হিজবুত তাহরীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। আজ শুক্রবার এক বার্তায় এ কথা জানায় সংস্থাটি। বার্তায় বলা হয়, হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত যেকোনো সংগঠনের কার্যক্রম দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আওতায় হিযবুত তাহরীরের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ বা প্রচারের যেকোনো প্রচেষ্টা আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে সংগঠনটির যেকোনো কার্যক্রম বেআইনি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর যেকোনো প্রচারণামূলক কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে তা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে হিযবুত তাহরীর তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০), মাহমুদুল হাসান (২১)। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মুখপাত্র উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে সিটিটিসির একটি দল উত্তরা পশ্চিম থানাধীন সেক্টর-১১ ও সেক্টর-১২ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা বাইতুল মোকাররাম মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামক একটি সমাবেশ পালন সংক্রান্ত গোপন পরিকল্পনা করছিল।

জানা গেছে, আজ শুক্রবার হিযবুত তাহরীর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ‘মার্চ ফর খিলাফত’–এর ডাক দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধঘোষিত কোনো সংগঠন সভা, সমাবেশ ও যেকোনো উপায়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপর ধ ড এমপ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

মুজিব ভাস্কর্য নির্মাণ ও অনুষ্ঠা‌নের না‌মে হাজার কো‌টি টাকা গচ্ছা, অনুসন্ধানে দুদক

ক্ষমতায় থাকা‌কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে সারা‌ দে‌শে শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা গচ্ছা দি‌য়ে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। অভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধান শুরু ক‌রে‌ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোম‌ধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধা‌নে সাত সদস্যের ক‌মি‌টি গঠন করা হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হো‌সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তি‌নি ব‌লেন, শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামকে টিমের প্রধান করা হ‌য়ে‌ছে।

টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দুদক জানায়, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়— এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।

অভি‌যোগ আছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া, বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর‌্যাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করে। ফ‌লে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকার ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ