একের পর এক মব সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এর মোকাবিলায় সরকারকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা কারও কারও বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। কয়েক দিন আগে ঢাকায় দুই ইরানি নাগরিক মব সহিংসতার শিকার হন। এর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের দুই কর্মী গণপিটুনিতে মারা যান। গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীও হেনস্তার শিকার হন।
তবে এসব ছাড়িয়ে যে ঘটনা জনমনে মারাত্মক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তা হলো গুলশানের ৮১ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির চতুর্থ তলার বাসায় মধ্যরাতে একদল লোকের তাণ্ডব, ভাঙচুর ও ডাকাতি। তাণ্ডবের আগে ওই ব্যক্তিরা গুজব ছড়িয়ে দেন যে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের মালিকানাধীন এই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁরা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে এসএমএসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের আগাম খবর দিয়ে বাসায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিস্ময়কর হলো, বাসাটি সাবেক এমপি তানভীর ইমামের নয়, তাঁর সাবেক স্ত্রীর, যঁার সঙ্গে ১২ বছর আগে তাঁর সম্পর্কের ইতি ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য হলো, বাসার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক শাকিল আহমেদ অবৈধ অস্ত্র ও টাকা থাকার গুজব ছড়িয়ে লোকজন জড়ো করেছেন। পুলিশ শাকিল, তাঁর ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ২৫ থেকে ৩০ ব্যক্তি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। অন্যরা কোথায় গেলেন?
কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানে যদি দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকদের ডেকে মধ্যরাতে এ রকম ঘটনা ঘটাতে পারে, তাহলে নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়? এতে প্রমাণিত হয় যে কোনো ব্যক্তি মব তৈরি করে যেকোনো বাসায় হামলা চালাতে পারে। ঘটনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ চেষ্টা মাত্র। তাদের ভাষ্য, গুলশানের ওই বাসায় অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়েন।
কোনো ব্যক্তি চাইলেই কি কোনো বাড়িতে ‘তল্লাশি’ চালাতে পারেন? কোথাও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। দেশে আইনের শাসন থাকলে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা এ রকম ‘তল্লাশি’ চালাতে পারত না। কোনো বাসায় অবৈধ অস্ত্র কিংবা অর্থ লুকানো থাকলে তাঁরা থানা-পুলিশকে খবর দেবেন। সমাজবিরোধী কিংবা আইন অমান্যকারী কোনো ব্যক্তি থাকলেও সেটা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের নয়।
গত বছরের আগস্টে যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা কিংবা মব সহিংসতার কারণ হিসেবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে দোহাই দেওয়া হতো। সাত মাস পরও সেই অজুহাত কোনোভাবে চলে না; যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত। গুলশান-বারিধারার মতো কূটনৈতিক এলাকায় যদি মানুষ এ রকম মব তৈরি করে মধ্যরাতে বাড়ি ভাঙচুর করতে পারে, অন্যান্য স্থানে কী ঘটতে পারে, অনুমান করা কঠিন নয়।
সরকার কত বাহিনী নিয়ে কত প্রকার অভিযান চালাচ্ছে, সেই হিসাব জনগণ জানতে চায় না। তারা চায় ঘরের ভেতরে ও বাইরে জানমালের নিরাপত্তা। ঘটনার পেছনে না দৌড়ে সরকারের উচিত শক্ত হাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। মব সহিংসতার নামে দেশব্যাপী যে অরাজকতা চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এ অরাজকতা বন্ধ করতেই হবে
একের পর এক মব সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এর মোকাবিলায় সরকারকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা কারও কারও বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। কয়েক দিন আগে ঢাকায় দুই ইরানি নাগরিক মব সহিংসতার শিকার হন। এর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের দুই কর্মী গণপিটুনিতে মারা যান। গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীও হেনস্তার শিকার হন।
তবে এসব ছাড়িয়ে যে ঘটনা জনমনে মারাত্মক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তা হলো গুলশানের ৮১ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির চতুর্থ তলার বাসায় মধ্যরাতে একদল লোকের তাণ্ডব, ভাঙচুর ও ডাকাতি। তাণ্ডবের আগে ওই ব্যক্তিরা গুজব ছড়িয়ে দেন যে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের মালিকানাধীন এই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁরা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে এসএমএসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের আগাম খবর দিয়ে বাসায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিস্ময়কর হলো, বাসাটি সাবেক এমপি তানভীর ইমামের নয়, তাঁর সাবেক স্ত্রীর, যঁার সঙ্গে ১২ বছর আগে তাঁর সম্পর্কের ইতি ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য হলো, বাসার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক শাকিল আহমেদ অবৈধ অস্ত্র ও টাকা থাকার গুজব ছড়িয়ে লোকজন জড়ো করেছেন। পুলিশ শাকিল, তাঁর ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ২৫ থেকে ৩০ ব্যক্তি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। অন্যরা কোথায় গেলেন?
কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানে যদি দুর্বৃত্তরা সাংবাদিকদের ডেকে মধ্যরাতে এ রকম ঘটনা ঘটাতে পারে, তাহলে নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়? এতে প্রমাণিত হয় যে কোনো ব্যক্তি মব তৈরি করে যেকোনো বাসায় হামলা চালাতে পারে। ঘটনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ চেষ্টা মাত্র। তাদের ভাষ্য, গুলশানের ওই বাসায় অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়েন।
কোনো ব্যক্তি চাইলেই কি কোনো বাড়িতে ‘তল্লাশি’ চালাতে পারেন? কোথাও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। দেশে আইনের শাসন থাকলে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা এ রকম ‘তল্লাশি’ চালাতে পারত না। কোনো বাসায় অবৈধ অস্ত্র কিংবা অর্থ লুকানো থাকলে তাঁরা থানা-পুলিশকে খবর দেবেন। সমাজবিরোধী কিংবা আইন অমান্যকারী কোনো ব্যক্তি থাকলেও সেটা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের নয়।
গত বছরের আগস্টে যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা কিংবা মব সহিংসতার কারণ হিসেবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে দোহাই দেওয়া হতো। সাত মাস পরও সেই অজুহাত কোনোভাবে চলে না; যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাসদস্যরাও নিয়োজিত। গুলশান-বারিধারার মতো কূটনৈতিক এলাকায় যদি মানুষ এ রকম মব তৈরি করে মধ্যরাতে বাড়ি ভাঙচুর করতে পারে, অন্যান্য স্থানে কী ঘটতে পারে, অনুমান করা কঠিন নয়।
সরকার কত বাহিনী নিয়ে কত প্রকার অভিযান চালাচ্ছে, সেই হিসাব জনগণ জানতে চায় না। তারা চায় ঘরের ভেতরে ও বাইরে জানমালের নিরাপত্তা। ঘটনার পেছনে না দৌড়ে সরকারের উচিত শক্ত হাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। মব সহিংসতার নামে দেশব্যাপী যে অরাজকতা চলছে, তা বন্ধ করতেই হবে।