মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন বজরা শাহী জামে মসজিদ
Published: 7th, March 2025 GMT
প্রায় পৌনে তিন শ বছর আগের কথা। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের নির্দেশে বজরায় (নৌযান) করে রাজ্য পরিদর্শনে বের হন জমিদার আমান উল্যাহ। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় যেখানে রাজ্য পরিদর্শন শেষ হবে সেখানে যেন একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পরিদর্শন শেষে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বসতি স্থাপন করেন আমান উল্যাহ। সেখানে একটি দিঘি খননের পর এর পাড়ে দিল্লির শাহী মসজিদের আদলে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি।
জমিদার আমান উল্যা বজরায় এসে যেখানে বসতি স্থাপন করেন এলাকাটির নাম হয়ে উঠে বজরা। মসজিদটিও পরে খ্যাতি পায় বজরা শাহী মসজিদ নামে। বর্তমানে মসজিদটি হয়ে উঠেছে জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মসজিদটি দেখতে সোনাইমুড়ীর বজরায় যান দূর-দূরান্তর মানুষ।
সরকারি গেজেটে প্রত্নসম্পদ হিসেবে নাম রয়েছে মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন নোয়াখালী বজরা শাহী মসজিদের। তবে সরকারিভাবে এই মসজিদের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ তেমন নেই। যার কারণে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি। দর্শনার্থী হিসেবে আসা মানুষজনের দান-অনুদানেই মসজিদটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ চারজনের বেতন-ভাতাও দেওয়া হয় সেই দানের টাকা থেকে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে মসজিদের বর্তমান ইমাম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ একর জায়গা জুড়ে উঁচু পাড়যুক্ত একটি দিঘি খনন করেন জমিদার আমান উল্যাহ । ওই দিঘির কিছু মাটি দিয়ে পশ্চিম পাশে বসতি স্থাপন করা হয়। ওই জমিদার বাড়িটি বর্তমানে সরকারের ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জমিদার আমান উল্যাহ্ তাঁর বসতবাড়ির পূর্ব পাশে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দিয়ে গম্বুজগুলো সুশোভিত করা হয়।
মসজিদটির চার পাশ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু মসজিদটি। মাটি থেকে ২০ ফুট উঁচুতে ভিত তৈরি করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি ধনুকাকৃতির দরজা। প্রবেশপথের ওপরে রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেয়ালে তিনটি কারুকার্য খচিত মিনার রয়েছে। শিলালিপি ও দেয়ালে খোদায় করা রয়েছে ফুল, লতাপাতাসহ বাহারী নকশা।
সরেজমিনে কথা হয় পাশের বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা দর্শনার্থী রেজোয়ান হোসেনের (৪৫) সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অনেক আগে সহপাঠীদের সঙ্গে একবার এই মসজিদটি দেখতে এসেছিলেন। মসজিদটির নির্মাণশৈলী দেখে অভিভূত হন। আবারও মসজিদটিতে আসার ইচ্ছে ছিল। অবশেষে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। রেজোয়ান বলেন, মসজিদটির নির্মাণশৈলী হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। মসজিদের দক্ষিণ পাশে প্রবেশপথের দুই দিকে কবরস্থান, যা পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
মসজিদের বর্তমান ইমাম (৭ম ইমাম) মাওলানা ইমাম হাছান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে মক্কা শরীফের বাসিন্দা মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকী ঐতিহাসিক এই মসজিদের প্রথম ইমাম নিয়োজিত হন। পর্যায়ক্রমে তাঁর ছয় বংশধর ইতিমধ্যে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনিও তাঁদের বংশধর হিসেবে মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর সরকারি গেজেটে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে মসজিদটির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় জানিয়ে ইমাম হাসান ছিদ্দিকী বলেন, ‘পুরাকীর্তি হিসেবে গেজেটভুক্ত করেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্ব শেষ। তখন নামমাত্র কিছু উন্নয়নকাজ করা হলেও এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে বেশ কিছু সিরামিকে শেওলা জমে যায়, পরে সেগুলো খসে পড়ছে।’
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা সত্তরোর্ধ মো.
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় মসজিদের দক্ষিণের গম্বুজ চুঁইয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে বলে জানান মুসল্লিরা। মুসল্লিদের অজু ও গোসলের জন্য খনন করা বিশাল দিঘিটিও প্রায় ভরাট হয়ে বিলে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারেন সে লক্ষ্যে ঢাকা-নোয়াখালী সড়কের পাশ ঘেঁষে বজরা শাহী মসজিদে আসার যে সড়কটি রয়েছে তা আরও প্রশস্ত করা প্রয়োজন। মসজিদটি সংরক্ষণেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ র গম ব জ প রব শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানি সক্ষমতা পর্যালোচনায় কমিটি
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। এর প্রভাবে চামড়া ও চামড়াজত পণ্য, পাটজাত পণ্য, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য এবং ওষুধ খাতের রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে কি ধরনের বিকল্প সুবিধা দেওয়া যায় তা পর্যালোচনায় সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও সমন্বয়) ১১ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি । একই বিভাগের মনিটরিং সেলের প্রথম অতিরিক্ত মহাপরিচালক এর সদস্য সচিব। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে মনিটরিং সেলের মহাপরিচালকসহ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ট্যারিফ কমিশন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং এফবিসিসিআইয়ের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন।
কমিটির কার্যপরিধিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৬ সালের পর রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধ হয়ে গেলে এসব খাতের রপ্তানি সক্ষমতাবাড়াতে কি কি বাধা দেখা দিতে পারে তা নির্ধারণের পাশাপাশি কি উপায়ে তাদের প্রতিযোগিতা ধরে রাখা যায়, তার উপায় বের করতে হবে। এক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা ব্যতীত অন্যান্য কি ধরনের আর্থিক ও অ–আর্থিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে তারও সুপারিশ করবে কমটি।