Samakal:
2025-04-29@14:47:01 GMT

মুশি, এ মায়া প্রপঞ্চময়

Published: 7th, March 2025 GMT

মুশি, এ মায়া প্রপঞ্চময়

অতীত বলব? খারাপ লাগে, মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। পল্টনের এনএসসি ভবনের সংবাদ সম্মেলনের কক্ষ তখন হইচইয়ে তুঙ্গে। কাঠগড়ায় প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। খালেদ মাসুদ পাইলট তখন প্রতিষ্ঠিত তারকা। কেন পাইলটকে বাদ দিয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মুশফিকুর রহিম নামে সদ্য গোফ ওঠা কিশোরকে দলে নেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা দিতে দিতে এসি রুমের মধ্যেও ঘামছিলেন ফারুক আহমেদ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পরিচিত সাংবাদিকদের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘ভরসা রাখুন, এই ছেলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের লিটল মাস্টার হবে।’ তার পর তো এত বছর। ওয়ানডে থেকে তাঁরও যাত্রা ফুরাল। মুশফিকুর রহিম; নামটির সঙ্গে মিশে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি প্রজন্মের ইতিহাস। যেখানে সাক্ষী হয়ে আছে সাফল্য, দ্বন্দ্ব, চিড় খেয়ে যাওয়া সম্পর্ক; আরও কত না বলা কথা। মুশি জানেন যে তাঁর বিষয়ে দু-একটি নয়, আমরা সকলেই বেশ কিছু কথা জানি। এই যেমন তিনি ভালো ক্রিকেটার, প্রচণ্ড পরিশ্রমী, প্রবল শৃঙ্খলাপরায়ন, নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় দ্বীপের মতো এক ফালি রোদ্দুর। এর বাইরে একজন মুশফিক আছেন, যাকে আবিষ্কার করেছেন তিনি নিজেই। মানব মনের দ্বান্দ্বিক টানাপোড়েনে হিংসা, লালসা, চিন্তাকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। ‘সারাজীবন তো আর ক্রিকেটার থাকব না, তখন আমাকে আমার রেকর্ড নয়, ভালো ব্যবহার, ভালো আচরণের জন্যই হয়তো মনে রাখবেন।’ মিরপুরে কোনো এক ঘটনার পর বছর পাঁচেক আগে বলা মুশফিকের সেই কথাটি এখন ভীষণভাবে কানে বাজছে। আসলে মায়া আর দায়িত্ববোধ থেকে মুশফিক তাঁর ভালোবাসার ক্রিকেট জগৎকে একটা পবিত্র জায়গা হিসেবে গড়ে নিয়েছেন। যিনি কিনা ব্যবসা বোঝেন না, রাজনীতি বোঝেন না, কানকথায় সুর তুলতে জানেন না, ছলাকলার মন্ত্র জানেন না; তিনি জানেন শুধু ক্রিকেট খেলতে। এ কারণেই হয়তো পঞ্চপাণ্ডবের একজন হয়েও কোথায় গিয়ে যেন গ্ল্যামারাস ব্যাপারটি সেভাবে তাঁকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু মায়া যে বড় প্রপঞ্চময়, সে বাঁধন যে ছিড়তেই হয়। প্রত্যেকেরই বিকল্প আছে, দ্বিতীয়টি প্রথমটিকে সরিয়ে দেয় শুধু।

যেদিন থেকে তাঁকে চিনি বলে নিজে বিশ্বাস করেছি, সেদিন থেকেই বুঝেছি ক্রিকেট তাঁর কাছে প্রার্থনার মতো। তাঁর সতীর্থদের একজনের কাছে শুনেছি, হয়তো কোনো ম্যাচে ভালো রান করতে পারেননি, কেন পারেননি? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নির্ঘুম কাটিয়েছেন। পরের দিন সবার আগে মাঠে গিয়ে একা একা অনুশীলন করেছেন। অন্য কাউকে নয়, নিজেকে নিজের কাছে কখনোই ফাঁকি দেননি। পরিশ্রম দিয়ে সৃষ্টি করা যায়– এই বিশ্বাসে নিজেকে বারবার ভেঙে গড়ার চেষ্টা করেছেন। আর সে কারণেই দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে তাঁর নাম জাতীয় দলে। নির্বাচকদের প্রভাবিত করে, বিসিবি সভাপতিকে চাপ দিয়ে জাতীয় দলে কখনও জায়গা চেয়েছেন– এমন অভিযোগ কোনো দৈনিকের সাংবাদিক কিংবা ইউটিউবারও বের করতে পারেননি। বরং পরিবারের চেয়ে এই ক্রিকেটকেই বেশি সময় দিয়েছেন। অবশ্য একটা দুর্বলতা তাঁর ছিল, এখন আছে কিনা জানি না। তিনি প্রচণ্ড অভিমানী। যাকে ভালোবাসেন, ভালো ভাবেন সে যদি কানকথা বলে, তাহলে আহত হন। ২০১৩ সালে যেমন জিম্বাবুয়ে সফরে সিরিজ হারার পর হঠাৎই অধিনায়ত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। এর পর ২০১৭ সালে এসে টেস্ট অধিনায়কত্বও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখনও অভিমান পেয়ে বসেছিল তাঁকে। তাঁর মনে হয়েছিল প্রাপ্য সম্মান তিনি পাচ্ছেন না। ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর পরও সংবাদ মাধ্যমে অধিনায়কত্বের প্রশংসা করা হয়নি। বরং সাবেক এক অধিনায়কের পরামর্শে টেস্ট জিতেছে এমন একটা ন্যারেটিভ প্রচারিত হয়। বিসিবির অন্দরমহল থেকেও তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে কানকথা শুরু হয়। অথচ অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে ড্রেসিংরুমে সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য নিজের অভ্যাসের বাইরেও অনেক কিছু করেছেন! এমনকি ড্রেসিংরুমের যে গ্রুপিংয়ের কথা এতদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও মুশফিক গা বাঁচাতে পেরেছিলেন। শুধু কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রথম দফায় প্রতিবাদী মুখ ছিলেন। ক্রিকেটের বাইরে অনেকেই যেখানে বিজ্ঞাপনের বাজারের জন্য নিজেদের তৈরি করেছিলেন, সেখানেও বেশি সময় দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। আত্মাভিমান তাঁর এতটাই প্রবল যে, একসময় সিদ্ধান্ত নেন আর কখনোই আইপিএলে নাম পাঠাবেন না। আর কখনোই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবেন না। জানি না, কী কারণে বুধবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি অবসরের ঘোষণা দিলেন। তবে আন্দাজ করতে পারি, হয়তো কারও কথা বা ফোনে তাঁর সেই আত্মাভিমানে আঘাত লেগেছিল। তবে বিশ্বাস করতে চাই, আবেগ নয়, বাস্তবতা স্বীকার করেই তিনি সরে গিয়েছেন। কারণ তিনি কখনোই নিজেকে ফাঁকি দিতে পারবেন না। তাই হয়তো ওয়ানডেতে আর তাঁকে দেখা যাবে না জাতীয় দলের জার্সিতে। অপেক্ষায় থাকব, আরও কয়েকটি বছর তাঁর সেই রংচটা টেস্ট ক্যাপ পরে মাঠে নামবেন। তিনি যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথিকৃত, তেমনি পথিকও তো বটে। ধন্যবাদ মুশি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল কর ছ ন কখন ই

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাকিল (২৮) নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে আটটার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা এক তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন ইয়াছিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনও (২৫) আহত হয়েছেন। তাঁকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর এলাকাবাসী ধাওয়া করে হামলাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ধরে ফেলেন। পরে তাদের পিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের আহত অবস্থায় আটক করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াছিনের চাচাতো ভাই আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, রাত আনুমানিক আটটার দিকে তিনি, ইয়াছিনসহ কয়েকজন গঙ্গাবর বাজারের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় একদল সন্ত্রাসী সেখানে আসে। তারা মো. লাবিব নামের এক তরুণকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ইয়াছিন এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীদের একজন ইয়াছিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একই সময় কাছে থাকা ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক এগিয়ে গেলে তাঁর ওপরও হামলা চলায় দুর্বৃত্তরা।

আবদুল হাকিম জানান, ঘটনার পরপরই তাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়াছিনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া একই ঘটনায় আহত মোজাম্মেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা কাছে থেকে ইয়াছিনের বুকে ও পেটে গুলি করেছে।

হাসপাতালে উপস্থিত গঙ্গাবর এলাকার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী খালিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইয়াছিন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি আরেকজনকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত ইয়াছিন পেশায় থাই অ্যালুমিনিয়ামের মিস্ত্রি ছিলেন বলে জানান খালিদ।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া আটটার দিকে গুলিতে নিহত ইয়াছিন আরাফাত নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন লোক। তাঁর বুকে গুলির দাগ দেখা গেছে। লাশ মর্গে আছে। একই ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লা আল ফারুক দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একটি ছেলেকে তুলে নিতে এলে বাধা দেওয়ায় ওই যুবককে গুলি করা হয়। ওই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন দুর্বৃত্তদের তিনজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত ব্যক্তিদের একজনের অবস্থা গুরুতর।

পুলিশ সুপার জানান, গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি দুর্বৃত্তরা ঘটনার পর পাশের একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। পুকুর সেচ দিয়ে সেটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘শুনেছি আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল সেই বাদী থানায় আটক আছে’
  • ঈদগাঁওয়ে বজ্রপাতে লবণ শ্রমিকের মৃত্যু
  • এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হলেন আবদুস সালাম
  • ৩৬ বছর পর মায়ের খুনি বাবার মুখোমুখি ছেলে
  • রাষ্ট্র ও পুলিশ নয়, আমাকে হয়রানি করিয়েছে কাছের বন্ধুরা: জয়
  • পদ্মায় মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা, একজন গ্রেপ্তার
  • গাজীপুরে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো ১ জনের মৃত্যু
  • নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে থানা ঘেরাও
  • বজ্রপাতে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু
  • সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী