পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা বাকারা। এ সুরার শেষ দুটি আয়াতের রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কোরআনের কোন সুরা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, সুরা ইখলাস। এরপর ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করলেন, কোরআনের কোন আয়াতটি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, আয়াতুল কুরসি।

এরপর লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি কোন আয়াতটি পছন্দ করেন, যাতে আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি (সা.

) বললেন, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত।

কখন অবতীর্ণ হলো

সহিহ্ মুসলিম শরিফ এ দুটি আয়াতের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ‘এ দুটি আয়াত রাসুল (সা.)-কে মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে আসমানে দান করা হয়েছে।’

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)

হে আল্লাহর নবী, আপনি কোন আয়াতটি পছন্দ করেন, যাতে আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি (সা.) বললেন, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত।

আয়াত দুটো উচ্চারণ

আমানার রাসুলু বিমা উনঝিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আতানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা-লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত-রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখতানা-রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা- রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা তাকাতা লানা বিহি-ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা- আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৮৫-২৮৬)

এ দুটি আয়াতের অর্থ হলো, ‘তার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে রাসুল তার ওপর বিশ্বাস করে আর বিশ্বাসীরাও। তারা সকলেই বিশ্বাস করে আল্লাহয়, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবগুলোয় ও তাঁর রাসুলদের ওপর (এবং তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনি ও মানি। হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা তোমার নিকট ক্ষমা চাই, আর তোমার কাছেই আমরা ফিরে যাব।’ আল্লাহ্ কাউকেই তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বভার দেন না। ভালো ও মন্দ যে যা উপার্জন করবে তা তারই। (তোমরা প্রার্থনা করো,) হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে অপরাধী কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে যে ভারী দায়িত্ব দিয়েছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব দিয়ো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এমন ভার আমাদের ওপর দিয়ো না যা বইবার শক্তি আমাদের নেই। আর আমাদের পাপ মোচন করো, আর আমাদেরকে ক্ষমা করো, আর আমাদের ওপর দয়া করো, তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তুমি আমাদের জয়যুক্ত করো।’ (সূত্র: কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০২০)

সুরা বাকারার ২৮৫-২৮৬ আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে জান্নাতের পথ সুগম করবে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)

আরও ফজিলত

সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি নিয়ে হাদিসে আরও অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের ফজিলত প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে এ দুটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য এটাই যথেষ্ট।’

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে, স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণ লাভের দোয়া।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩)

সুরা বাকারার সার কথাআমানার রাসুলু বিমা উনঝিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আতানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা-লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত-রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখতানা-রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা- রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা তাকাতা লানা বিহি-ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা- আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৮৫-২৮৬)সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য

আবু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দুটি তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাতে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট।’ (বুখারি: ৪০০৮)

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমার মতে যার সামান্য বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না।’

এ আয়াত দুটো নিয়মিত পড়লে বিপদ-আপদ দূরে থাকে, জান্নাতের পথও সুগম হয়।

‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র প র র আম দ র আয় ত দ ট ক রআন র দ র ওপর আয় ত র বল ছ ন আল ল হ দ ন কর এ আয় ত বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাতে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা গ্রেপ্তার, দুপুরে জামিনে মুক্ত

সিলেট জেলা আটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আজ মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে মুক্তিও পেয়েছেন তিনি। 

এদিকে জাকারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর পরই সিলেটজুড়ে বিক্ষোভ করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা। তার মুক্তির দাবিতে সকাল থেকেই অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করেন তারা। তবে জামিনে মুক্তির পর নগরীতে স্বাভাবিক হয় অটোরিকশা চলাচল।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জাকারিয়া আহমেদের নামে ৫টি মামলা রয়েছে। রাতে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সকালে এসএমপির কোতোয়ালি থানা থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। দুপুরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাকারিয়া আহমদের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে এসএমপির বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি থাকার সুবাদে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ