কুমিল্লায় দিঘির পাড়ে পৌনে ৪০০ বছরের নান্দনিক মসজিদ
Published: 7th, March 2025 GMT
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ। পৌনে ৪০০ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। মসজিদের পাশে বিশাল আকারের নাটেশ্বর রাজার দিঘি। দিঘির পাড়ে আছে এক ধর্মগুরুর মাজার। দিঘির শান্ত জলরাশির সঙ্গে মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে ভিড় করেন।
কুমিল্লা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে মসজিদের অবস্থান হলেও কালের সাক্ষী হিসেবে ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ স্থাপনাটি মূলত তিন জেলার মিলনস্থলে পড়েছে। উত্তর-পশ্চিমে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু দূর এগোলেই নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা।
মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে নাটেশ্বর দিঘি। ৩৫ দশমিক ২৯ একর আয়তনের সুবিশাল দিঘির পাড়ে পূর্ব-উত্তর কোণে মসজিদের অবস্থান।
মনোহরগঞ্জের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে মানুষের ভিড় করার আরেকটি কারণ হলো, দিঘির পূর্ব পাড়ে হজরত সৈয়দ শাহ শরিফ বাগদাদি নামের এক ধর্মগুরুর মাজার আছে। মসজিদ, দিঘি ও মাজার ঘিরে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে ১৬৫৭ সালে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ৩৬৮ বছর আগে নির্মাণ করা হলেও মসজিদটির সৌন্দর্য এখনো অটুট। চুন-সুরকির মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করেন। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসে নামাজ আদায় করেন। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি তৎকালীন স্থাপত্যের অনন্য এক নিদর্শন। মসজিদটির বাইরের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৯৪ মিটার। মসজিদের ওপরে তিনটি গম্বুজ আছে। আয়তাকার মসজিদটির পূর্ব দিকে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা আছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় দরজাটি অপেক্ষাকৃত বড়। দরজাগুলোর বিপরীত দিকে পশ্চিমে তিনটি মেহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অন্য মেহরাব দুটির তুলনায় বড়।
মসজিদের চার কোণে চারটি বড় অষ্টভুজাকার মিনার আছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের ওপরে দুটি অষ্টভুজাকার মিনার আছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজের ভেতরের অংশ পাতার নকশা। বাইরের অংশে চক্র নকশার কাজ। মসজিদের সামনের দেয়ালে ফারসি ভাষার শিলালিপি আছে। সেখানে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াতে আবদুল করিমের নাম লেখা আছে। এলাকাবাসীর কাছে তাঁর পরিচয় নিয়ে দুই ধরনের মত প্রচলিত। একটি হলো, হায়াতে করিম দিঘি খননকারী নাটেশ্বর রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যটি হলো, তিনি দিঘির পাড়ে থাকা মাজারের ধর্মগুরুর মুরিদ ছিলেন।
মসজিদ দেখতে আসা চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়েকবার মসজিদটি দেখতে এসেছেন। বিশেষ করে দিঘির পাড়ে মসজিদ হওয়ায় খুব সুন্দর লাগে। এখানে এলে মসজিদ ও দিঘির শান্ত জলরাশি দেখে মনটা শান্ত হয়ে যায়।
মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে ১৬৫৭ সালে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ র স ন দর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’
শঙ্খ দাশগুপ্তের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘প্রিয় মালতি’। এটি অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীরও প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। গত ডিসেম্বরে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরামা সেকশনে সেরা সিনেমার পুরস্কার পায় সিনেমাটি। এবার লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবের অষ্টম আসরে দর্শক পুরস্কার অর্জন করেছে ‘প্রিয় মালতি’।
গত ২২ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া এই উৎসবে ‘প্রিয় মালতি’ দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পায়।
সামাজিক মাধ্যমে খবরটি জানিয়ে শঙ্খ দাসগুপ্ত লিখেছেন, “আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ‘প্রিয় মালতি’ লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শক পুরস্কার জিতেছে। আমাদের গল্পে যারা বিশ্বাস রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা আর সমর্থনেই এটা সম্ভব হয়েছে। চলুন আরও এমন গল্প তৈরি করি, যা সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের হৃদয়কে যুক্ত করে।”
‘প্রিয় মালতী’ নির্মাণের পাশাপাশি এর গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার শঙ্খ দাশগুপ্ত নিজেই। সিনেমায় বাস্তব জীবনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘প্রিয় মালতি’ একটি গভীর আবেগঘন নাটকীয় চলচ্চিত্র, যেখানে এক গর্ভবতী নারীর হঠাৎ ঘটে যাওয়া নাটকীয় জীবনের মোড়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর পাশাপাশি এতে অভিনয়ে করেছেন নাদির চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, মোমেনা চৌধুরী, সমু চৌধুরী, আনিসুল হক বোরুন, শাহজাহান সম্রাট এবং রিজভী রিজুসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ এপ্রিল বার্বিকান সিনেমায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ‘কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ভারতের ‘গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অফিসিয়ালি প্রদর্শিত হয়। আন্তর্জাতিক উৎসবে ঘুরে আসার পর গত ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পায় সিনেমাটি।