চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দেনার পরিমাণ চার শ কোটি টাকার বেশি। আর্থিক সংকটের কারণে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল আর আনুতোষিকের টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না। আটকে আছে ঠিকাদারদের উন্নয়নকাজের বিলও। এমন আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও একের পর এক গাড়ি কিনছে সংস্থাটি।

এখন পাঁচটি গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সংস্থার চার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মেয়রের কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের আনা-নেওয়ার জন্য এই গাড়িগুলো কেনা হবে। এতে ব্যয় হতে পারে প্রায় তিন কোটি টাকা।

গাড়ি কেনার অনুমতি চেয়ে গত ২১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও গাড়ি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গাড়ির দরদাম যাচাই করে রাখা হয়েছে বলে জানান সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা। গত বছর ২ কোটি ১৬ লাখ টাকায় চারটি গাড়ি কিনেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় সরকারি ব্যয় সংকোচনের জন্য সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ রাখতে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই পরিপত্র জারি করে সরকার। এর পরেও গাড়ি কিনতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম  প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনে বর্তমানে গাড়ির ব্যাপক সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিলের টাকায় গাড়ি কেনা হবে। তবে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। গাড়িগুলোর দাম বেশি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

তবে সিটি করপোরেশনের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় এভাবে গাড়ি কেনার বিষয়ে সমালোচনা করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, আর্থিক সংকটের মধ্যে গাড়ি কেনা একধরনের বিলাসিতা। নাগরিক সেবা যেখানে বিঘ্নিত হচ্ছে, সেখানে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সিটি করপোরেশনের সরে আসা উচিত।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ১৬টি জিপ গাড়ি, ৯টি কার ও ১৭টি ডাবল কেবিন পিকআপ রয়েছে।

তবে সিটি করপোরেশনের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় এভাবে গাড়ি কেনার বিষয়ে সমালোচনা করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, আর্থিক সংকটের মধ্যে গাড়ি কেনা একধরনের বিলাসিতা। নাগরিক সেবা যেখানে বিঘ্নিত হচ্ছে, সেখানে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সিটি করপোরেশনের সরে আসা উচিত।

তবু চলছে দামি গাড়ি কেনা

বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য মেয়রের কাছে প্রায় প্রতিদিনই চিঠি দেন ঠিকাদারেরা। ভবিষ্য তহবিল ও আনুতোষিকের পাওনা টাকা আদায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দেন অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের দেনা ৪১১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া টাকার অভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে বলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন খোদ সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। সরকারের বরাদ্দ দেওয়া পাঁচ কোটি টাকা ঠিক সময়ে না পেয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, নগরের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। কিন্তু ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা–ও পাননি। এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা টাকা নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের কাজে খরচ করতে হচ্ছে।

সমাজ ও নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই বলে এভাবে একের পর এক গাড়ি কিনছে সিটি করপোরেশন। এসব কেনাকাটায় স্বচ্ছতার প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। তাই আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী

আর্থিক সংকটের কারণে সিটি করপোরেশন স্বাভাবিক কাজ চালাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, তখন পাঁচটি গাড়ি কেনার অনুমতি চেয়ে গত ২১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডকে ৬টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। ছয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এর আগে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য দুটি গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি চারটি গাড়ি কেনা প্রয়োজন।

পাঁচটি গাড়ি কেনার বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে সিটি করপোরেশনের অঞ্চলগুলোতে কাজের পরিধি আগের তুলনায় বেড়েছে। চারটি অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ না থাকায় আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে ব্যাঘাত হচ্ছে। এ ছাড়া মেয়রের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে গণমাধ্যম কর্মীদের পরিবহনের জন্য করপোরেশনের জনসংযোগ শাখার অধীন একটি মাইক্রোবাস খুব প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিলের টাকায় এসব গাড়ি কেনা হবে।

এদিকে গাড়িগুলোর দাম কেমন হবে এবং এ জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে ৩ মার্চ পর্যন্ত চিঠির উত্তর দেয়নি সিটি করপোরেশন।

 সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের দুই কর্মকর্তা জানান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য যেসব গাড়ি কেনা হবে, সেগুলোর একেকটির দাম পড়বে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা। আর গণমাধ্যম কর্মীদের আনা-নেওয়ার জন্য যে গাড়ি কেনা হবে, তারও দাম অন্তত ৬০ লাখের বেশি। অর্থাৎ পাঁচটি গাড়ি কেনায় সিটি করপোরেশনের খরচ হবে প্রায় তিন কোটি টাকা।

এর আগে গত বছর ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প পরিচালকের জন্য ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় একটি; ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য দুটি এবং মেয়রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের জন্য ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। আর ২০২১ সালে সিটি করপোরেশনের মেয়রের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় একটি গাড়ি কেনা হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সমাজ ও নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই বলে এভাবে একের পর এক গাড়ি কিনছে সিটি করপোরেশন। এসব কেনাকাটায় স্বচ্ছতার প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। তাই আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় সরক র বর দ দ ন র জন তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফাইনালে টক্কর দুই প্রভাবশালীর

হয়তো সেভাবে ট্রফি জেতেনি বলে তাদের নাম ‘ফেভারিট’-এর তালিকায় সেভাবে আসে না। নকআউট পর্বের স্নায়ুর দুর্বলতার কারণেও লোকে তাদের সেভাবে হিসাবে রাখে না। তবে রেকর্ড বলছে, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইসিসির যে ১৪টি ইভেন্ট হয়েছে, তার আটটিতেই নকআউট পর্বে খেলেছে নিউজিল্যান্ড; ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পর আইসিসি টুর্নামেন্টে তারাই বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে দুবাইয়ের মরুতে তাই সেয়ানে সেয়ানেই টক্কর দিতে যাচ্ছে। 

ধারাবাহিকতা আর বর্তমান পারফরম্যান্সে দু’দলই বুক বরাবর। এটা ঠিক, ভারত দুবাইয়ের এক ভেন্যুতে খেলার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। এটাও ঠিক, গত দেড় দশকে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভেন্যুতে গিয়ে তারাই দাপট দেখিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সাদা বলের ফরম্যাটে ২০১১ সালের পর থেকে আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত মোট ৮৬টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয় পেয়েছে তারা ৭০ টিতে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৯টিতে। তালিকার তৃতীয়তে থাকা নিউজিল্যান্ড ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৫টিতে; যা প্রমাণ করে এই ফরম্যাটে কতটা ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এই তিনটি দল। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকাও ৭৭ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৪৫টিতে। আর ইংল্যান্ড ৮০ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৪১টিতে।

নকআউটের নিয়মিত দল ভারত-নিউজিল্যান্ড: গত ১৪ বছরের ১৪ আসরের ১২টিতে নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ভারত। চারবার সেমিফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছে কোহলিদের। রানার্সআপ হয়েছে তারা পাঁচবার আর চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য খুলেছে তিনবার। নিউজিল্যান্ডের রেকর্ডও এখানে একেবারে মন্দ না। নকআউট পর্বের আটবারের মধ্যে চারবার তারা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। তিনবার রানার্সআপ হয়েছে আর একবার ভারতকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। 

এই রেকর্ডে ভারতের পরই রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ধারাবাহিক সাফল্যের এই তালিকায় তৃতীয়তে রয়েছে ইংল্যান্ড। তারা ৭ বার নকআউট পর্বে গিয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দু’বার রানার্সআপ আর তিনবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। 

মজার ব্যাপার হলো, গত ১৪টি আইসিসি ইভেন্টে মাত্র ৬ বার নকআউট পর্বে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ফাইনালে গিয়ে কখনোই হারেনি অসিরা। সেমিফাইনাল থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে মাত্র দু’বার। অস্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান পাঁচবার করে নকআউট পর্বে উঠেছে। যার মধ্যে পাকিস্তান একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, একবার রানার্সআপ হয়েছে আর তিনবার সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। বরং তারা সেমির থেকে বিদায় নিয়েছে চারবার। এই তালিকায় তাদের নিয়েই করা হয়েছে, যারা কিনা একবার করে ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।

গ্রুপ পর্বের ধারাবাহিকতা: ভারত অপরাজিত থেকে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছে।  ২০১১ থেকে সাদা বলের ফরম্যাটে আইসিসির ইভেন্টে মোট ৩৮টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলেছে ভারত। যার মধ্যে তারা হেরেছে মাত্র ৩টিতে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডও ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ হারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ