Samakal:
2025-03-06@21:35:14 GMT

জাকাত আদায়ের ফজিলত

Published: 6th, March 2025 GMT

জাকাত আদায়ের ফজিলত

জাকাত ইসলামী জীবন বিধানের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম মৌলভিত্তি এবং অবশ্য পালনীয় আর্থিক ফরজ ইবাদত। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হলো জাকাত। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যার সমাধান করে সমাজে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। জাকাত বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। তবে অনেকে অধিক সওয়াবের আশায় রমজানে জাকাত আদায় করে থাকেন।
‘জাকাত’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, প্রাচুর্য ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়– আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়াতে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোনো এক প্রকার লোক অথবা তাদের প্রত্যেকের মাঝে দান করে মালিক বানিয়ে দেওয়াকে ‘জাকাত’ বলা হয়।
কোরআন মাজিদ ও হাদিসে নববিতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জাকাতের বিধান ও প্রাসঙ্গিকতার বর্ণনা এসেছে। জাকাত শব্দটি কোরআনে ৩২ বার, সালাতের সূত্রে ২৬ বার, স্বতন্ত্রভাবে ৪ বার, ‘পবিত্র’ অর্থে ২ বার এবং ১৯টি সুরায় আলোচনা এসেছে।

জাকাত ও সাদাকাত মহান প্রভুর নৈকট্য লাভের সুস্পষ্ট উপায় উল্লেখ করে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে–
‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা তথা জাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৩)
ইসলামের অপরাপর ফরজ বিধানের মতো জাকাতও একটি ফরজ বিধান। কোরআনে বর্ণিত  আছে– ‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত প্রদান করো, আর রুকুকারিদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা আল বাকারা: ৪৩) 

জাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। রাসুল (স) ইরশাদ করেন– ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রামাদানের সাওম পালন করা।’ 
জাকাত কাদের ওপর ফরজ? চাঁদের হিসাবে বছর পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সব মুসলিম, স্বাধীন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ নরনারীর ওপর জাকাত ফরজ। চার প্রকার সম্পদে জাকাত দেওয়া ফরজ– 
প্রথম প্রকার (সোনা-রুপা ও নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রা): এ জাতীয় সম্পদ যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এগুলোর জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা তাওবা ৩৪ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এ ছাড়া লাভের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য রাখা সব প্রকার মালপত্রই বাণিজ্যিক পণ্য। এসব পণ্যের মূল্য যখন নিসাব তথা স্বর্ণ কিংবা রূপার নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন উহার জাকাত দেওয়া ফরজ। (হেদায়া: ৮১)

উৎপাদিত ফসলেরও জাকাত আছে। ধান, গম, ভুট্টা, যব, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ফসল যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এসব শস্যাদির জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা আনআম : ১৪১ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এর বাইরে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, উট ও এ জাতীয় প্রাণী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছলে এটাকে বলা হয় নিসাব পরিমাণ সংখ্যা। নিসাব পরিমাণ সংখ্যায় উপনীত হলে এ জাতীয় পশুতে জাকাত দেওয়া ফরজ। (সহিহ বুখারি: ১৪৬০, মুসলিম: ৯৯০)

পবিত্র কোরআনে আট প্রকারের লোক জাকাতের অর্থ পাওয়ার হকদার বলে ইরশাদ হয়েছে– ‘নিশ্চয় তোমরা জাকাত দেবে– (১) ফকির, (২) মিসকিন, (৩) এ কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের (৪) ইসলাম গ্রহণ করতে পারে সম্ভাব্য এমন অমুসলিমদের তাদের অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, (৫) দাসমুক্তির নিমিত্তে (৬) ঋণগ্রস্ত লোকদের, (৭) আল্লাহর রাহে জিহাদে এবং (৮) অভাবী পথচারী মুসাফিরদের। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা : ৬০)
রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে অধিক নেকি অর্জন সম্ভব। তবে যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা যেন সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি। 

মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স ব পর ম ণ পর ম ণ স ইসল ম র আল ল হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

রোজায় গ্যাসের সমস্যা এড়াতে খাবারের বেলায় যেসব নিয়ম মানবেন

প্রথমে পানি পানের দিকে খেয়াল রাখুন। ইফতারের পর অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করুন। সম্ভব হলে ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় পান না করাই ভালো। চা বা কফি পান করলে বারবার প্রস্রাব হওয়ার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা হয়। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি হওয়ারও এটি একটি কারণ। খাবার গ্রহণের ১ ঘণ্টা আগে ও পরে পানি পান করলে গলায় জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্সের সমস্যা কমবে। তাই সাহ্‌রির সময় ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করে নেবেন। আর ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে সাহ্‌রি করবেন। সাহ্‌রি খেয়েই ঢকঢক করে বেশি পানি পান করবেন না।

আরও পড়ুনরমজান মাসে পানিশূন্যতা এড়াতে যা করবেন০৪ মার্চ ২০২৫

ইফতারে বেগুনি বা পেঁয়াজু খেতে ইচ্ছে হলে একটা বা দুইটার বেশি না খাওয়াই ভালো। ছোলা ভিজিয়ে রেখে কাঁচা বা সেদ্ধ করে খান। খাবারের আইটেম কম রাখুন। তবে স্বাস্থ্যকর যেন হয় সেটা নিশ্চিত করুন।

ইফতারে ফল, ফলের শরবত (লেবু, আনারস বা বেল) রাখুন। খাবারের তালিকায় ফ্রুট বা সবজির সালাদ, যেকোনো একটি রাখুন। এ ছাড়া পাউরুটি টোস্ট করে ডিমসেদ্ধ দিয়ে স্যান্ডউইচ তৈরি করে নিতে পারেন। বাড়িতেই চিকেন স্যুপ, চিকেন ফ্রাই তৈরি করে নিন। ছোট–বড় সবাই পছন্দ করবে। ইফতার বা সাহ্‌রিতে দই-চিড়া ও ফল খুবই উপকারী ও উপাদেয় খাবার।

আরও পড়ুনরোজায় ইফতারে কী কী খাবেন০১ মার্চ ২০২৫

রাতের খাবার ও সাহ্‌রিতে তরকারিতে তেল ও ঝাল কম দিন। অনেকেই রাতের খাবার খেতে চান না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগী, যাঁরা ইনসুলিন নিচ্ছেন বা গ্লিক্লাজাইড/গ্লিমেপেরাইডজাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের ইফতার, সন্ধ্যারাতের খাবার ও সাহ্‌রি কোনোটাই বাদ দেওয়া যাবে না।

ডা. রোজানা রউফ, কনসালট্যান্ট, ইউনিকো হসপিটাল

আরও পড়ুনরমজান মাসে কোন সময় চিয়া সিড খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন০২ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ