ফাগুনের দুপুর। সূর্য মাথার ওপরে হালকা তেতে আছে। ঝলমলে আলোয় সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ের সবুজ বনভূমি আরও মোহনীয় উঠেছে। পাহাড়ের কোলে একটি ধানখেতে বাঁশ ও ডালপালার বেড়া দিচ্ছিলেন দিনা মারাক (৬৫) নামের এক নারী। তিনি জানান, এ বেড়া বন্য হাতির কবল থেকে শুধু ফসল বাঁচানোর জন্য নয়, এটি তাঁর মেয়ে মেরীর ভবিষ্যৎ রক্ষার চেষ্টা।

দিনা মারাক শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী আলবিনুস সাংমা পেশায় দিনমজুর। তাঁদের সংসারে তিন ছেলে, এক মেয়ে আর আছেন অসুস্থ বাবা। দিনার একমাত্র মেয়ে মেরী মারাক (১৫) চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনই মাঠে-ঘাটে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গতকাল বুধবার কাজের ফাঁকে এক দৃষ্টিতে কিছুটা দূরে তাঁকিয়ে কী একটা ভেবে দিনা বললেন, ‘মেয়েডার লেখাপড়া শেষ কইরা বিয়া দিতে পারলেই আমগর দুশ্চিন্তা কমব।’

দিনার পরিবার ৮ শতক জমিতে বোরো ও আমন ধান আবাদ করে। পাশাপাশি বাবার দেওয়া ৫ শতক জমিতেও চাষ করেন তাঁরা। কিন্তু এই পাহাড়ি অঞ্চলে ফসল ফলানো যতটা কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন বন্য হাতির হাত থেকে ফসল রক্ষা। মধুটিলা ইকোপার্কের জঙ্গলের পাশেই তাঁদের চাষের জমি। তাঁরা এলাকায় কয়েক দিন ১০-১২টি বন্য হাতি অবস্থানের খবর পেয়েছেন। আতঙ্ক নিয়েই দিন-রাত জমির চারপাশে বেড়া দেওয়ার কাজ করছেন দিনা।

হাতির প্রসঙ্গ উঠাতে দিনা বললেন, ‘আমরা কিন্তু হাতিরে ‘হাতি’ কই (বলি) না; ‘মামা’ বা ‘হাতিবাবু’ কই। নইলে হাতিরা রাগ করে, অসম্মান বোধ করে। এখন যেমন কথা কইতেছি, মামারা হয়তো শুনতাছে!’ বন্য প্রাণীটির সঙ্গে তাঁদের কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে দিনা বলেন, ‘হাতি মামাদেরই তো বন, মামারা বনে থাকবেই। কিন্তু রাগ কইরা যদি মাঠে নেমে ধান গাছ পা দিয়ে মাটিতে মিশায়, তখন কিছু করার থাকে না।’

‘আমরা কিন্তু হাতিরে ‘হাতি’ কই (বলি) না; ‘মামা’ বা ‘হাতিবাবু’ কই। নইলে হাতিরা রাগ করে, অসম্মান বোধ করে। এখন যেমন কথা কইতেছি, মামারা হয়তো শুনতাছে!’

দিনার দুই ছেলে চট্টগ্রামে কাজ করেন। তাঁরা প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠান। আর এক ছেলে গ্রামের স্থানীয় বাজারে চুল কাটার দোকান দিয়েছেন। তাঁদের সংসার চলে স্বামীর দিনমজুরির আয় আর ছেলেদের পাঠানো টাকায়। এ ছাড়া নিজ হাতে ফসল ফলিয়ে সংসারে অবদান রাখেন দিনাও। তবে দিনার বেশির ভাগ ভাবনা যেন মেয়ে মেরীকে ঘিরে। দিনা চান, মেরী যেন ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে। এরপর ঘটা করে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারলেই মনটা হালকা হবে। দিনার ভাষ্য, ‘আমাগো আর কতোইবা বয়স? মেয়েডার একটা ঠিকঠাক বিয়া হইলেই বুকের পাথর সরে যাবে।’

ফসল ফলানো থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত চলমান এই সংগ্রামের মধ্যেও দিনার মুখে ক্লান্তি নেই। বরং চোখে ভাসে তাঁর মেয়ের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। গারো পাহাড়ের সবুজ ছায়ায় দিনা মারাকের এই লড়াই শুধু ফসল রক্ষার জন্য নয়; টিকে থাকা, বাঁচার আর স্বপ্ন বুননের লড়াই। তবে বন্য হাতির আক্রমণে মুহূর্তেই দিনা মারাকদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তাই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান দিনাসহ গারো পাহাড়ের বাসিন্দারা।

এ প্রসঙ্গে মুধটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, বন্য হাতির দল সারা বছর এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চষে বেড়ায়। তবে মধুটিলা এলাকায় এখনো লোকালয়ে হাতি দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি হাতি দল ছুট হয়ে জঙ্গলে অবস্থান করছে বলে শুনেছি। জঙ্গল থেকে লোকালয়ে হাতির আক্রমণ ঠেকাতে কিংবা প্রাণীগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে বন বিভাগ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম প্রস্তুত আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য হ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদা না পেয়ে গুলি ছুঁড়ে ২ ট্রলার ছিনতাই, থানায় অভিযোগ

ঢাকার সাভারে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাত্রী পারাপারের দুটি ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাভার পৌর এলাকার কাতলাপুরে বংশী নদীর মিলন ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া। 

সাভার পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে স্থানীয় কামরুল ইসলাম এই ঘাটটি পরিচালনা আসছিলেন। ইজারাদার কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েতুল্লাহ জানান, অন্তর খান, মোর্শেদ খানসহ আরও কয়েকজন আমার বাবার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা বাবাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অন্তরসহ আরও কয়েকজন ঘাট এলাকায় এসে বাবার কাছে দাবি করা চাঁদার ৫ লাখ টাকা চান। টাকা না দেওয়ায় তারা বাবাকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় বাবার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অন্তর তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এরপর অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে খেয়া পারাপারের ট্রলার দুটি নিয়ে যান।

হেদায়েতুল্লাহ জানান, ঘটনার পর তার বাবা অন্তরসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় অভিযোগ করেছেন।

অন্তর ও তার সহযোগীরা যুবদল ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার পর গা ঢাকা দেওয়ায় অভিযুক্ত কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা সমকালকে বলেন, বুধবার বিকেলে মিলন ঘাটে ট্রলার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক যুবককে পিস্তল হাতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে গুলির ঘটনার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ কাজ করছে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ