত করা। তাদের ভাবনা ছিল, এ বিভক্তির কারণে ভেঙে পড়বে পশ্চিমা জোট, যারা ইউরোপের প্রুশিয়া অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাঙ্ক প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক উপহার মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছেন, যার জন্য তারা ‘শীতল যুদ্ধ’ বা তারও আগে থেকে অপেক্ষা করছিল।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সামগ্রিক আচরণে ইউরোপ কার্যত হতভম্ব। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভিত্তি স্বাধীনতা। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এলেও এখন মিত্রতে পরিণত হয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। এতে ইউরোপ নিজেদের উপেক্ষিত ভাবছে। তারা আবারও নিজেদের শক্তি-সক্ষমতা (সামরিক) বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে। তারা মার্কিন নীতিতে বিস্মিত ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
ইউরোপের বিভিন্ন নেতার মুখে উঠে আসছে বিষয়টি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি রিনিউ ইউরোপ গ্রুপের সভাপতি ভ্যালেরি হায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সেই স্তম্ভ, যাকে কেন্দ্র করে শান্তির ব্যবস্থাপনা হয়। কিন্তু তারাই এখন অবস্থান পরিবর্তন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন যে অপপ্রচার চালান, সেটাই এখন ট্রাম্পের মুখে। আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।’
ইউরোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপ ও আচরণের আবেগি প্রভাব অনেক গভীর। ১৯৪৫ সালে শেষ হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে যে সমৃদ্ধ ও মুক্ত মহাদেশের দীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘পশ্চিম’ বলতে যা বোঝায় তা ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। বহু বছর ধরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা উত্তেজনার মধ্যেও একটি বিষয়ে ছিল মতৈক্য, তা হলো– উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। বর্তমানে এ প্রশ্নে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন আর যুক্তরাষ্ট্র– প্রত্যেকেই আলাদা। ‘পশ্চিম’ এখন কেবল এক ধারণা। কীভাবে শূন্যতা পূরণ হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে সহিংসতার বিষয়টি নিশ্চিত। কারণ, পরাশক্তিগুলো এটা চাচ্ছে।
প্যারিসের পো ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোল বাচারন বলেন, ‘ট্রাম্প যেটা করছেন এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, উদার গণতন্ত্রের অবদমন।’
ইউরোপের পপুলিস্টরা বিপাকে
ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের জনপ্রিয় রাজনীতিকরা (পপুলিস্ট) পড়েছেন বিপাকে। শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রাজনীতিকরা ইউক্রেন প্রশ্নে কতটা ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন, বা কতটা দূরত্বে– তা নির্ণয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান থেকে একেবারেই দূরে থাকার কথা ভাবছেন। যেভাবে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। নরডিক দেশসহ পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে ব্যাপক। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় রুশ সহমর্মীদের পাওয়া যায়।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটো জোটকে আক্রমণ করেন। তিনি ইউরোপের মিত্রদের সতর্ক করে বলেন, যদি তারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যয় না করে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সুরক্ষা দিতে পারবে না। গত বৃহস্পতিবার তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো কমন সেন্স, তাই না। যদি তারা খরচ না করে, আমি তাদের সুরক্ষা দিতে যাব না। না, আমি সুরক্ষা দেব না।’ ট্রাম্প জানান, ন্যাটো নিয়ে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বছরের। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের প্রথম মেয়াদে তাঁর এ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটো মিত্রদের কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এ জন্য ৭৫ বছর পুরোনো ট্রান্সআটলান্টিক জোটের অন্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়িয়েছে, যদিও এখনও তা পর্যাপ্ত নয়। তাদের আরও খরচ করা উচিত।