সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ: যে কারণে ২ বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত
Published: 7th, March 2025 GMT
হঠাৎ বিস্ফোরণ। কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। ধুলায় ধূসরিত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যে যেভাবে পেরেছে ছুটেছেন। এরই মধ্যে ঝরে যায় কয়েকটি তাজা প্রাণ।
২০২৩ সালের ৭ মার্চ বিকেলে ঢাকার বংশালের সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাণ হারান ২৬ জন। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে ৯ মার্চ মামলা করেন বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর পলাশ সাহা। দুই বছর পার হলেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে বলতে পারছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তিতাস কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে তদন্ত সংস্থা। একটা ফাইল চেয়ে আবেদন করেছে তারা। সেই ফাইলের কারণেই আটকে আছে তদন্ত। স্বজন হারানোরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার অপেক্ষায় আছেন।
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৮
নাইক্ষ্যংছড়িতে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি আহত
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রথমে তদন্ত শুরু করে বংশাল থানা পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলার তদন্তে রয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিল। তবে, ওই দিন সিটিটিসি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালত আগামী ৮ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ২০ দফা সময় নেওয়া হয়েছে।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এস এম রাইসুল ইসলাম বলেন, “এই মুহূর্তে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। বাড়ির মালিক ভবনের গ্যাসের লাইনকে কমার্শিয়াল থেকে ডোমেস্টিক লাইনে রূপান্তরের জন্য তিতাসের কাছে আবেদন করেন। এরপর তা ডোমেস্টিক লাইনে রূপান্তর করা হয়। তখন দেড় ইঞ্চি গ্যাসের লাইনের রাইজার খুলে আবার ১.
তিনি আরো বলেন, “এত বড় একটা ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিস্ফোরণটা গ্যাসের লাইন থেকেই হয়েছে। এখানে গ্যাসটা কিভাবে জমা হল? তিতাসের ফাইল পেলে বা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারলে অথবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে তদন্তটা আরো একটু বেগমান হত। মামলার তদন্ত অনেকটা এগিয়ে নিয়ে এসেছি। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিতাস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে তদন্তটা শেষ করতে পারব।”
এক প্রশ্নের জবাবে এস এম রাইসুল ইসলাম বলেন, “কোনো ধরনের নাশকতার আলামত পাইনি। বিস্ফোরণটা গ্যাস থেকে হয়েছে। এর দায় বিল্ডিং মালিকের, বেজমেন্টে অবস্থিত বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে দোকান কর্তৃপক্ষের। তিতাস কর্তৃপক্ষেরও প্রত্যক্ষ নজরদারি বা গাফিলতি আছে।”
তিনি বলেন, “এখানে বিল্ডিং কোড ভায়োলেশন করা হয়েছে। কোনো বিল্ডিংয়ের বেসমেন্টে এয়ার কন্ডিশন রুম করা যাই না। যেখানে ব্ল্যাস্ট হয়েছে, দেখা গেল এয়ার কন্ডিশন রুম ছিল। বাড়িওয়ালার মারাত্মক অবহেলা। তার অপরাধ এটা। পুরো আন্ডারগ্রাউন্ডে গ্যাসটা জমে যাই। ফলে বিস্ফোরণ ঘটেছে। যে ধরণের বিস্ফোরণ ঘটেছে, যাতে দুইটা ছাদ উড়ে গেছে।”
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, “রাজউক ওই ভবন নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ভবন ভেঙ্গে ফেলার কোনো সুপারিশ ছিল না। তবে, প্রতিবেদন অনুসারে ভবনের মালিকপক্ষ কিছু কমপ্লায়েন্স করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা সেটা পূরণ করেছিল কিনা জানা নেই। তারা যেন দ্রুত রেক্টোফিট করে রাজউককে আমি তাগাদা দিব। রেক্টোফিট না করলে ভবন ১০০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে।”
২০২৩ সালের ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত
সাততলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সাত মিনিটের মাথায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়। সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, ওই ঘটনায় ২৬ জন মারা যান।
ঘটনার পর ওই দিনই গ্রেপ্তার করা হয় ভবন মালিক ওয়াহিদুর রহমান, তার ভাই মতিউর রহমান ও মোতালেব মিন্টুকে। তাদের রিমান্ডেও নেওয়া হয়। তবে বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
আসামি ওয়াহিদুর রহমান ও মোতালেবের আইনজীবী আব্দুল আওয়াল বলেন, “তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ভবনের মালিক। তারা শুধু দুইজন না আরো ১০ জন আছেন ভবন মালিক। সেখানে একটা বিস্ফোরণ ঘটছে। কেন ঘটছে, তদন্তের পর তা বেরিয়ে আসবে।”
এটি নাশকতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেন, “তাদের সম্মানহানি, হেয় প্রতিপন্ন করতে কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনায় তারা কিন্তু পুরোটাই সাফারার।”
আইনজীবী আব্দুল আওয়াল বলেন, “ঘটনার সময় তারা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। সঠিক তদন্তে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবে এমনটাই আশা করছি।”
এদিকে, ওই ঘটনায় নিহতের স্বজনরা দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চান। বিস্ফোরণে নিহত মোমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নদী বেগমের স্বজন জয়নাল আবেদীন বলেন, “দুই বছর হয়ে গেল। কতজন তাদের স্বজন হারাল আমাদের মতো। এখনো বিচার পেলাম না। দোষীদের বিচার চাই আমরা।”
ঢাকা/মামুন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ য স র ল ইন ল ইসল ম ভবন র ঘটন য় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ফাইনালে টক্কর দুই প্রভাবশালীর
হয়তো সেভাবে ট্রফি জেতেনি বলে তাদের নাম ‘ফেভারিট’-এর তালিকায় সেভাবে আসে না। নকআউট পর্বের স্নায়ুর দুর্বলতার কারণেও লোকে তাদের সেভাবে হিসাবে রাখে না। তবে রেকর্ড বলছে, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আইসিসির যে ১৪টি ইভেন্ট হয়েছে, তার আটটিতেই নকআউট পর্বে খেলেছে নিউজিল্যান্ড; ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পর আইসিসি টুর্নামেন্টে তারাই বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে দুবাইয়ের মরুতে তাই সেয়ানে সেয়ানেই টক্কর দিতে যাচ্ছে।
ধারাবাহিকতা আর বর্তমান পারফরম্যান্সে দু’দলই বুক বরাবর। এটা ঠিক, ভারত দুবাইয়ের এক ভেন্যুতে খেলার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। এটাও ঠিক, গত দেড় দশকে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভেন্যুতে গিয়ে তারাই দাপট দেখিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সাদা বলের ফরম্যাটে ২০১১ সালের পর থেকে আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত মোট ৮৬টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয় পেয়েছে তারা ৭০ টিতে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৯টিতে। তালিকার তৃতীয়তে থাকা নিউজিল্যান্ড ৭৭ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৪৫টিতে; যা প্রমাণ করে এই ফরম্যাটে কতটা ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এই তিনটি দল। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকাও ৭৭ ম্যাচ খেলে জিতেছে ৪৫টিতে। আর ইংল্যান্ড ৮০ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে ৪১টিতে।
নকআউটের নিয়মিত দল ভারত-নিউজিল্যান্ড: গত ১৪ বছরের ১৪ আসরের ১২টিতে নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে ভারত। চারবার সেমিফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছে কোহলিদের। রানার্সআপ হয়েছে তারা পাঁচবার আর চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য খুলেছে তিনবার। নিউজিল্যান্ডের রেকর্ডও এখানে একেবারে মন্দ না। নকআউট পর্বের আটবারের মধ্যে চারবার তারা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। তিনবার রানার্সআপ হয়েছে আর একবার ভারতকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে।
এই রেকর্ডে ভারতের পরই রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ধারাবাহিক সাফল্যের এই তালিকায় তৃতীয়তে রয়েছে ইংল্যান্ড। তারা ৭ বার নকআউট পর্বে গিয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দু’বার রানার্সআপ আর তিনবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, গত ১৪টি আইসিসি ইভেন্টে মাত্র ৬ বার নকআউট পর্বে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ফাইনালে গিয়ে কখনোই হারেনি অসিরা। সেমিফাইনাল থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে মাত্র দু’বার। অস্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান পাঁচবার করে নকআউট পর্বে উঠেছে। যার মধ্যে পাকিস্তান একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, একবার রানার্সআপ হয়েছে আর তিনবার সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। বরং তারা সেমির থেকে বিদায় নিয়েছে চারবার। এই তালিকায় তাদের নিয়েই করা হয়েছে, যারা কিনা একবার করে ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।
গ্রুপ পর্বের ধারাবাহিকতা: ভারত অপরাজিত থেকে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছে। ২০১১ থেকে সাদা বলের ফরম্যাটে আইসিসির ইভেন্টে মোট ৩৮টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলেছে ভারত। যার মধ্যে তারা হেরেছে মাত্র ৩টিতে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডও ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ হারেনি।