দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল আবুল হাশেম ও মোমেনা বেগমের সংসার। অসুখে মারা যান ছোট ছেলে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে মোমিনুল ইসলামকে নিয়েই চলছিল সংসার। নাতি-নাতনিদের নিয়ে চলে যাচ্ছিল সংসার।

সংসার সাজানোর স্যানিটারি পণ্য কিনতে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে গিয়েছিলেন মোমিনুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী নদী বেগম। কিন্তু বিস্ফোরণে দু'জনই মারা যান। তার পরিবার বলছে ‘সংসার সাজাতে গিয়ে সংসারটাই শেষ হয়ে গেছে।’

গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে এ বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ। এতে ২৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে মোমিনুল-নদী দম্পতিও রয়েছেন।

মোমিনুলের চাচা জয়নাল আবেদীন বলেন, “বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে রোগে মারা গেছেন। বড় ছেলেকে আঁকড়েই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সেই ছেলেটাও মারা গেলো। তার স্ত্রীও মারা গেছে। তাদের দুইটা সন্তান আছে। তারা তাদের দাদা-দাদীর কাছেই বড় হচ্ছে। তাদের নিয়ে বেঁচে আছেন ভাই ও ভাবী। দুইটা ছেলেই মারা গেছেন। এতে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।”

তিনি বলেন, “সংসার সাজানোর জন্য বাসার বেসিন, কল, বেসিনের সামনের গ্লাস কিনতে সেদিন তারা গিয়েছিলেন। সংসার সাজাতে গিয়ে তো সংসারটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মাকে হারালো। আমার ভাই তার সন্তানকে হারালো।”

সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, “বিকেল ৩ টার দিকে চকবাজারের ইসলামবাগের নিজেদের বাসা থেকে তারা বের হয়। সেখানে আমার ভাগ্নের একটা দোকান আছে। তার সাথে পরামর্শ করে জিনিসপত্র কিনতে যায়। এরপর থেকে আর তাদের কোনো খবর নাই। আছরের নামাজের পর সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্দেহ ঢুকে যায়। পরে মেডিকেলে লোক পাঠাই। সেখানে ওদের লাশ পাই।”

তিনি বলেন, “আছরের নামাজের পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কতজনকে দেখি দৌড়াদৌড়ি করতেছে জীবন বাঁচাতে। ধুলোয় কিছু বোঝা যায় না। সামনে দিয়েই ভাতিজা ও তার বউয়ের লাশ নিয়ে গেছে। একটু টেরও পেলাম না। বিস্ফোরণে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে।”

জয়নাল আবেদীন বলেন, “দুই বছর হয়ে গেলো। কত জন তাদের স্বজন হারালো আমাদের মতো। বিচার পেলাম না। দোষীদের বিচার চাই আমরা।”

২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেলে বংশালের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে ৯ মার্চ মামলা দায়ের করেন বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর পলাশ সাহা। থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশের পর মামলার তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

ঢাকা/মামুন/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের এক–চতুর্থাংশ দেশে নারী অধিকার দুর্বল হয়েছে: ইউএন উইমেনের প্রতিবেদন

গত বছর বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দেশে নারীর অধিকার দুর্বল হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন উইমেনের (ইউএন উইমেন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাতে নারীর অধিকার দুর্বল হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে গণতন্ত্র পিছিয়ে যাওয়ার মতো নানা কারণের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার সঙ্গে লিঙ্গসমতায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অধিকারবিরোধীরা নারী অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দীর্ঘদিনের ঐকমত্যকে সক্রিয়ভাবে ক্ষুণ্ন করছে।

১৯৯৫ সালের বিশ্ব নারী সম্মেলনের নথির উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ দেশ জানিয়েছে, লিঙ্গসমতার ওপর প্রতিক্রিয়া বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে ১৯৯৫ সালের পর থেকে নারী প্রতিনিধি দ্বিগুণ রয়েছে। তবে এখনো সংসদ সদস্যদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ।

২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। তবে ২০০ কোটি নারী ও মেয়েশিশু এখনো এমন জায়গায় বাস করে, যাদের এ ধরনের সুরক্ষা নেই।

লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানের বৈষম্য কয়েক দশক ধরে স্থবির হয়ে আছে। ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ নারীর বেতনভুক্ত কর্মসংস্থান রয়েছে, যেখানে একই জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ পুরুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।

প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারি, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোকে লিঙ্গসমতার জন্য নতুন সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউএন উইমেন উপস্থাপিত তথ্যে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই শিশু বা তরুণী। ২০২৩ সালে ৬১ কোটি ২০ লাখ নারী সশস্ত্র সংঘাতের ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) মধ্যে বাস করতেন, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।

ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার ১২টি দেশে, কমপক্ষে ৫৩ শতাংশ নারী অনলাইনে এক বা একাধিক ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে অব্যাহত রয়েছে। জীবদ্দশায় প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন অথবা তাঁর সঙ্গীর বাইরের কারও দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হন।

প্রতিবেদনে লিঙ্গবৈষম্য মোকাবিলায় একটি বহুমুখী রোডম্যাপ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে; যাতে এআইয়ের মতো নতুন প্রযুক্তিতে ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য ব্যবস্থা, দারিদ্র্য মোকাবিলায় বিনিয়োগ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেঁচো সার তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ালেন মুসলেমা
  • আইসিসি টুর্নামেন্টে ‘রাজা’ ভারত, ‘রানি’ নিউজিল্যান্ড
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্সে ভর্তি, আবেদনের সময় বৃদ্ধি, ক্লাস ২২ এপ্রিল
  • এক ভাইয়ের দাফন শেষ না হতেই আসে আরেক জনের মৃত্যুর খবর
  • চেলসির ২১ হাজার কোটি টাকার স্কোয়াডই ইউরোপে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল
  • বিশ্বের এক–চতুর্থাংশ দেশে নারী অধিকার দুর্বল হয়েছে: ইউএন উইমেনের প্রতিবেদন
  • পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫৪ ইটভাটার মালিককে চার লাখ টাকা করে জরিমানা