রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে সরলেন ছাত্রীরা
Published: 7th, March 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে আসন বণ্টনের নীতিমালা পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে এসে অবস্থান নেন তাঁরা। পরে রাত ১১টার দিকে উপাচার্য দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘আবাসিকতার অনিয়ম, মানি না মানব না’, ‘সিনিয়র রেখে জুনিয়র, মানি না মানব না’, ‘সিট বৈষম্যর অনিয়ম, মানি না, মানব না’, ‘জবাব চাই জবাব চাই, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসিকতার বর্তমান নীতিমালায় বৈষম্য আছে। এই নীতিমালার আওতায় সিনিয়র শিক্ষার্থীর আগে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা হলে আসন পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে গণরুমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলের আসন বণ্টন, পানি, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সংকট তুলে ধরে আন্দোলন শুরু করেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আবাসিকতার নীতিমালা পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে রোকেয়া, খালেদা জিয়াসহ কয়েকটি হলের শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আলোচনা চালিয়ে গেলেও সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। পরে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন। পরে রাত ১১টার দিকে উপাচার্য নীতিমালা পরিবর্তনের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে হলে ফিরে যান।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ১০ ঘণ্টা আগেএ ব্যাপারে রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নিশা আক্তার বলেন, ‘আগের নিয়ম অনুযায়ী হলের গণরুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সিনিয়রদের একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে হলের কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী সব সেশনের শিক্ষার্থীদের ফলাফল তুলনা করা হয়। এতে অনেক সিনিয়রের আগে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা কক্ষ পেয়ে যাচ্ছেন। এটা এক প্রকার বৈষম্য। আমরা এর সমাধান চাই।’
আরও পড়ুনঅন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের প্রতিবাদে ট্যুরিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের অবস্থান, হাতাহাতি১৭ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলের সিট বণ্টনের নীতিমালা শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই করা হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেশনভিত্তিতে সিট বণ্টনের আশ্বাস দিয়েছি। এটি মেধার ভিত্তিতেই হবে, তবে বছরের জায়গায় সেশন হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বসব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দায়িত্ব ছাড়ার আগে পছন্দের ব্যক্তিদের বদলি-পদায়নে কুয়েট উপাচার্য
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল রাতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিনি বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। এদিকে এর আগ পর্যন্ত উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালনে অনড় অবস্থানে ছিলেন অধ্যাপক মাছুদ। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থান বুঝতে পেরে নিজের পছন্দের ১১ কর্মচারী ও ৪ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দপ্তরে বদলি ও পদায়ন করেন।
এছাড়া ফজলুল হক হলের প্রভোস্টকে বাদ দিয়ে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ, কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেলের প্রধানকে বাদ দিয়ে নতুন প্রধান নিয়োগ এবং মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ২৩ এপ্রিল তারিখে এসব অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
তবে কুয়েটের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নিজ বাসভবনে অফিস করেন উপাচার্য। মূলত ওই সময়ই এসব নথিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। তার নির্দেশেই ২৩ এপ্রিল তারিখে অফিস আদেশ জারি করা হয়। গত শুক্রবার রাতে এসব আদেশ সম্পর্কে জানতে পারেন সবাই।
কুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঞার স্বাক্ষর করা অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, সিনিয়র নিরাপত্তা গার্ড (গ্রেড-১৪) মো. আবুল হোসেনকে বিইসিএম বিভাগে, আতাউর রহমানকে মেডিকেল সেন্টারে, মনির হোসেনকে ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের দপ্তরে, বেল্লাল হোসেনকে আর্কিটেকচার বিভাগে, অফিস সহায়ক বিপুল কান্তি ঘোষকে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে, মো. আবদুল্লাহকে এমইর ডিনের দপ্তরে, ভিসির ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট কামাল হোসেনকে এমই বিভাগে, গার্ডেনার নূর ইসলামকে অমর একুশে হলে, অফিস সহায়ক আবদুল্লাহ আল ওমর ফারুক শুভকে এমই বিভাগে, মো. হালিমকে পিআর বিভাগে, হাসিবুল মিয়াকে সিএসই বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানকে এমইআরসি বিভাগে, জনসংযোগ বিভাগের সেকশন অফিসার শাহেদুজ্জামান শেখকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে, সেকশন অফিসার আজিজুর রহমানকে এমই বিভাগে, সেখ হাফিজুর রহমানকে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে বদলি করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, মো. মনিরুজ্জামানকে বিধি বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি দিয়ে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে পদায়ন করা হয়। পরে তার নেতৃত্বেই গত ৮ মাসে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৪২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কাজে সহযোগিতা করেন আতাউর রহমান মোড়ল ও তার ভাই ইমাদাদুল হক মোড়ল।
একই তারিখে পৃথক আরেক অফিস আদেশে ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ড. এ বি এম আওলাম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই হলে প্রভোস্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানকে।
কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আরাফাত হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই পদে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২৪ এপ্রিল থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেক আদেশে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এ বিষয়ে কুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঞার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।