দেশের প্রকৃতি-পরিবেশের সর্বনাশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নানা অভিঘাতের অন্যতম কারণ নদ-নদীগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে বৈধ-অবৈধভাবে অবাধে বালু তোলার ফলে আমাদের নদীগুলোর সম্পদ তো লুট হয়েছেই, প্রাণপ্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যও বিপন্ন হয়েছে। নদীভাঙনে অসংখ্য জনপদ বিলীন হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। অবাধে বালু তোলার ফলে সোমেশ্বরী নদীরও এমন করুণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। আশার কথা হচ্ছে, প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপের পর সেই সোমেশ্বরী পুনরায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।  

সোমেশ্বরীর খ্যাতি ছিল তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বিরল প্রজাতির মহাশোল মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জন্য। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ে জন্ম সোমেশ্বরীর। নিরিবিলি পাহাড়ি প্রকৃতির কোলজুড়ে এককালে ছুটে যেত স্বচ্ছ নদীটি। সেই সোমেশ্বরী নিয়ে ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রধান খবর ছিল—লুট হয়ে যাচ্ছে সোমেশ্বরী নদী।

প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবি আমাদের হতবাক করে দেয়। অপরূপ সৌন্দর্যের একটি নদীর এমন ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে, তা কল্পনাতীত। প্রতিদিন হাজার হাজার ড্রেজার ও ট্রাক বালু তোলা হচ্ছে নদী থেকে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপটে সেই নদী অস্তিত্ব হারিয়ে অসংখ্য বালুমহালে পরিণত হয়। নদীতে থাকা দুর্লভ মহাশোলসহ বহু প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটে। জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে পেশার পরিবর্তন ঘটান। পর্যটকেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

দুই বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো সেই সোমেশ্বরী নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ শিরোনামে—সেরে উঠছে সোমেশ্বরীর ‘ক্ষত’। সঙ্গে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। নদীটির এখন কোথাও অথই পানি, কোথাও বুক বা কোমরসমান পানি, আবার কোথাও হাঁটু বা এর কম পানি। কিছু স্থানে পানি না থাকলেও আগের মতো ক্ষতচিহ্ন নেই। নদীটি দেখে মনে হলো ক্ষত সেরে উঠে কিছুটা নিরাময়ের দিকে যাচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছা, যথাযথ সিদ্ধান্ত ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের কারণে সোমেশ্বরী তার পুরোনো রূপ ফিরে পাচ্ছে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, আদালতের নির্দেশে সোমেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকে মাঝেমধ্যে বালু উত্তোলন করে থাকে। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়। প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

জেলা-উপজেলা প্রশাসন নদী রক্ষার বড় অভিভাবক। অনেক নদী সুরক্ষায় আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না। নেত্রকোনা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আমরা অভিবাদন জানাই। তারা নদীটি রক্ষায় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, সোমেশ্বরীর সুরক্ষায় ভবিষ্যতেও তারা একইভাবে তৎপর থাকবে। কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নদীটির বুকে ক্ষত বসাতে না পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম শ বর র

এছাড়াও পড়ুন:

স্পিন শক্তি স্পিন বল

ভারত কি একটু দেরিতে নিজের বোলিং শক্তি টের পেল? এমন মনে হওয়ার কারণ, শেষ গ্রুপ ম্যাচে এসে তারা চার স্পিনার নামায়। এর পর সেমিতেও একই কম্বিনেশনে খেলেছে। ফাইনালেও যে তারা চার স্পিনার নিয়েই নামছে, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। দুবাইয়ের মন্থর পিচে নিউজিল্যান্ডও স্পিননির্ভর বোলিং আক্রমণ নিয়েই আজ নামতে যাচ্ছে। আর কিউইদের স্পিন আক্রমণও মন্দ নয়। স্পিনই ফাইনালের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।

কিউইদের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবেই বরুণ চক্রবর্তীকে সুযোগ দেয় ভারত। ৪২ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেন মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা বরুণ। এ রহস্য স্পিনার এখন ভারতের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। তাঁর অপ্রচলিত গ্রিপ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ ডেলিভারির কারণে তাঁকে খেলা বেশ কঠিন। ক্যারম বল, গুগলি, ফ্লিপারের মতো ডেলিভারির পাশাপাশি উইকেটের দুই দিকেই বেশ গতির সঙ্গে বল ঘোরাতে পারেন তিনি। তাঁর অন্তর্ভুক্তি ভারতের বোলিং আক্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। বোলিং অ্যাকশনে কোনো রকম পরিবর্তন না এনেই উইকেটের দু’দিকে বল ঘোরাতে পারেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর আরেকটি বড় অস্ত্র হলো ফ্লাইট। এ দু’জনই উইকেট টেকার। নিখুঁত লাইন-লেন্থে বিরামহীন উইকেট টু উইকেট বল করার ক্ষেত্রে অক্ষর প্যাটেল হলেন বিশেষজ্ঞ। এ জন্য তাঁকে পাওয়ার প্লে বিশেষজ্ঞও বলা হয়। রান দেওয়ার বেলায়ও বেশ কৃপণ তিনি। ওভারপ্রতি ৪.৫১ রান দিয়ে ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী অক্ষর। রবীন্দ্র জাদেজা হলেন ট্র্যাডিশনাল। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রয়োজনের সময় উইকেট বের করায় সিদ্ধহস্ত তিনি।

গত চার ম্যাচে ভারতীয় স্পিনাররা মোট ২১ উইকেট নিয়েছেন। কিউই স্পিনাররাও কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই। চার ম্যাচে কিউই স্পিনারদের শিকার ১৭ উইকেট। মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বে কিউই স্পিন আক্রমণে রয়েছেন মিচেল ব্রেসওয়েল, গ্লেন ফিলিপস ও রাচিন রবীন্দ্র। এর মধ্যে বাঁহাতি স্যান্টনার উইকেটের দুই দিকে বল ঘোরাতে পারেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, বিরামহীনভাবে নিখুঁত লেন্থে বল ফেলতে পারেন। যে কারণে স্যান্টনারের বলে রান তোলা বেশ কষ্টকর। অফস্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েলের খুব একটা বৈচিত্র্য নেই, উইকেটের দু’দিকে বল ঘোরাতেও পারেন না তিনি। তবে নিখুঁত লাইন-লেন্থ ও গতির তারতম্যের কারণে উইকেট শিকারে বেশ সিদ্ধহস্ত তিনি। উইকেটে যদি সামান্য বাউন্স থাকে, তাহলে তাঁকে খেলা বেশ চ্যালেঞ্জিং। 

কিন্তু দুবাইয়ের পিচে বাউন্স পাবেন কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। টপঅর্ডার ব্যাটার রাচিনের বাঁহাতি স্পিনও বেশ কাজে আসছে কিউইদের। স্পিনে ভারতের চেয়ে তারা যেটুকু পিছিয়ে, সেটা কাভার করে নিচ্ছে পেস দিয়ে। কিউই দুই পেসার ম্যাট হেনরি ও উইল ও’রুকি দারুণ বোলিং করছেন। তবে তাদের জন্য চিন্তার কারণ হচ্ছে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হেনরি চোটের কারণে ফাইনালে অনিশ্চিত। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ