শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল জাতিসংঘ
Published: 7th, March 2025 GMT
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল যে, সেনাবাহিনী দমনের পথে গেলে শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিবিসির হার্ডটকে সম্প্রতি এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে এই হার্ডটক গত বুধবার প্রচার করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস। বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাত-সহিংসতা মানবাধিকারের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা জানাতে তিনি তখন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ছিলেন। সেখান থেকে তিনি বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন স্যাকুরের সঙ্গে আলাপ করেন। শুরুতে উপস্থাপক বিশ্বজুড়ে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। উত্তরে ভলকার তুর্ক জানান, এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বারবার সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। বর্তমানে ৫৯টি দেশে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার পেছনে ভূরাজনৈতিক কারণ দায়ী।
উপস্থাপক গাজা-ইউক্রেন-সুদানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রাণহানির কথা স্বীকার করে ভলকার তুর্ক বলেন, হতাহতের সংখ্যা যতটা কমিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করে জাতিসংঘ। মুক্ত ও অবাধ গণতন্ত্র না থাকাকে তিনি দায়ী করেন।
উপস্থাপক জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেছে। এর পর নিকারাগুয়া তার অবস্থান পাল্টিয়েছে। বড় দেশ থেকে ছোট দেশগুলোও যে প্রভাবিত হচ্ছে– এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এর উত্তরে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘আমি আপনাকে বাংলাদেশের উদাহরণ দিতে চাই। আপনি জানেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ব্যাপক আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনার সরকার দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। আশার কথা হলো, আমাদের কণ্ঠ তখন সোচ্চার ছিল। আমরা সেনাবিহিনীকে সতর্ক করেছিলাম, যদি তারা জড়িয়ে পড়ে তাহলে আর শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে থাকতে পারবে না। ফলে আমরা পরিবর্তনটা দেখতে পেলাম। ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভলক র ত র ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনকে সমর্থন ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা ইউক্রেনকে সমর্থন ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার পর এই ‘প্রতিরক্ষা সম্মেলনে’ বসলেন ইইউর ২৭ দেশের নেতারা। তবে সামরিক খাতে ইইউ দেশগুলো যে ৩২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার চেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়ার আশা নেই।
গার্ডিয়ান অনলাইনের খবরে বলা হয়, শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে জেলেনস্কি ইউরোপীয় নেতাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর অর্থ হলো, রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার লড়াইয়ে ইউক্রেন একা নয়। এ সময় পাশে ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেইন।
তিনি বলেন, ইউরোপ একটি স্পষ্ট বিপদের মুখোমুখি। তাই ইউরোপ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হতে হবে। পাশাপাশি স্থায়ী ও ন্যায়সংগত শান্তির জন্য চাপ দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এর আগে উরসুলা ইউরোপকে পুনর্নির্মাণ এবং মহাদেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ইইউ নেতারা এমন সময় সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপের সুরক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নয়। ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব ইইউ দেশগুলোকেই নিতে হবে। এই অবস্থায় ইইউ নেতারা খুবই উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে গতকাল রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে চারজন নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। তিনি ব্রাসেলস সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চুক্তিটি এমন হতে হবে, যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেবে। ইউক্রেনকে কোনো শাস্তি পেতে হবে না।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাসেলস সম্মেলনের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করে বলেন, ইউরোপ এখন ‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে আছে। ইউক্রেনে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ উচিত বলে গতকালের সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসেতাটাকিস।
তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে পারব– এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। এ জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। এর আগে জার্মান চ্যান্সেলরও একই রকম মনোভাব ব্যক্ত করেন।
এদিকে ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে খুশি হয়নি রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনে যুদ্ধ আরও তীব্র হবে। ইইউ নেতাদের পরিকল্পনা দেখে মনে হয়, তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেননি।
আলজাজিরা জানায়, বেলজিয়াম ইউক্রেনের সমর্থনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠাতে সম্মত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভার বলেছেন, তাঁর দেশ ২০২৬ সালে ওই যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে সরবরাহ করবে। তিনি জানান, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাওয়ার অপেক্ষায় বেলজিয়াম। চালানটি পেলে এফ-১৬ ইউক্রেনকে দেওয়া হবে। আর ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য ন্যাটো মিশনে আটটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নতুন ইইউ সদস্য সুইডেন। এ ছাড়া তুরস্ক ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে রাজি এমন ২০টি দেশ ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ গড়তে একমত হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পরে এই দেশগুলো ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও কমনওয়েলথভুক্ত দেশ রয়েছে।
এর আগে ‘রিআর্ম ইউরোপ’ বা সামরিক অস্ত্রসজ্জিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ইইউ নেতারা। এতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য দেশগুলোকে তাদের জাতীয় বাজেট ঘাটতির সীমা বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়।