নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের
Published: 7th, March 2025 GMT
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত দলটিই নেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) হয়ে এই সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না। এ ছাড়া নির্বাচনে কে অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে ‘হতচকিত’ বোধ করেছিলাম। আমার ধারণা ছিল না, সরকারের নেতৃত্ব দেব। আগে কখনও সরকার চালাইনি। অথচ আমাকেই প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাপারটি যখন ঠিক হয়ে গেল, তখন আমরা কাজগুলো সংগঠিত করতে শুরু করি। আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, দেশের জন্য অর্থনীতি ঠিক করা আমাদের অগ্রাধিকার ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় তাঁর সরকারি বাসভবনে বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা সামিরা হুসেইনকে সাক্ষাৎকারটি দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস এ বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজনের আশা করছেন। ভারতে পালিয়ে গিয়ে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল এতে অংশ নেবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে। তবে ভারত এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং অর্থনীতিও। এটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া অর্থনীতি, একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটি এমন যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ংকর টর্নেডো বয়ে গেছে এবং আমরা টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর তিনি কঠোরভাবে দেশ শাসন করেন। তাঁর আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালান। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও জেলে পাঠানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পর আন্দোলনকারীদের অনুরোধে অধ্যাপক ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে দেশে ফিরে আসেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চলতি সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। বিষয়টি নির্ভর করবে সরকার কত দ্রুত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ সংস্কার প্রয়োজনীয়।
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যদি আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারব। যদি সংস্কারের দীর্ঘ সংস্করণ থাকে, তাহলে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশে হওয়া সহিংস বিক্ষোভের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। তখন মানুষকে গুলি করা হচ্ছিল, হত্যা করা হচ্ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে প্রায় সাত মাস চললেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভালো একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে তা ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
দেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এসব জিনিস ঘটুক, তা সমর্থন করছি না। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই, যা আমরা হঠাৎ তৈরি করেছি। এটি সেই দেশের ধারাবাহিকতা, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি; এমন একটি দেশ, যা বহু বছর ধরে একইভাবে চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার নৃশংস শাসনের শিকার মানুষ এখনও ক্ষুব্ধ। ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী দমনপীড়নের জন্য তাঁর বিচার দাবিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নামেন। এখন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ হাসিনার প্রয়াত বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা ইউটিউবে বক্তব্য দেবেন বলে তাঁর সমর্থকদের বলার পর এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবির বিষয়ে বিবিসি জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সরকারের সমর্থনে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে। তারা গিয়ে অভিযোগ করতে পারে। মামলা করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনি অভিযোগ করার জন্য শুধু বিবিসির সংবাদদাতার কাছে যাবেন না। আপনি অভিযোগ করতে থানায় যান এবং দেখুন আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে কিনা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বিদেশি সহায়তায় কাটছাঁট এবং তাদের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নের প্রায় সব কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এটি উপকারী ছিল। কারণ, তারা এমন কিছু করে এসেছে, যা আমরা করতে চেয়েছিলাম। যেমন– দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বিষয়, যা সঠিকভাবে করার সামর্থ্য এখনও আমাদের হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। দেশটি গত বছর বাংলাদেশকে ৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে– অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যখন এটা ঘটবে, আমরা তা পূরণ করব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য র সদস আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসিতে আন্দোলন: এখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি চেয়ারম্যান
গত বৃহস্পতিবারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্মকর্তারা লাগাতার কর্ম বিরতির ঘোষণা দিলেও আজ রোববার বেশিরভাগ কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের ডেস্কে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কোন কাজ চলছে না। সকলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের সব অংশীজনদের সঙ্গে আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা দু'ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ জানান, তিনি এখনও কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা করেননি।
গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে তাদের পদত্যাগ দাবি ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চেয়ারম্যানের গানম্যান আশিকুর রহমান বাদী হয়ে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিমসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজ কমিশনে কাজে যোগদান করেননি।
সাংবাদিকরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওই মামলায় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, কিংবা এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি জানতে চেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
এর আগে কমিশনের সঙ্গে শেয়ারবাজার অংশজনরা জরুরি বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের যৌক্তিক কোনো দাবি বা ক্ষোভ থাকলে তা যথাযথ আইন ও নিয়ম মেনে প্রক্রিয়ায় কমিশন বা সরকারের কাছে জানানোর উপায় রয়েছে। কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে তা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করারও অধিকার অন্য সবার মত কমিশন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে। এ ঘটনায় দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
গত বুধবার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে তাদের দাবি জানানো এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমগুলো ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত- এমন মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বলেন, সকল অংশীজন আশা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি হচ্ছে শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংস্থার সুনাম সংবেদনশীলতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের।
বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কমিশনের নিরীহ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিগত দিনে শেয়ার বাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
মমিনুল ইসলাম আরও জানান, উদ্ভূত ঘটনায় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ঘটনায় কেউ যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের সারভিলেন্স এবং মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে আজ ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে স্বাভাবিক লেনদেন হলেও দর হারিয়েছে ২৭৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। দর বেড়েছে ৫৮টির।
টাকার অংকে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকার শেয়ার ও ফান্ড। তবে প্রধানমূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ পয়েন্টে নেমেছে।