খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামল
Published: 6th, March 2025 GMT
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও অসহনীয়। চালের ভরা মৌসুম ও শীতের সবজির ভালো সরবরাহ থাকলেও খাদ্যেপণ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের নিচে নামেনি। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি টানা তিন মাস সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে আসার মধ্যেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসে এসে এ হার এক অঙ্কে নেমে এলো। মাসটিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১১ মাস পর এ হার এখন দুই অঙ্কের নিচে। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এপ্রিলে তা বেড়ে হয় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সে ধারা অব্যাহত ছিল।
সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত ২৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মূলস্ফীতি এর চেয়ে কম ছিল। ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছিল ওই মাসের মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি নিয়ে টানা তিন মাস মূল্যস্ফীতি কমছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রাম-শহর সব জায়গায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। মাসটিতে গ্রাম এলাকার মূল্যস্ফীতি আগের মাসের ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। শহরাঞ্চলে যা ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্বিক এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। মাসটিতে এ খাতের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে কিছুটা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। গতকাল সমকালকে তিনি বলেন, সব আমলেই সরকারকে খুশি রাখাই যেন আমলাদের কাজ। বিবিএসের প্রতিবেদনে এমন উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বাজার এখন স্থিতিশীল। বেশির ভাগ পণ্যের দাম আর বাড়েনি। আবার সবজি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম কমেনি। তাহলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমলো কীভাবে? উপরন্তু চাল, তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ক্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি জাতীয় অর্থনীতিতে মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে এ পরিস্থিতি শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমিয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানি প্রবাহ ঠিক রাখতে আরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘরে নেমে আসবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত বছর থেকে মূল্যস্ফীতি হিসাব পদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এখন ২০২১-২২ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হচ্ছে। পণ্য ও সেবার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা মূল্যসূচকে ৭৪৯ ধরনের ৩৮৩ আইটেমের পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৪২২টি পণ্যের বাজারদর হিসাব করা হতো। নতুন হিসাবের আওতায় এসেছে সন্তানের শিক্ষার খরচ, পরিবারের ইন্টারনেটের খরচ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে খাবারের খরচসহ বেশ কয়েকটি খাত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভ্রমণ: ভারত ০ কিলোমিটার, নিউজিল্যান্ড ৭০০০
গ্রুপ পর্ব থেকে সেমিফাইনাল হয়ে ফাইনাল—চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে পৌঁছাতে ভারত ও নিউজিল্যান্ড দুই দলই খেলেছে চারটি করে ম্যাচ। তবে ম্যাচসংখ্যা সমান হলেও টুর্নামেন্টজুড়ে দৌড়ঝাঁপে দুই দল দুই মেরুতে।
রোহিত শর্মারা ভারত থেকে বেরিয়ে ভেন্যু শহরে পৌঁছানোর পর ১ কিলোমিটারও বিমান ভ্রমণ করেননি। কিন্তু একই সময়ে নিউজিল্যান্ড দলকে শহর থেকে শহর, দেশ থেকে দেশে ৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে হয়েছে।
ভ্রমণঝক্কিতে জেরবার নিউজিল্যান্ড আর এক শহরে স্থির হয়ে থাকা ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে মুখোমুখি হবে ৯ মার্চ।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) হলেও ভারত দেশটিতে খেলতে যায়নি। রোহিতদের সব ম্যাচ রাখা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুবাইয়েই খেলেছে ভারত।
একই ভেন্যুতে রোহিতরা সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন বলে তাঁদের বাড়তি সুবিধা পাওয়া নিয়ে কম কথা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স, দক্ষিণ আফ্রিকার ফর ডার ডুসেনরা তো বটেই, ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামিও ভ্রমণ না করার সুবিধা স্বীকার করেছেন।
বিপরীতে টুর্নামেন্টের বাকি ৭ দলকেই একের পর এক ভেন্যুতে দৌড়াতে হয়েছে। অন্য সব দল ছাড়িয়ে ফাইনালে ওঠার কারণে নিউজিল্যান্ডের বেশিই ভ্রমণ করার কথা। তবে এই দলটির ভ্রমণ বেশি হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রথম পর্বে ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে থাকাও।
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ক্ষেপে গেলেন গম্ভীর০৫ মার্চ ২০২৫নিউজিল্যান্ড দল গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ভেন্যু ছিল করাচি। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচটি খেলার জন্য নিউজিল্যান্ড দল করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে ভ্রমণ করে। তৃতীয় ম্যাচের আগে অবশ্য ভ্রমণটা পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকেনি।
প্রতিপক্ষ ভারত বলে নিউজিল্যান্ডকে যেতে হয়েছে দুবাইয়ে। সেখানে ম্যাচ খেলেই আবার পাকিস্তানে লাহোর–যাত্রা, উদ্দেশ্য সেমিফাইনাল খেলা। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড দল আবার ওঠে দুবাইয়ের বিমানে।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারিয়েছিল ভারত।