ইসরায়েল কেন সিরিয়াকে ভেঙে ফেলার ফন্দি করছে
Published: 7th, March 2025 GMT
সম্প্রতি একটি সামরিক অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ার সরকারের উদ্দেশে একটি উত্তেজক বক্তব্য দিয়েছেন। আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াকে নিয়ে তাঁর দেশের কৌশলগত রূপরেখাও তিনি তুলে ধরেন।
নেতানিয়াহুর বক্তব্যে তিনটি মূল বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে ইসরায়েল দামেস্কের দক্ষিণে সেনাবাহিনী নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দেবে না। নির্দিষ্ট করে তিনি কুয়েইট্রা, দারা ও সুইদে প্রদেশে ‘সম্পূর্ণ নিরস্ত্র’ অঞ্চল ঘোষণার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয়ত, নেতানিয়াহু এই অবস্থান ঘোষণা করেছেন যে ইসরায়েল সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের রক্ষক। অতি সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ বলেছেন, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী’র সঙ্গে তারা সম্পর্ক জোরালো করতে চায়।
তৃতীয়ত, সিরিয়ার ভূমি ইসরায়েলের দখলে রাখতে নেতানিয়াহু তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে নিরপেক্ষ অঞ্চল ও হেরমন পর্বত এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকবে।
আরও পড়ুনসিরিয়ার বিদ্রোহীদের পেছনে তাহলে কি ইসরায়েল!০৮ ডিসেম্বর ২০২৪নেতানিয়াহুর এই অবস্থান ইসরায়েলের সম্প্রসারণ ও দখলদারির এজেন্ডাকে (বিশেষ করে গোলান মালভূমি) শক্তিশালী করে। অবশ্য ইসরায়েলের এই অবস্থান নতুন নয়। রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নীতি ইসরায়েল ব্যবহার করে আসছে। লেবাননসহ বিভিন্ন পটভূমিতে ইসরায়েল এই নীতি প্রয়োগ করেছে।
দামেস্কের দক্ষিণাঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণ এলাকা করা হলে সেটা সিরিয়ার সরকারের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ন করবে। সেখানে সিরিয়া রাষ্ট্রের উপস্থিতি দুর্বলভাবে থাকবে। ইসরায়েলি পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হবে এবং রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র তৈরি হবে।
ইসরায়েলি কৌশলের আরেকটা অংশ হচ্ছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো যাতে সিরিয়া সরকারের কর্তৃত্বে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে, তার জন্য উৎসাহ দেওয়া। এভাবে ইসরায়েল সিরিয়াকে টুকরো টুকরো করে রাখতে চায়।
ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েল শান্তির আহ্বানকে দুর্বলতার চিহ্ন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। এই আহ্বানকে ইসরায়েল তার ভূখণ্ড দখলের উচ্চকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আগ্রাসী সুযোগ হিসেবে নিয়েছে।
গত ডিসেম্বর থেকে নেতানিয়াহুর বিবৃতি ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তুরস্ক তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে। সিরিয়ায় ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী প্রকল্পের নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ‘নিরাপত্তার ছদ্মবেশে’ ইসরায়েল সিরিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।নেতানিয়াহুর বক্তব্যে দ্রুজ সম্প্রদায়ের নাম উচ্চারণ করাটা ইসরায়েলের ‘সংখ্যালঘুদের জোট’ মতবাদের প্রতিফলন। এর মধ্য দিয়ে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অঞ্চলটির সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠন করতে চায় ইসরায়েল।
এই বিভক্ত করে শাসন করার নীতি শত্রুতা, সন্দেহ ও সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছ থেকে সহিংস প্রতিক্রিয়া যাতে আসে, সে জন্য সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করা হয়।
ইসরায়েল আগে এই কৌশল লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। সেখানকার খ্রিষ্টান ও শিয়াদের সহযোগিতা করে তারা এটি করেছিল। সিরিয়ার দ্রুজ, কুর্দি ও আলাউত সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে একই কাজ করতে চাইছে ইসরায়েল। কিন্তু এই চিন্তাপদ্ধতি ধ্বংসাত্মক এবং বিপরীত ফল উৎপাদনকারী। চূড়ান্তভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যাঁরা এ কাজে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং যাঁরা তাঁদের ব্যবহার করবেন, এই কৌশল উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আরও পড়ুনসিরিয়ার কুর্দি যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েল কেন আঁতাত করছে০৪ জানুয়ারি ২০২৫সিরিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের দাবির সঙ্গে সেখানে সিরিয়ার সামরিক অবস্থানে ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনাটি মিলে যায়। এ হামলায় বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব রয়েছে। ফলে এটিকে নেতানিয়াহু সবুজ সংকেত হিসেবে ধরে নিয়েছেন।
ইসরায়েলের এই উসকানি ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে সিরিয়ার নতুন সরকারের দিক থেকে বহুমুখী প্রতিক্রিয়া এসেছে।
দ্য সিরিয়ান ন্যাশনাল ডায়ালগ গত মাসে এক বিবৃতিতে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা ইসরায়েল সরকার ও সিরিয়ার আহমদ-আল শারার প্রতি এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে নেতানিয়াহুর নিরস্ত্রীকরণ দাবি তারা মেনে নেবে না। বিবৃতিতে সিরিয়া থেকে ‘অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে’ ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের সংঘাতে যাওয়া ছাড়াই শারা সরকারের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শারা জর্ডান সফরে যান এবং বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন। বাদশাহ আবদুল্লাহ সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন দেন এবং ইসরায়েলের অনুপ্রবেশের নিন্দা জানান। ক্ষমতা গ্রহণের পর এটা ছিল শারার তৃতীয় বিদেশ সফর। ইসরায়েলের আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক জোট গঠনের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। সামরিক পথের চেয়ে কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে মোকাবিলার বিষয়টি উঠে আসে।
আরও পড়ুনসিরিয়ার নতুন শাসক শারা কেন ইসরায়েলের আগ্রাসনে নীরব২১ ডিসেম্বর ২০২৪সিরিয়ার যে জটিল পরিস্থিতি, তাতে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং বিভিন্ন আরব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ইসরায়েল যদি সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে, তাহলে আরব দেশগুলোর অবস্থান মারাত্মক ক্ষুণ্ন হবে।
আরব লিগ, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, কাতারসহ অন্য দেশগুলো ইসরায়েলকে জোরালো নিন্দা জানিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আঞ্চলিক শক্তি তুরস্কের সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে। স্থিতিশীল সিরিয়ার কাছ থেকে তুরস্কের অনেক কিছু পাওয়ার আছে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনে তাদের অনেক কিছু হারানোর আছে।
গত ডিসেম্বর থেকে নেতানিয়াহুর বিবৃতি ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তুরস্ক তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছে। সিরিয়ায় ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী প্রকল্পের নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ‘নিরাপত্তার ছদ্মবেশে’ ইসরায়েল সিরিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।
যদিও এখন পর্যন্ত তুরস্ক সংযত কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না জড়িয়ে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দি সংকটের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
আলি বাকির ইবনে খালদুন সেন্টার ফর হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষণা সহকারী অধ্যাপক
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স ব যবহ র কর য় ইসর য় ল ইসর য় ল স ড স ম বর অবস থ ন সরক র র বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন ইউএনও
দুপুরবেলা বিদ্যালয়ে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এরপর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে মেতে ওঠেন তিনি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূলক নানা প্রশ্নোত্তরে জমে ওঠে সেই আলাপ। গতকাল রোববার কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় দেখা যায় এমন চিত্র।
গতকাল দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাবীবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁদের অভ্যর্থনা জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজেশ কান্তি কানু, সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ জুনায়েদ, সৈয়দ নুর, আমানুল্লাহ, রবিউল আলম প্রমুখ।
পরিদর্শনকালে বিদ্যালয়ের মাঠ, বিদ্যমান ভবন, নির্মাণাধীন একটি ভবন ঘুরে দেখেন শেখ এহসান উদ্দিন। এ সময় শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার সরঞ্জাম এবং বিদ্যালয়ের জন্য অনুদানের আশ্বাস দেন তিনি।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে নাফ নদীর তীর–সংলগ্ন দমদমিয়ার গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২০ সাল থেকে আলোর পাঠশালাটি পরিচালনা করে আসছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৫০ জনের মতো।
বিদ্যালয়টি পরিদর্শনের সময় ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে দমদমিয়া আলোর পাঠশালা। প্রথম আলো ট্রাস্টের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।