বিশ্বের এক–চতুর্থাংশ দেশে নারী অধিকার দুর্বল হয়েছে: ইউএন উইমেনের প্রতিবেদন
Published: 7th, March 2025 GMT
গত বছর বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দেশে নারীর অধিকার দুর্বল হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন উইমেনের (ইউএন উইমেন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাতে নারীর অধিকার দুর্বল হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে গণতন্ত্র পিছিয়ে যাওয়ার মতো নানা কারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার সঙ্গে লিঙ্গসমতায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অধিকারবিরোধীরা নারী অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দীর্ঘদিনের ঐকমত্যকে সক্রিয়ভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
১৯৯৫ সালের বিশ্ব নারী সম্মেলনের নথির উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ দেশ জানিয়েছে, লিঙ্গসমতার ওপর প্রতিক্রিয়া বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে ১৯৯৫ সালের পর থেকে নারী প্রতিনিধি দ্বিগুণ রয়েছে। তবে এখনো সংসদ সদস্যদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ।
২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। তবে ২০০ কোটি নারী ও মেয়েশিশু এখনো এমন জায়গায় বাস করে, যাদের এ ধরনের সুরক্ষা নেই।
লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানের বৈষম্য কয়েক দশক ধরে স্থবির হয়ে আছে। ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ নারীর বেতনভুক্ত কর্মসংস্থান রয়েছে, যেখানে একই জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ পুরুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারি, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোকে লিঙ্গসমতার জন্য নতুন সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউএন উইমেন উপস্থাপিত তথ্যে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই শিশু বা তরুণী। ২০২৩ সালে ৬১ কোটি ২০ লাখ নারী সশস্ত্র সংঘাতের ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) মধ্যে বাস করতেন, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার ১২টি দেশে, কমপক্ষে ৫৩ শতাংশ নারী অনলাইনে এক বা একাধিক ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে অব্যাহত রয়েছে। জীবদ্দশায় প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন অথবা তাঁর সঙ্গীর বাইরের কারও দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হন।
প্রতিবেদনে লিঙ্গবৈষম্য মোকাবিলায় একটি বহুমুখী রোডম্যাপ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে; যাতে এআইয়ের মতো নতুন প্রযুক্তিতে ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য ব্যবস্থা, দারিদ্র্য মোকাবিলায় বিনিয়োগ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা
বারবার রিট করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনায় জড়িত থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিকদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। এ–সংক্রান্ত রুল (ডিসচার্জ) খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্যমতে, ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের প্রশাসনিক উদ্যোগ চ্যালেঞ্জ করে পার্বত্য জেলার ইটভাটার মালিকদের পক্ষে ২০২৩ সালে রিট করা হয়। আদালত রুল দিয়ে ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। অন্যদিকে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে হাইকোর্ট লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গেলে পার্বত্য জেলার বেশ কয়েকজন ইটভাটার মালিক হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেখান। এ অবস্থায় মালিকদের করা রিটে পক্ষভুক্ত হয় এইচআরপিবি।
এইচআরপিবির তথ্যমতে, চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট পার্বত্য জেলায় অবস্থিত ইটভাটার মালিকদের রিট খারিজ করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিকেরা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২৩ সালের ৪ জুন আপিল বিভাগ ইটভাটার মালিকদের আবেদন নিষ্পত্তি করে ইটভাটার জন্য স্থান নির্বাচন বিষয়ে ইটভাটাগুলোর মালিকদের আবেদন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে এ–সংক্রান্ত কমিটিকে নির্দেশ দেন। তবে তখন কোনো স্থগিতাদেশ বা স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়া হয়নি বলে জানায় এইচআরপিবি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইটভাটার কার্যক্রম চালাতে মালিকপক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি রিট করা হয়। শুনানি নিয়ে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সর্বশেষ গত মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়।
এ বিষয়টি সম্পর্কে জানার পর তা আদালতকে অবহিত করেন বলে জানান হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এ অবস্থায় মালিকপক্ষের করা এ–সংক্রান্ত রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানি নিয়ে রুল খারিজ করে রায় দেওয়া হয়। আদালতে এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, রুল খারিজ করে দিয়ে স্থিতাবস্থার আদেশ প্রত্যাহার করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারীদের (মালিকপক্ষ) সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অর্থাৎ বারবার রিট করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনায় জড়িত থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিকদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুকূলে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।