Samakal:
2025-04-29@12:42:56 GMT

জাকাত আদায়ের ফজিলত

Published: 6th, March 2025 GMT

জাকাত আদায়ের ফজিলত

জাকাত ইসলামী জীবন বিধানের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম মৌলভিত্তি এবং অবশ্য পালনীয় আর্থিক ফরজ ইবাদত। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হলো জাকাত। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যার সমাধান করে সমাজে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। জাকাত বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। তবে অনেকে অধিক সওয়াবের আশায় রমজানে জাকাত আদায় করে থাকেন।
‘জাকাত’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, প্রাচুর্য ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়– আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়াতে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোনো এক প্রকার লোক অথবা তাদের প্রত্যেকের মাঝে দান করে মালিক বানিয়ে দেওয়াকে ‘জাকাত’ বলা হয়।
কোরআন মাজিদ ও হাদিসে নববিতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জাকাতের বিধান ও প্রাসঙ্গিকতার বর্ণনা এসেছে। জাকাত শব্দটি কোরআনে ৩২ বার, সালাতের সূত্রে ২৬ বার, স্বতন্ত্রভাবে ৪ বার, ‘পবিত্র’ অর্থে ২ বার এবং ১৯টি সুরায় আলোচনা এসেছে।

জাকাত ও সাদাকাত মহান প্রভুর নৈকট্য লাভের সুস্পষ্ট উপায় উল্লেখ করে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে–
‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা তথা জাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৩)
ইসলামের অপরাপর ফরজ বিধানের মতো জাকাতও একটি ফরজ বিধান। কোরআনে বর্ণিত  আছে– ‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত প্রদান করো, আর রুকুকারিদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা আল বাকারা: ৪৩) 

জাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। রাসুল (স) ইরশাদ করেন– ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রামাদানের সাওম পালন করা।’ 
জাকাত কাদের ওপর ফরজ? চাঁদের হিসাবে বছর পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সব মুসলিম, স্বাধীন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ নরনারীর ওপর জাকাত ফরজ। চার প্রকার সম্পদে জাকাত দেওয়া ফরজ– 
প্রথম প্রকার (সোনা-রুপা ও নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রা): এ জাতীয় সম্পদ যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এগুলোর জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা তাওবা ৩৪ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এ ছাড়া লাভের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য রাখা সব প্রকার মালপত্রই বাণিজ্যিক পণ্য। এসব পণ্যের মূল্য যখন নিসাব তথা স্বর্ণ কিংবা রূপার নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন উহার জাকাত দেওয়া ফরজ। (হেদায়া: ৮১)

উৎপাদিত ফসলেরও জাকাত আছে। ধান, গম, ভুট্টা, যব, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ফসল যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এসব শস্যাদির জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা আনআম : ১৪১ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এর বাইরে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, উট ও এ জাতীয় প্রাণী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছলে এটাকে বলা হয় নিসাব পরিমাণ সংখ্যা। নিসাব পরিমাণ সংখ্যায় উপনীত হলে এ জাতীয় পশুতে জাকাত দেওয়া ফরজ। (সহিহ বুখারি: ১৪৬০, মুসলিম: ৯৯০)

পবিত্র কোরআনে আট প্রকারের লোক জাকাতের অর্থ পাওয়ার হকদার বলে ইরশাদ হয়েছে– ‘নিশ্চয় তোমরা জাকাত দেবে– (১) ফকির, (২) মিসকিন, (৩) এ কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের (৪) ইসলাম গ্রহণ করতে পারে সম্ভাব্য এমন অমুসলিমদের তাদের অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, (৫) দাসমুক্তির নিমিত্তে (৬) ঋণগ্রস্ত লোকদের, (৭) আল্লাহর রাহে জিহাদে এবং (৮) অভাবী পথচারী মুসাফিরদের। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা : ৬০)
রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে অধিক নেকি অর্জন সম্ভব। তবে যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা যেন সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি। 

মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স ব পর ম ণ পর ম ণ স ইসল ম র আল ল হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

নীলফামারীতে পৃথক বিস্ফোরণে দুই বোন ও দুই শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীতে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরেণের ঘটনায় উত্তরা ইপিজেডের একটি কারখানায় ও ইপিজেডের পাশে একটি বাসায় পৃথক দুটি বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই বোনসহ চার শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ইপিজেডের সনিক কারখানায় (খেলনা তৈরির কারখানা) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই কারখানার দুই শ্রমিক দগ্ধ হন। তাঁরা হলেন লিটন চন্দ্র রায় (২৫) ও দেলোয়ার হোসেন (২৮)।

উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উত্তরা ইপিজেড স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম বলেন, সনিক নামের একটি কারখানা থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়।

বিস্ফোরণের পর ওই কারখানার শ্রমিকেরা বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, কারখানায় হঠাৎ করে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় তিন পালায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন। ফলে খেলনা তৈরির যন্ত্রগুলো বিশেষ করে ‘ডায়াস্টিক’ যন্ত্রটি বন্ধ করা হয় না। ধারণা করা হচ্ছে ওই যন্ত্র অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনার পর কাজ বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকেরা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এর আগে ৬ এপ্রিল রাত আটটার দিকে ওই কারখানার ডায়াস্টিক যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনায় রমজান আলী ও খায়রুল ইসলাম নামের দুই শ্রমিক দগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১০ এপ্রিল খায়রুল ইসলাম এবং ১২ এপ্রিল রমজান আলী মারা যান। এরপরও সনিক কারখানাটির কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
একই দিন সকাল ৬টার দিকে উত্তরা ইপিজেডসংলগ্ন এক ভাড়া বাসায় রান্না করার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার দুই নারী শ্রমিক দগ্ধ হন। সম্পর্কে তাঁরা আপন দুই বোন। দগ্ধরা হলেন সুইটি আক্তার (২০) ও তাজকিনা আক্তার (২৩)। তাঁরা জেলার ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের সেওটগাড়ি গ্রামের বাবুল হোসেনের মেয়ে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উত্তরা ইপিজেড স্টেশনের একটি দল দগ্ধ দুই বোনকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়।

দুটি বিস্ফোরণের বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, পৃথক দুই ঘটনায় দগ্ধ চার শ্রমিককে প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য চারজনকেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার সামনে আহতদের ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। পরে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ