কম দামে চাল, ডাল, তেল ও আলু বিক্রি হচ্ছে এমন খবর শুনে বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের কালিতলাহাটে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিউটি বেগমসহ প্রায় সাতশ মানুষ। সেখানে ট্রাকে করে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করছিল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সারি দীর্ঘ হলেও এ পয়েন্টে পণ্য বরাদ্দ হয়েছে চারশ মানুষের জন্য।
বিউটি বেগম জানান, তাঁর স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানীর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এখন লাইনের যে অবস্থা তাতে পণ্য কিনে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
শহরের জেলখানা মোড়েও মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কথা হয় বউবাজার এলাকার আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামী সবজি বিক্রি করেন। রোজায় শাকসবজির চাহিদা কম থাকায় বিক্রি তেমন হচ্ছে না। তাই টিসিবির পণ্য কিনতে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনিও শেষ পর্যন্ত পণ্য কিনতে পারবেন কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল বগুড়া শহরের কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘ সারি দেখা যায় টিসিবির ট্রাকে সেল করা টিসিবির পণ্যের ক্রেতার। কোনো কোনো এলাকায় পণ্য নিতে এসে না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন অনেকে। সেউজগাড়ি ফুলতলা বাজারে পণ্য নিতে আসা এক শ্রমিক বলেন, কাজ বাদ দিয়ে ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কিছুই কিনতে পারলাম না। পণ্য শেষ হয়ে গেছে।
সপ্তাহে একদিন করে পর্যায়ক্রমে শহরের ২০টি পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। প্রতি পয়েন্টে ৪০০ জন ক্রেতা এই পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শহরের কালিতলা, জেলখানা মোড়, সেউজগাড়ি ফুলতলা বাজার, মালতিনগর বটতলা পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করা হয়। পণ্যের মধ্যে ছিল ছোলা, চিনি, মশুরের ডাল ও সোয়াবিন তেল। ৪৫০ টাকায় প্যাকেজে থাকছে ১০০ টাকা করে ২ লিটার সোয়াবিন তেল, ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মশুরের ডাল, ৭০ টাকা কেজি চিনি ও ৬০ টাকা কেজি ছোলাবুট। কালিতলাহাট পয়েন্টে টিসিবি পণ্য বিক্রি করে বিসিক ফুলবাড়ি এলাকার মেসার্স মম ট্রেডাস।
এ প্রতিষ্ঠানের ডিলার শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দীর্ঘ সারি ছিল আমার পয়েন্টে। ক্রেতা বেশির ভাগই মধ্যেবিত্ত পরিবারের। বরাদ্দ ছিল ৪০০ জনের কিন্তু লাইনে ছিলেন অন্তত ৭০০ জন। বাকিরা খালি হাতে ফিরে গেছেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, প্রতিদিন একেকটি ট্রাকে ৪০০ জনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যে আগে লাইনে দাঁড়াতে পারবেন তিনি আগে মালপত্র পাবেন। স্বল্প বরাদ্দের কারণে অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল তরুণ আইনজীবীর
প্রায় আট মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সুজন মিয়া (৩২)। পরিকল্পনা ছিল, বড় ভাইয়ের বিয়ের পর তিনি ধুমধাম আয়োজন করে স্ত্রীকে ঘরে তুলবেন। তার আগেই দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল তরুণ এই আইনজীবীর। গত রোববার জেলা শহরের পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সুজন পৌর শহরের পূর্ব হিলালপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে। হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। আদালত বর্জন করে সুজনের সহকর্মীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে আইনজীবী সমিতি।
জানা গেছে, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইনজীবী সুজন ও তাঁর কয়েক বন্ধু পৌর কার্যালয়ের পাশে চটপটির দোকানে ফুচকা খাচ্ছিলেন। এ সময় পাঁচ-ছয় কিশোর হঠাৎ সুজনের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা করে। তাঁর বুকে একাধিক ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। সুজনকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুজনের বড় ভাই সুমন মিয়া বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে তাঁর বিয়ে হয়। আমার বিয়ের পর অনুষ্ঠান করে সুজনের স্ত্রীকে ঘরে তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করব।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।