রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন
Published: 7th, March 2025 GMT
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইন আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার আশা করছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি। লাইনটি চালু করার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে রূপপুরে। জুলাইয়ে শুরু হতে পারে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে পারে আগামী বছর।
সংশ্লিষ্টব্যক্তিরা বলছেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সময় দফায় দফায় পেছাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এখন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এটি পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেওয়া হয়েছিল। তবে এটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে ২০২৭ সালে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে চুল্লিপাত্রের ভেতর ‘ডামি’ জ্বালানি প্রবেশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পুরোটাই এখন নির্ভর করছে সঞ্চালন লাইনের ওপর। সঞ্চালন লাইন তৈরি হওয়ার দুই মাস পর পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। জ্বালানি প্রবেশে এক মাস সময় লাগে। এরপর কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। একই সঙ্গে চলবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছর। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু হলেই কেবল বিনিয়োগের বিপরীতে আয় আসা শুরু হতো। সেটিও দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এতে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।অধ্যাপক মো.শফিকুল ইসলাম, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। এ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৭ করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জটিলতা, যন্ত্রপাতি দেশে আনা, বিশেষজ্ঞদের আসায় জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ডলারসংকটে বিল পরিশোধে দেরি, সব মিলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। এতে কাজ পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে দুই মাস সময় লাগবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করতে। এরপর এক মাস ধরে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় এখন নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জটিলতা, যন্ত্রপাতি দেশে আনা, বিশেষজ্ঞদের আসায় জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ডলারসংকটে বিল পরিশোধে দেরি, সব মিলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনদেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সংস্থা পাওয়া গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি রূপপুর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ করছে। মোট ৬টি গ্রিড লাইন নির্মাণ করছে তারা। রূপপুর-বাঘাবাড়ি ৬৫ কিলোমিটার, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ও আমিনবাজার-কালিয়াকৈর ৫১ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৪৪ কিলোমিটার, রূপপুর-ঢাকা ১৪৭ কিলোমিটার ও রূপপুর-ধামরাই ১৪৫ কিলোমিটার লাইনের স্থলভাগের কাজও শেষ। তবে এই লাইন তিনটি পদ্মা ও যমুনা নদী অতিক্রম করছে। এর মধ্যে পদ্মা নদী অতিক্রম করার দুই কিলোমিটার লাইন মার্চের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড। এর আগে তারা গত ডিসেম্বরের মধ্যে এটি শেষ করার কথা বলেছিল। এটি শেষ হলে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।
পাওয়ার গ্রিড পিএলসি বলছে, দুই নদী অতিক্রমের মোট তিনটি লাইনের প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। রূপপুরের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যমুনা নদী অতিক্রমে ৭ কিলোমিটার করে দুটি লাইন করা হচ্ছে। এখন পূর্ণ উদ্যমে কাজ চললেও বৃহৎ নদী অতিক্রম করতে প্রায়ই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে যমুনা নদী অতিক্রম করার দুটি সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হতে পারে বলে দাবি করেছে পাওয়ার গ্রিড পিএলসি।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে দুই মাস সময় লাগবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করতে। এরপর এক মাস ধরে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানদুই বছর বাড়তি সময় লাগছেদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুরে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র।
২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হিসেবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন রূপপুরে মজুত আছে। চুক্তি অনুসারে প্রকল্প খরচের মধ্যেই প্রথম তিন বছর রাশিয়া থেকে আসবে এ জ্বালানি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪ ঘণ্টা সমান হারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চুল্লিতে জ্বালানি স্থাপনের পর অন্তত ছয় মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে কম পাওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই প্রতিটি ধাপে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হলেই কেবল পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যাবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুরোদমে উৎপাদনে আসতে আগামী বছর লেগে যেতে পারে।
অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বছর পেছানোয় প্রকল্পের খরচ না বাড়লেও প্রায় ১ হাজার ৮০০ জনবলের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য অনেক খরচ তো বাড়ছেই। বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু হলেই কেবল বিনিয়োগের বিপরীতে আয় আসা শুরু হতো। সেটিও দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এতে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
চুল্লিতে জ্বালানি স্থাপনের পর অন্তত ছয় মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে কম পাওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই প্রতিটি ধাপে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হলেই কেবল পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যাবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম ইউন ট থ ক প রকল প র ম য় দ ব দ য ৎ সরবর হ দ ব ত য় ইউন ট ম স সময় ল গ ২০২৩ স ল র র প রকল প ড স ম বর শ ষ কর র র প রথম দ ই বছর ইউন ট র শ ষ হয় প এলস বছর প
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধে কতটা সুবিধা পাবে রাশিয়া
ইউক্রেন ও রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে কোনো পক্ষই এখন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে না। সেখানকার যুদ্ধে একরকম অচলাবস্থা চলছে। রাশিয়ার সেনারা যেন অগ্রসর হতে না পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। কখনো কখনো দুই পক্ষের লড়াই সামান্য কয়েক গজ গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধারণা করা হয়, তাঁর এ সিদ্ধান্তের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। এতে হয় যুদ্ধ থেমে যাবে অথবা রাশিয়া চূড়ান্ত সুবিধা পাবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অতিরিক্ত মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ইউরোপের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রীষ্মকালজুড়ে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাকারী দেশের সহায়তা হারালে তাতে রাশিয়া লাভবান হবে। দেশটি তখন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোতে সহজেই হামলা চালাতে পারবে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট সেথ জি জোন্স এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুদ্ধাস্ত্র ও বাহিনীগুলোকে নিয়ে সমস্যার মধ্যে থাকার পরও ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার যেকোনো ধরনের অগ্রগতি ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়ভাবে ভালো কাজ করেছে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, জেলেনস্কি যদি হোয়াইট হাউসের দাবির কাছে নতিস্বীকার করেন, তবে তাঁর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যে বিরতি টানা হয়েছে, কম সময়ে সে পরিস্থিতির অবসান হতে পারে।
গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি ‘আলোচনার টেবিলে আসতে’ প্রস্তুত আছেন। মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণ জেলেনস্কির সে বক্তব্যের উল্লেখ করে ট্রাম্পও তাঁর প্রশংসা করেছেন।
আপাতত ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বা রুশ সেনাবাহিনীর ওপর তুলনামূলকভাবে কম চাপ প্রয়োগ করছে তারা। ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।
শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যায্য মধ্যস্থতাকারী বলে বিবেচনা করলে ইউরোপের সমর্থন নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে পারে ইউক্রেন।
তিন বছর আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করলেও রাশিয়া এখন পর্যন্ত আকাশপথে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌথ অভিযানে রাশিয়া তাদের সামরিক দলগুলোকে কার্যকরভাবে একত্র করতে পারেনি এবং এত বেশি প্রাণহানি হয়েছে যে পুতিন চাপ কমাতে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা মোতায়েন করেছেন।
তবে এর সবকিছুই ঘটেছে রাশিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার আগেই।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব সম্পর্কে ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা আলেক্সান্দার ভিন্দমান বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে সেনাদের মনোবল ক্ষুণ্ন হবে—রুশ পক্ষ শক্তিশালী হবে এবং ইউক্রেনীয়রা হতাশ হবে।’
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে ইউক্রেনে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালানের ওপর প্রভাব পড়ছে।
পেন্টাগনের মজুত থেকে ইউক্রেনের জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউক্রেন সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ইনিশিয়েটিভ নামের উদ্যোগের আওতায় সহায়তা কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। এ উদ্যোগের আওতায় কিয়েভকে সরাসরি মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো থেকে নতুন সামরিক হার্ডওয়্যার কিনতে তহবিল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার রকেটে ব্যবহৃত গোলাবারুদ, যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রের সরবরাহও হারাতে পারে ইউক্রেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরিচালনায় ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেখছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জার্মানির একটি অজ্ঞাত স্থানে, ১১ জুন ২০২৪