সিরিয়ায় নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল আসাদ সরকারের অনুগতদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়ায় রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত বিমানঘাঁটির কাছে বৃহস্পতিবার আসাদ অনুগতদের সঙ্গে সিরিয়ান বাহিনী তীব্র এ লড়াইয়ে ৭০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ১৬ জন সরকারি নিরাপত্তা কর্মী, ২৮ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে সিরিয়াভিত্তিক স্টেপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সরকার সমর্থিত বাহিনী আসাদপন্থী ‌‘প্রায় ৭০’ জনকে হত্যা করেছে। সেখানকার জাবলেহ ও এর আশেপাশের এলাকায় ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে- তারা স্বাধীনভাবে হতাহতের তথ্য যাচাই করতে পারেনি। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ৭০ জনের বেশি নিহতের তথ্য জানিয়েছে। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সংস্থাটি লিখেছে, ‘সিরীয় উপকূলে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অতর্কিত হামলার ঘটনায় ৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন কয়েকজন আহত ও বন্দী হয়েছেন।’

লাতাকিয়া এমন একটি এলাকা যা দেশটির আলাউইত সংখ্যালঘুদের প্রাণকেন্দ্র এবং আসাদ পরিবারের একটি শক্ত ঘাঁটি।  উপকূলীয় এ অঞ্চলে সংঘর্ষ এখনও চলছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থী সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এটি সবচেয়ে বড় সহিংস হামলার একটি। 

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, সিরিয়ার সামরিক বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে জাবলেহ শহরের দিকে এগুচ্ছে। এদিকে সিরিয়ার হোমস ও আলেপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচাই না করা ভিডিওতে হোমসের আবাসিক রাস্তায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হাজার হাজার মানুষ  অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার কেউ কেউ খুনি ও অপরাধীদের রক্ষায় মৃত্যুর জন্য নিজেকে ধাবিত করছে। পছন্দ তাদের- হয় অস্ত্র জমা দেবে নতুবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এই অঞ্চলের নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলাউইত কর্মীরা বলছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন সহিংসতা এবং আক্রমণের শিকার হয়েছে, বিশেষ করে হোমস ও লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকায় এর প্রভাব বেশি পড়েছে। আহমেদ আল-শারার দেশটির দক্ষিণেও প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছেন, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ড্রুজ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ সরক র র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ফাইনালে টক্কর দুই প্রভাবশালীর

হয়তো সেভাবে ট্রফি জেতেনি বলে তাদের নাম ‘ফেভারিট’-এর তালিকায় সেভাবে আসে না। নকআউট পর্বের স্নায়ুর দুর্বলতার কারণেও লোকে তাদের সেভাবে হিসাবে রাখে না। তবে রেকর্ড বলছে, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইসিসির যে ১৪টি ইভেন্ট হয়েছে, তার আটটিতেই নকআউট পর্বে খেলেছে নিউজিল্যান্ড; ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পর আইসিসি টুর্নামেন্টে তারাই বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে দুবাইয়ের মরুতে তাই সেয়ানে সেয়ানেই টক্কর দিতে যাচ্ছে। 

ধারাবাহিকতা আর বর্তমান পারফরম্যান্সে দু’দলই বুক বরাবর। এটা ঠিক, ভারত দুবাইয়ের এক ভেন্যুতে খেলার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। এটাও ঠিক, গত দেড় দশকে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভেন্যুতে গিয়ে তারাই দাপট দেখিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সাদা বলের ফরম্যাটে ২০১১ সালের পর থেকে আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত মোট ৮৬টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয় পেয়েছে তারা ৭০ টিতে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৯টিতে। তালিকার তৃতীয়তে থাকা নিউজিল্যান্ড ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৫টিতে; যা প্রমাণ করে এই ফরম্যাটে কতটা ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এই তিনটি দল। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকাও ৭৭ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৪৫টিতে। আর ইংল্যান্ড ৮০ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৪১টিতে।

নকআউটের নিয়মিত দল ভারত-নিউজিল্যান্ড: গত ১৪ বছরের ১৪ আসরের ১২টিতে নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ভারত। চারবার সেমিফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছে কোহলিদের। রানার্সআপ হয়েছে তারা পাঁচবার আর চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য খুলেছে তিনবার। নিউজিল্যান্ডের রেকর্ডও এখানে একেবারে মন্দ না। নকআউট পর্বের আটবারের মধ্যে চারবার তারা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। তিনবার রানার্সআপ হয়েছে আর একবার ভারতকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। 

এই রেকর্ডে ভারতের পরই রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ধারাবাহিক সাফল্যের এই তালিকায় তৃতীয়তে রয়েছে ইংল্যান্ড। তারা ৭ বার নকআউট পর্বে গিয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দু’বার রানার্সআপ আর তিনবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। 

মজার ব্যাপার হলো, গত ১৪টি আইসিসি ইভেন্টে মাত্র ৬ বার নকআউট পর্বে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ফাইনালে গিয়ে কখনোই হারেনি অসিরা। সেমিফাইনাল থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে মাত্র দু’বার। অস্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান পাঁচবার করে নকআউট পর্বে উঠেছে। যার মধ্যে পাকিস্তান একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, একবার রানার্সআপ হয়েছে আর তিনবার সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। বরং তারা সেমির থেকে বিদায় নিয়েছে চারবার। এই তালিকায় তাদের নিয়েই করা হয়েছে, যারা কিনা একবার করে ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।

গ্রুপ পর্বের ধারাবাহিকতা: ভারত অপরাজিত থেকে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছে।  ২০১১ থেকে সাদা বলের ফরম্যাটে আইসিসির ইভেন্টে মোট ৩৮টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলেছে ভারত। যার মধ্যে তারা হেরেছে মাত্র ৩টিতে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডও ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ হারেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ