মুসলিমদের সিয়াম-সাধনার পবিত্র মাস রমজান চলছে। সুস্থ ও সক্ষম সব মুসলিমের জন্য এই সময়ে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ব্যস্ত থাকায় রোজা রাখছেন না ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি।

এ নিয়ে ভারতের মুসলিম সমাজে তোলপাড় চলছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মাওলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি বারেইলভি তো সরাসরি দাবি তুলেছেন, রমজান মাসে রোজা না রেখে বড় অপরাধ করছেন শামি। তাঁকে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাব দিতে হবে। তবে পরিবার, কোচসহ ভারতের মুসলিম সমাজেরই আরেকটি অংশ ৩৪ বছর বয়সী পেসারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শামি যে রোজা রাখছেন না, তা জানাজানি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে। দুবাইয়ে গত মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে বাউন্ডারির কাছে ফিল্ডিং করার সময় জুস পান করছিলেন তিনি। এরপরই একটি মহল তাঁর সমালোচনা শুরু করে।

পরে সেই বিতর্কে ঘি ঢালেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মাওলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। রোজা না রেখে শামি অপরাধ করেছে। তার এটা করা উচিত হয়নি। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, সে একজন অপরাধী। এ জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

শাহাবউদ্দিন রাজভি আরও বলেন, ‘কোনো সুস্থ নর-নারী (রমজান মাসে) রোজা না রাখলে ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অপরাধী হয়ে যাবেন। মোহাম্মদ শামি ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। সে ম্যাচ চলার সময় পানি বা কোমল পানীয় জাতীয় কিছু পান করেছে। সবাই তা দেখেছে। যেহেতু সে খেলেছে, এর মানে সে সুস্থ। এরপরও রোজা না রাখলে তা মানুষকে ভুল বার্তা দেয়।’

তবে শাহাবউদ্দিন রাজভির এই কথার বিরোধিতা করেছেন অল ইন্ডিয়া ব্যক্তিগত মুসলিম আইন বোর্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য মাওলানা খালিদ রশিদ ফারাঙ্গি মাহলি। তাঁর দাবি, শামি যেহেতু সফরে আছেন, তাই রোজা নাও রাখতে পারেন।

শামির বাড়ি ভারতের উত্তর প্রদেশের আমরোহায়। সেখান থেকে দুবাইয়ের দূরত্ব ২৩৫০ কিলোমিটারের মতো। মাওলানা খালিদ রশিদ জানিয়েছেন, ইসলামে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি তাঁর অবস্থান (বসবাসের স্থান) থেকে দূরে কোথাও যাত্রা করলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।

এএনআইকে তিনি বলেছেন, ‘রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে রমজান মাসে। যদিও আল্লাহ কোরআনে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন যে যদি কোনো ব্যক্তি সফরে যান বা অসুস্থ হন, তাহলে তিনি রোজা নাও পালন করতে পারেন। মোহাম্মদ শামি সফরে গেছে। তাই সে রোজা পালনে ছাড় পেয়েছে। কেউ তার দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা উচিত নয়।’

শিয়াদের ধর্মগুরু মাওলানা মির্জা ইয়াসুব আব্বাসও শাহাবউদ্দিন রাজভির কথার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মোহাম্মদ শামিকে লক্ষ্য করে বারেইলভির একজন মাওলানার দেওয়া বক্তব্য কেবল সস্তা প্রচারের জন্য। যেখানে বাধ্যবাধকতা আছে, সেখানে কোনো ধর্ম নেই। যেখানে ধর্ম আছে, সেখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রত্যেক মুসলিম জানেন যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে রোজা রাখতে হবে। যদি কেউ রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে এটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। এর সঙ্গে সম্প্রদায় বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা রমজানে রোজা রাখেন না। তিনি তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলেননি কেন? রোজা ও রমজানকে বিতর্কে জড়ানো ভুল।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ৩ উইকেট নিয়েছেন শামি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ শ ম র জন য অপর ধ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সেহরিতে রান্নার চুলা জ্বালাতেই বিস্ফোরণ, স্বামী-স্ত্রীসহ দগ্ধ ৬

চাঁদপুরে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হয়েছে। রোববার ভোরে শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় একটি বাসায় সেহরির খাবার রান্নার সময় এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের মধ্যে চারজনকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। অপর দুজন চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

দগ্ধ ছয়জনের মধ্যে আব্দুর রহমান সরদার (৬৫), তাঁর স্ত্রী শাহানুর বেগম (৫৫), পুত্রবধূ খাদিজা আক্তার (৩২) ও ছোট ছেলে মঈন (১৮) নামে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠান চিকিৎসক। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আব্দুর রহমানের বড় ছেলে ইমাম হোসেন সরদার (৩২) ও মেজ ছেলে মিরাজের স্ত্রী দিবা আক্তার (২১)।

গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারো করছেন পরিবারের স্বজনরা। আব্দুর রহমান সরদারের ভাগিনা শাহ আলম জানান, পরিবারের লোকজন ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য উঠে। এ সময় রান্নাঘরে চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে রান্না ঘরসহ কয়েকটি কক্ষের আসবাবপত্র ও লেপ-তোষক পুড়ে যায়। প্রতিবেশীদের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, ঢাকায় যাদের পাঠানো হয়েছে, তাদের শরীরে কারও ৫০ ভাগ ও কারও ৬০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনের শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ