আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এদিন ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) একটি ভাষণে নড়ে ওঠে পাকিস্তানি সামরিক শাসকের একনায়কত্বের ভিত। অনিবার্য হয়ে উঠে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির বহু প্রতীক্ষিত ও কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিব যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি। ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেদিন তাঁর এ ঘোষণার পর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
৭ মার্চ বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। দরাজ কণ্ঠে তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি.
তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাই, আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’
বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও এটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল। এই ভাষণে ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে ভাষণটি ছিল লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পথনির্দেশ।
এই ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা’।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়য় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এসব ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান। এর মধ্যে গাজা নগরীতে নিহত হন ১১ জন। গতকাল বুধবার ইসরায়েলের হামলায় আরও ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে।
গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে প্রথম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের হামলায় ১ হাজার ৫২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৮৩৪ জনা।
এদিকে আরও ৮০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাঁরা সবাই গাজা উপত্যকার বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রগুলো বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের কিসুফিম ক্রসিংয়ে এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ক্রসিংটি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ কারণে তাদের দের আল–বালাহ শহরের আল–আকসা মার্টারস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বন্দিদের মুক্তি দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাসপাতালটির কর্মীরা। কারণ এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আগে তাদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। সাধারণত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা সম্পৃক্ত থাকে।
বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর তাদের স্বজনেরা হাসপাতালে ছুটি আসেন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে গিয়ে দীর্ঘদিন পর বাবার সঙ্গে দেখা হয় ফারাহ নামের এক তরুণীর।
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব মিসর-কাতারের৩০ মার্চ ২০২৫ফারাহ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ভেবেছিলেন তাঁর বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানতে পারেননি। তিনি ইসরায়েলের কুখ্যাত সাদি তেইমান কারাগারে ছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের হিসাব অনুসারে এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাল্টা হিসেবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকা অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, এসব হামলায় এরইমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলায় গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০, বেশির ভাগ নারী ও শিশু১৮ মার্চ ২০২৫