Samakal:
2025-04-07@11:15:37 GMT

কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রং

Published: 6th, March 2025 GMT

কাইয়ুম চৌধুরীর রেখা ও রং

কাইয়ুম চৌধুরীর ‘কাইয়ুম চৌধুরী’ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা কার বা কীসের যদি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, উত্তর পাই– নিষ্ঠা। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন তাঁর কাজ ও বিষয়ের প্রতি। এবং নানান বিষয়ে তাঁর দখল ছিল। আঁকার ধরন নানান মাধ্যমে বদলে যায়, যেমন– ক্যানভাসে আঁকা আর পোস্টারে আঁকা। কাইয়ুম চৌধুরী ক্যানভাস ও পোস্টার দুটোতেই সমান আধুনিক ও পৃথক। সমসাময়িক পোস্টার বিষয়ে তাঁর খুব ভালো ধারণা ছিল। আমাদের দেশে কিন্তু এগুলো আগে থাকলেও কাইয়ুম চৌধুরী পোস্টারের ধ্যান-ধারণাই বদলে দিয়ে গেছেন। সহজ ও সুন্দরের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। শিল্পকলায় আমাদের বৈঠকগুলোরও প্রাণ ছিলেন তিনি। তাঁকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান নামানোর কথা চিন্তা করা যেত না। লোগো তাঁকেই করতে হতো। 
আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। এর ভেতর নিকট অতীতের যে স্মৃতি মনে পড়ে তা হলো, সার্কের পদকের নকশা, মনোগ্রাম প্রভৃতি তৈরির একটি কমিটিতে আমরা দু’জন ছিলাম। এর আগেও কাছ থেকে বহুবার দেখে যা বুঝেছি, সেবারও বুঝলাম, নকশা সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও পরিকল্পনা কত ব্যাপক। আমাদের দেশে নকশাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ নকশা সবখানে ব্যবহৃত হয়। এই নকশার আধুনিকায়ন, বিকাশে কাইয়ুম চৌধুরী পথিকৃৎ। তাঁর শিল্পবোধ অতি উন্নত ছিল। আর শিল্পের অন্যতম রসদ ছিল দেশপ্রেম। দেশকে ভালো না বাসলে, বাংলার যে রূপায়ণ তিনি তাঁর ছবিতে করেছেন, সেই স্তরের কাজ সম্ভব না। তাঁর ছবি ও বিষয়ের ভেতর বাঙালিপনা ছিল। 
নানান রকম মজার স্মৃতি আছে। একবার আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো কাইয়ুম চৌধুরীকে একটি মসজিদ দেখাতে। এমন এক মসজিদ, যা স্থাপত্যশৈলী এবং শিল্পমান দু’দিক থেকেই চমৎকার। ঠিক করলাম আমাদের পুরান ঢাকার তারা মসজিদ দেখাব তাঁকে। কথা ছিল আমি এসে তাঁকে নিয়ে যাব। কিন্তু তিনি সময় করে উঠতে পারেন না। আজ নয়, কাল নয়, এভাবে মাস পার হয়ে গেল। কয়েক মাস পার হলো, আমাদের আর যাওয়া হয় না। একদিন কাইয়ুম চৌধুরী বললেন, ‘তুমি আসো।’ আজ তিনি যাবেনই। আমিও প্রস্তুত হয়ে গেলাম তাঁর কাছে। অবশেষে আমরা তারা মসজিদ দেখতে যাচ্ছি। বাসায় পৌঁছালে তিনি আমাকে গাড়িতে ওঠালেন। গাড়ি যাচ্ছে আমারই বাসার দিকে। স্যার বললেন, ‘আজকেও আমি পারব না। আজকে তোমাকে দিয়ে আসি।’ এটি একটি মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। আমি অনেককে বলি। 
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমাদের। কাইয়ুম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে যাওয়া হয়নি কখনও। তবে ঢাকার বাসায় বহুবার গিয়েছি। কাইয়ুম চৌধুরীর কাজ দেশের সীমানা পেরিয়েছে, কিন্তু তিনি নিজে জীবনের দীর্ঘ সময় দেশের সীমা পার হননি। জীবনের শেষ দিকে আমেরিকায় বেড়িয়েছেন। সেসব জায়গায় অল্প বিস্তর তাঁর প্রদর্শনী হয়েছে। একবার কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন, ওয়াশিংটনে। সেখানেও গিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখি, তিনি ভীষণ ব্যস্ত। বিষয় হলো, কারও বইয়ের প্রচ্ছদ করার কথা ছিল, কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেছে, কাইয়ুম স্যার এখনও ধরতে পারেননি। এখন ওরা আসছে। তড়িঘড়ি করে আমার সামনেই ১৫ মিনিটে অনবদ্য এক প্রচ্ছদ করলেন। প্রচ্ছদ, অক্ষরশৈলীর প্রবাদপুরুষ কাইয়ুম চৌধুরী। লোকজন তাঁকে দিয়ে বইয়ের প্রচ্ছদ করাতে পারলে ধন্য হয়ে যেত, এসবের প্রমাণ আমাদের সামনে থেকে দেখা। নানান মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তেল রং, জল রং, কালিকলম। তাঁর ছবিতে, নকশায় গাছপালা, মানুষ ও পশুপাখির দেহাবয়ব, নানা রকম জ্যামিতিক আকার আকৃতি সব প্রাকৃতিক রূপ পেত। সবটাতেই বাঙালিপনার ছাপ। লোকশিল্পেরও প্রচুর উপকরণ তাঁর ছবিতে ও নকশায় এসেছে। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতেন। চিত্রকলার বাইরেও অনেক জানতেন কাইয়ুম চৌধুরী। সেসব তাঁর শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছিল। সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। সংগীতের সঙ্গেও তাঁর আত্মার গভীর সংযোগ ছিল। গোপাল হালদার, শচীন দেব বর্মণ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ– এমন মানুষদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ও পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। এরপর সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হাসান হাফিজুর রহমানের মতো সাহিত্যিকরা তাঁর নিকটজন ছিলেন। উৎকৃষ্ট চিত্রকলার সম্ভার উত্তরপ্রজন্মের জন্য তিনি রেখে গেছেন। রেখে গেছেন শিল্পীর জন্য দেশপ্রেম ও রাজনীতি সচেতনতার উদাহরণ। আসছে ৯ মার্চ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

তনু হত্যা: দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাস পর ঘটনাস্থলে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পার হয়েছে গত ২০ মার্চ। এই ৯ বছরে মামলার তদন্ত সংস্থার পরিবর্তন হয়েছে চারবার আর তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়েছে ছয়বার। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের এক পরিদর্শক।

দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস পর নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল আজ সোমবার কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে।

মো. তরিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত মাস আগে মামলাটির দায়িত্ব গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা হয়নি। আজ ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছি। এটা মামলার তদন্তের নিয়মিত কার্যক্রমের একটি অংশ। এরপর আমরা ঢাকায় ফিরে যাব। আমাদের সঙ্গে তনুর পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার জন্য।’

আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন (রুবেল) প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা ঢাকা থেকে আসবেন, সেটা আমাদেরকে আগে জানাননি। আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে আসার পর আমাদের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন।’
বিকেল চারটার দিকে তদন্ত কর্মকর্তা তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর অফিসে গিয়ে কথা বলেন।

‘মামলার অগ্রগতি বলতে শুধুই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন’

তনুর পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, গত ৯ বছরে এই হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি বলতে ‘তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন’ ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৯ বছরে মামলার অগ্রগতি বলতে শুধুই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন। আমরা এসব নাটক আর দেখতে চাই না। খুনিদের বিচার চাই। আমার মেয়ে কবরে, আর খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে—এ কথা ভাবতেই কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।’

তনুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর শুরুতে থানা–পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা পায়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পিবিআইয়ের ঢাকা সদর দপ্তরে হস্তান্তর করে সিআইডি। প্রায় চার বছর মামলাটি তদন্ত করেছেন পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন মো. তরিকুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে খোঁজাখুঁজি করে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপের মধ্যে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। পরদিন তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।

২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এ ছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে ওই সময়ে তাঁদের নাম গণমাধ্যমকে জানায়নি সিআইডি।

আরও পড়ুনতনু হত্যার ৯ বছর: বিচার না পাওয়ার শঙ্কা মা–বাবার ২০ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনতনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আড়াই বছর পর তৎপর পিবিআই, মামলার এক সাক্ষীকে তলব২৪ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ