পবিত্র রমজান: দেশে দেশে যত আচার-রীতি
Published: 7th, March 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী সব মুসলমান একই নিয়মে রোজা রাখেন, সাহ্রি ও ইফতার করেন। কিন্তু পবিত্র রমজানকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে মুসলমানদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। এর কারণ, দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যে আচার পালন করেন, মরক্কোর মুসলমানরা তা করেন না। এভাবে রমজান যেন হয়ে ওঠে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি চর্চার মাস।
তুরস্কে এখনো তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা মধ্যপ্রাচ্য ও সংলগ্ন দেশগুলোর অনেক পুরোনো রীতি। এই আধুনিক সময়ে এসেও ঐতিহ্য থেকে সরে যায়নি প্রাচীন সভ্যতার দেশটি। পয়লা রমজানে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে ইফতারের আগে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ। সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছিল ইফতারির প্যাকেট। তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো, ইফতারের সময় হয়েছে। পরিবারগুলো ঘাসের ওপর মাদুর বিছিয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে ইফতার শুরু করল।
ওই দিন আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও খ্যাতনামা কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাউদ্দিন সুমন। ৪ মার্চ রাতে প্রথম আলোকে সেই সন্ধ্যার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি, ‘কামান দাগার আগে অনেকটা সময় ধরে ইসলামি সংগীত পরিবেশন হয়েছিল। সংগীতের সুরের মূর্ছনায় একটা মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হলো। ব্যাপারটা বিশেষভাবে ভালো লেগেছে।’ সুমন জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদের সামনে উপস্থিত থেকে এত বড় আয়োজনের অংশ হওয়া তাঁর জীবনের এক পরম পাওয়া। সে দিন তিনিও সরকারিভাবে বিতরণ করা প্যাকেট সংগ্রহ করে উন্মুক্ত প্রান্তরে বসে ইফতার করেছেন বলে জানালেন।
তুরস্কে তোপধ্বনি দেওয়ার সময়ই মসজিদের মিনারগুলোতে জ্বালানো হয় ‘কানদিল’ নামের একধরনের বাতি। বাতিগুলো জ্বলতে থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। বাতি জ্বালানোর এই ঐতিহ্য বহু পুরোনো। আর তোপধ্বনি কেবল ইফতারের সময় নয়, সাহ্রি শুরু ও শেষের সময়ও দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানকে স্বাগত জানানো হয় ভিন্নধর্মী এক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ উৎসবের নাম ‘হক আল লায়লা’। মূলত শাবান মাসের ১৫ তারিখের পরই ছোট শিশুরা রঙিন কাপড় পরে দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এ সময় তারা সুর করে বলতে থাকে, ‘তোমার দরজায় এসেছি, আমাদের দুহাত ভরে দাও। আমাদের দিলে আল্লাহও তোমাদের দেবেন।’ তখন গৃহকর্ত্রীরা শিশুদের হাতে চকলেট, বাদাম, কেকসহ নানা উপহার তুলে দেন। সাধারণত আসরের নামাজের পর শিশুরা বের হয় এবং মাগরিব অবধি মিষ্টান্ন সংগ্রহ করে।
আরব আমিরাতে শত বছর ধরে এই হক আল লায়লা উৎসব চলছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা অন্যকে উপহার দেওয়া এবং ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হয়।
দুবাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিক কামরুল হাসান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকেরা নিজেদের সংস্কৃতিকে লালন করতে ভালোবাসেন। রোজার আগে হক আল লায়লা উৎসব তেমনই এক সংস্কৃতি। তবে করোনার পর অনেক ধরনের সামাজিক উৎসবে বদল এসেছে, অথবা সীমিত হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ছোট কিন্তু ধনী দেশ কাতারে ১৪ রমজানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মানানসই ব্যাগ নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তারা গায় ‘গারাংগাও’ গান। উপহার হিসেবে পায় মিষ্টি ও চকলেট। এটা মাত্র ওই এক দিনই করা হয়।
প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি মিসরে রমজান মাসে বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রঙিন ফানুস ঝুলিয়ে রাখা হয়। মূলত এগুলো লন্ঠন। এসব ফানুস বা লন্ঠন দেশজুড়ে উৎসবের বার্তা আনে।
উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় পবিত্র রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মানুষ রমজানের আগে তাঁদের বাড়িঘর রং করান। ঘরের চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন, ধুয়েমুছে একেবারে চকচকে করে তোলেন।
ইফতারের পর ইরাকিরা মেহাবেস নামে একটি খেলা খেলে থাকেন। ৫০ থেকে আড়াই শ জন এ খেলায় অংশ নেন। এটা মূলত আংটি লোকানো খেলা। পালা করে একটি দল আংটি লুকিয়ে রাখে। অন্য দলের সদস্যদের ধারণা করতে হয় যে আংটিটি কার কাছে আছে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। রমজানের আগে তাঁরা নিজেদের শরীর পবিত্র করার জন্য বিশেষ একধরনের গোসল করে থাকেন। একে বলা হয় পাদুসান। জাভা দ্বীপের মুসলিমদের বিশ্বাস, এই গোসল কেবল শরীর নয়, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে নয়, এই গোসল করা হয় পাহাড়ি ঝরনা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক জলাশয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ইফতারের পর রাইভারু নামে একধরনের কবিতা পড়া হয়। এটা সাধারণত চার বা ছয় লাইনের হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে দেশটিতে রাইভারু ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মানুষ রাইভারু গাইতে গাইতে ইফতার করেন। কেউ কেউ আবার ইফতারের পর সমবেত সংগীতের মতো এটা আবৃত্তি করেন।
আমাদের ঢাকা শহরে কাসিদা গেয়ে সাহ্রির জন্য রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগানোর সংস্কৃতি একসময় চালু ছিল। এখন তেমন নেই। রোজাদারদের জন্য যাঁরা এমন ত্যাগ স্বীকার করেন, মিসর ও জর্ডানে তাঁরা মেসাহারাতি নামে পরিচিত। আর মরক্কোয় তাঁদের ডাকা হয় নাফারস নামে। তুরস্কের গ্রামেগঞ্জে দাভুল নামে একধরনের ঢোল পিটিয়ে এই কাজ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে যে তরুণেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বকশিশ পান, এমনকি অনেক পরিবার তাঁদের ডেকে নিয়েই সাহ্রি করিয়ে থাকে। বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত র র প একধরন র মসজ দ র ম সলম ন র স মন ত র কর রমজ ন র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
নওশাবার ঈদ কালেকশন
উৎসবে পোশাকে ‘গর্জিয়াস ভাইভ’ না থাকলেই যেন নয়! কিন্তু প্রকৃতিতে একটু একটু করে গরম বাড়ছে তাই পোশাকটি গর্জিয়াস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরামদায়কও হওয়া চাই। এই দুই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঈদ পোশাক তৈরিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের ফ্যাশন জগতের উদ্যোক্তারা। ফ্যাশন হাউস ঋতি’র স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মুসাররাত নওশাবার ঈদ কালেকশন সম্পর্কে জানাবো আজকের এই আয়োজনে।
ঋতি’র ঈদ কালেকশনে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে শাড়ি আর পাঞ্জাবী। মুসররাত নওশাবা বলেন, ‘‘বরাবরের মতোই এবারের ঈদ কালেকশনে আমি শাড়ি রাখছি। কারণ আমি শাড়ি ডিজাইন করতে খুব পছন্দ করি। এবারের ঈদ কালেকশনে থাকলে কাপল সেট, কিছু টপস আনার চেষ্টা করছি। ইয়াং জেনারেশনের মেয়েরা এটা পছন্দ করবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রকৃতিতে আস্তে আস্তে গরম চলে আসছে তাই গরমে যাতে পোশাকগুলো আরামদায়ক হয় সেই অনুাযায়ী পোশাকের ফেব্রিক বেছে নিয়েছি। ফেব্রিকে সব সময় চেষ্টা করি একটু ভিন্ন ধরণের রং আনার জন্য। যেহেতু উৎসব সেজন্য ফেব্রিকে অরগাঞ্জা, সেমি সিল্ক ফেব্রিক বেছে নিয়েছি। সেমি সিল্কটা একটা গর্জিয়াস ম্যাটেরিয়াল। এটার সঙ্গে থাকছে সেমি মসলিন আর সাথে তো সুতি থাকছেই।’’
আরো পড়ুন:
পোশাকে থাকুক আরাম আর উৎসবের আমেজ
বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সবমিলিয়ে ঋতি’র এবারের ঈদ কালেকশনে শাড়ি, টপস, পাঞ্জবীতে প্রাধান্য পেয়ে বাংলার প্রকৃতি, সুরমা, ভায়োলেট, পুস ইন টু রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শাড়ির মধ্যে ডিজিটাল প্রিণ্ট শাড়িকে বেশি কালারফুল করা হয়েছে। এছাড়া একটি থিমেটিক ডিজাইন নিয়ে এসেছে ঋতি। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাখির চোখে বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের যত ধরণের রং আছে, যেমন নদী, মাঠ, ঘাট এগুলোর আলাদা রং ও রংয়ের শেড রয়েছে। বাংলার এমন রং নওশাবা তুলে এনেছেন তার ডিজাইন করা শাড়ির জমিনে। পাঞ্জাবী তৈরি হয়েছে সুতি এবং ভিসকস ফেব্রিকে।
নওশাবা বলেন, ‘‘এই থিমেটিক কাজটি করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করেছে বাংলাদেশের আর্টিস্ট পেইজ ‘ড্রপস’। আমি চেষ্টা করেছি এই শাড়ির মাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যাচারাল রিসোর্স, মাঠ, ঘাট, নদী, নানা রকমের ফসলের রং তুলে আনার জন্য।’’
ঈদের দিন নিজেও শাড়ি পরবেন নওশাবা। তিনি বেছে নেবেন সেমি মসলিনের ডিজিটাল প্রিণ্ট শাড়ি। এই ফেব্রিককে আরামদায়ক মনে করেন নওশাবা।
দরদাম: ঋতি’র সবচেয়ে দামী শাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে অরগাঞ্জার অর্নামেন্টের শাড়ি। এই শাড়িতে ব্লক, স্টোন ওয়ার্ক, ম্যাচিং টার্সেল এবং পাড়ে লেস লাগানো হয়েছে। দাম পড়বে সর্বোচ্চ ২৯৫০ টাকা। সুতি শাড়ির দাম শুরু ২০০০ টাকা থেকে। হাতে কাজ করা সুতি শাড়িগুলোর দাম পরবে ২৮০০ টাকা। পাঞ্জাবীর দাম রাখা হয়েছে ১৬৫০ টাকা।
ঢাকা/লিপি