আড়াই বছরেও দৃশ্যমান হয়নি ১৭৭ কোটি টাকার সেতু
Published: 6th, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে ১৭৭ কোটি টাকার একটি সেতু নির্মাণের মেয়াদ তিন বছর হলেও আড়াই বছরেও তা দৃশ্যমান হয়নি। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ১০৮ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অষ্টগ্রামের বাংগালপাড়া মেঘনা নদীর ওপর এক কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর কাজ ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত। অর্থাৎ ২ বছর ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও সেতুর অর্ধেক কাজও হয়নি।
সম্প্রতি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর মেঘনা শাখা নদীর উত্তর পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। ওই অফিসে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। অফিসে একজনকে পাওয়া গেলেও তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবং সেতু নির্মাণের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সেতুটি ২৮টি পিলারের ওপর নির্মিত হওয়ার কথা। নদীর দুই পারে ২৫টি পিলার ও নদীর মধ্যে তিনটি পিলার। দুই পারে ২৫টি পিলারের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬টির। ১৯টি পিলারের কাজ শুরুই হয়নি। নদীর মধ্যে মূল তিনটি পিলারের কাজও শুরু হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত হাসিনা সরকারের তিন মেয়াদে থাকা কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক হাওরে উন্নয়নের নামে বেশ কিছু অপরিকল্পিত কাজ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে এ সেতু অন্যতম। তাঁর এসব অপরিকল্পিত কাজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সেতুর কাজ পরিদর্শনে একবার এলেও সরকার পরিবর্তনের পর কোনো তদারকি করেননি তিনি। প্রকল্পের মেয়াদ আর মাত্র ৭ মাস বাকি থাকলেও, এই প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে সেতুটি দৃশ্যমান হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী জানান, এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাংগালপাড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে তা হবে একটি মাইলফলক।
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, সেতুর কাজ চলমান আছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও স্থানীয় লোকজনের বাধায় ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মানিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি বিদেশে আছেন। এর ফলেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আগামী বছর এ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তমা কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জরিপ প্রকৌশলী মো.
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ শাহ আলম মিয়া বলেন, নাসিরনগরের দিকে কিছু গাছ কাটার প্রয়োজন হলে সেখানকার লোকজন বাধা দেয়। ফলে কাজ সম্ভব হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, তারা সবসময় তদারকির মধ্যেই আছেন। তাদের সিনিয়র কনসালট্যান্টরা প্রতিমাসে সাইট ভিজিট করছেন। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সহযোগিতার অভাব রয়েছে। অষ্টগ্রামের চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশি সমস্যা। ওই এলাকার লোকজন কাজ করতেই দেয় না। এ ছাড়া হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে কাজ করা যায় না। সেতুটিকে অপরিকল্পিত বলা যাবে না। কারণ, হাওর দুর্গম এলাকা হওয়ায় জেলা শহর ও রাজধানী ঢাকা শহরে যাতায়াত করতে হলে লঞ্চ বা ট্রলারে এক রাত যাপন করে পরদিন গ্রামে আসতে হতো। আর এখানে এ সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে সারাবছর যোগাযোগ করা যাবে। এর ফলে হাওরের কৃষি পণ্য ও মিঠা পানির মাছের ন্যায্যমূল্য পাবে হাওরবাসী।
কিশোরগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমিন ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। সেতুর জায়গা নির্বাচনে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। প্রকল্প এলাকা থেকে আরও দক্ষিণে মেঘনায় সেতুটি হলে ভালো হতো। কেননা, প্রকল্প এলাকায় অনেক জমি ও বনায়নের ক্ষতি হয়েছে। সেতু নির্মাণ হলে আবাদি কৃষিজমির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ র প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘরের চালায় ঢিল দিতে বাধা দেওয়ার জের, টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নারীর মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে রোকেয়া বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই নারী। রোকেয়া বেগম (৫০) উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলমদর পাড়ার রইছ মিয়ার স্ত্রী। ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধরমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, ঘরে চালায় ঢিল ছুড়তে বাধা দেওয়ায় ১ এপ্রিল রাতে বদরুল ইসলাম নামে এক যুবক রোকেয়া বেগমকে টেঁটা দিয়ে আঘাত করে। বদরুল একই এলাকার ছিপত আলীর ছেলে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ধরমণ্ডল ইউনিয়নের কলমদর পাড়ার যুবক বদরুল প্রায়ই রোকেয়ার ঘরে ইট দিয়ে ঢিল ছুড়ত। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশও হয়েছে। গত ১ এপ্রিল রাতে ঘরের চালে ঢিল মারে। এতে ঘরে থাকা শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে রোকেয়ার ছেলে সেলিম মিয়া বের হয়ে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু বদরুল কোনো কথায় কর্ণপাত না করে আবারো ঢিল ছুড়তে চাইলে দু’জনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বদরুলের হাতে থাকা টেঁটা দিয়ে সেলিমকে আঘাত করতে আসে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোকেয়া বেগম ছেলের সামনে চলে এলে তাঁর বুকে টেঁটাবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল নেওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শনিবার রাতে মারা যান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার পর বদরুলকে আটক করে গ্রাম পুলিশ ফরিদ মিয়ার জিম্মায় দেওয়া হয়। কিন্তু বদরুল কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে গ্রাম পুলিশ ফরিদ মিয়ার ভাষ্য, চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয়রা বদরুলকে তাঁর কাছে ধরে এনেছিলেন। এর পর তিনি বদরুলকে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে কথা বলার এক ফাঁকে বদরুল পালিয়ে যায়।
নাসিরনগর থানা ওসি মো. খায়রুল আলম বলেন, তিনি ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দিতে আসেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।