Samakal:
2025-04-08@17:16:24 GMT

বিশ্ব বইমেলার আসরে

Published: 6th, March 2025 GMT

বিশ্ব বইমেলার আসরে

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা পৃথিবীর প্রাচীনতম বইমেলার মর্যাদা লাভ করেছে। শুধু বইমেলা নয়, বইয়ের উৎপত্তির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ফ্রাঙ্কফুর্টের নাম। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের অধিবাসী জোহানেস গুটেনবার্গ [১৪৪০-৫০] কালের মধ্যে ছাপাখানা উদ্ভাবন করেন। তখন থেকেই বইয়ের অস্তিত্বের সূচনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে আধুনিক ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন হয়েছিল প্রায় ৫০০ বছর আগে ১৪৬২ সালে। তবে শুধু বইমেলা নয়, ব্যাংক ও বারবনিতার জন্যও ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর বিখ্যাত। মহাকবি গ্যোটের জন্ম এই শহরে, তেমনি ধনকুবের রথসচাইল্ড পরিবারের আদি নিবাস এখানে।
মেলার জার্মান প্রতিশব্দ হলো মেসে, সারা বছরই কোনো কোনো মেলা চলে, অক্টোবরের গোড়ায় বুক মেসে। এটাই এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ বইমেলা। পাঁচ দিনের এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে প্রায় তিন লাখ অতিরিক্ত লোকের সমাগম ঘটে।
বিশ্বনন্দিত এই বইমেলায় আমার অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে। সে বছর ছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ৭৫তম আসর। এবারের অতিথি দেশ স্লোভেনিয়া। মেলায় ১০২টি দেশের ৭ হাজার ৩০০ প্রকাশনী সংস্থা অংশগ্রহণ করে। এবারের বইমেলা ছিল শারদোৎসবের কালে। শরতের সৌন্দর্যের কোল থেকে হঠাৎ যেন নিজেকে আবিষ্কার করলাম ইউরোপীয় শীতের ধূসর প্রাঙ্গণে। কনকনে শীতকে সঙ্গী করে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি আমরা গেলাম নির্ধারিত বাসভবনে। আমরা মানে তিনজন। হাড়কাঁপানো শীত ও পাকস্থলী কাঁপানো ক্ষুধা দুয়েরই নিবৃত্তি ঘটল কিছুক্ষণের মধ্যে। 
পরদিন বিকেলে নির্ধারিত সময়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বইমেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সরকারপ্রধান, লেখক, প্রকাশক, পাঠক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের কোলাহলে মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। বিশাল মিলনায়তনে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়। বইমেলার আয়োজক কমিটির প্রেসিডেন্ট, জার্মানির সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও বিভিন্ন দেশের লেখক এ বইমেলার তাৎপর্য তুলে ধরে চমৎকার বক্তব্য দেন। জার্মানির একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন। তাঁর অসাধারণ উপস্থাপনা অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। অতিথিদের উদ্দেশে তিনি একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, হোয়াট ইজ দ্য রোল অব বুক ইন দিস ডিফিকাল্ট টাইম? মাত্র কয়েকদিন আগে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাসের রক্তাক্ত সংঘাত শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছিল বইমেলার উদ্বোধনী আসরেও। নজিরবিহীনভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে জড়িয়ে পড়েন বক্তারা। এমনকি বক্তার বক্তব্যের মাঝখানে দর্শকসারি থেকে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গিয়েও কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। আয়োজক কমিটির প্রতিনিধি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, তারা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। 
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। অতিথি দেশ স্লোভেনিয়ার শিল্পীরা দৃষ্টিনন্দন নৈপুণ্যে তাদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপস্থাপন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ছিল আকর্ষণীয় পানাহার পর্ব। এরপর অতিথি দেশ স্লোভেনিয়ার জন্য নির্ধারিত হলরুমে দর্শনার্থীদের প্রবেশ। মঞ্চে বাজছে স্লোভেনিয়ার নিজস্ব বাদ্যযন্ত্রে সুরের লহরি। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের আড্ডা চলছে। সেখানেই দেখা হয়ে গেল আয়োজক দেশ জার্মানির সম্প্রচার ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী এবং স্লোভেনিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে। দু’জনই নারী এবং তাদের চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। স্লোভেনিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রী অপেক্ষাকৃত তরুণ ও প্রিয়দর্শিনী। তাদের দু’জনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনে তারা আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তারাসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা উদ্বোধনের দিন পার হলো। পরের দিন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বসে সিংহভাগ সময় পার হলো। প্যাভিলিয়নে ঘুরতে আসা বিভিন্ন দেশের লেখক, পাঠক, সাংবাদিক বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বই সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করেন। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে অনেকটা সময় অতিবাহিত হলো।
আমাদের প্যাভিলিয়নের মুখোমুখি ছিল সিঙ্গাপুরের প্যাভিলিয়ন। কয়েকজন উজ্জ্বল তরুণ-তরুণী সেই প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে ছিলেন। প্রায়ই তাদের সঙ্গে দৃষ্টিবিনিময় ও কথার আদান-প্রদান চলছিল। একই সারিতে ছিল ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ আরও কয়েকটি দেশের প্যাভিলিয়ন। বিশ্বসেরা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা অসাধারণ বইয়ের সম্ভার নিয়ে নিজেদের গর্বিত উপস্থিতি তুলে ধরেছিল। আয়োজক দেশ জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নে নানা বিষয়ে নিয়মিত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন ভবনে, ভিন্ন ভিন্ন ফ্লোরে সুবিশাল পরিসরে স্থান পেয়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা। প্রায় চার মিলিয়ন বর্গফুটের আবদ্ধ স্থানে এই আয়োজন। প্রতিটি দেশ ও প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়নে গিয়েছি। সবখানে বসতে পারিনি, ভালোভাবে বই দেখতে পারিনি। যেখানে ভালো লেগেছে সেখানে বসেছি, কথা বলেছি। বলা বাহুল্য শুধু বইয়ের আকর্ষণে নয়, মানুষের আকর্ষণেও।
ফুটবল খেলায় বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের কোনো অবস্থান না থাকলেও ফুটবল উন্মাদনায় বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে থাকবে। বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল শতকোটি মানুষের আবেগের নাম আর্জেন্টিনায়। বাংলাদেশেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা এই দেশের ফুটবলারদের। ম্যারাডোনা থেকে মেসি– যার যার সময় সবচেয়ে বড় ফুটবলারের নাম। আর্জেন্টিনার প্যাভিলিয়নে ঢুকে তাদের প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে পরিচিত হলাম। আর্জেন্টিনার প্রতি আমার পরিবার ও দেশের গভীর অনুরাগের কথা জেনে তারা আনন্দিত হলেন। কয়েকটি বই হাতে নিয়ে ঘ্রাণ অনুভব করলাম। বাংলা সাহিত্যের মহত্তম প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের নামও জড়িয়ে আছে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সুবাদে। কখনও আর্জেন্টিনা যেতে পারব কিনা জানি না, কিন্তু আর্জেন্টিনার নাগরিকদের সান্নিধ্য পেয়েছি, এটিই-বা কম কী! 
ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলিসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা হলো। ফুটবল খ্যাতিতে এই দেশগুলোও উজ্জ্বল। বিশ্বের বৃহত্তম এ বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটি আক্ষেপ খুব তীব্র হচ্ছিল। কত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বই নজর কেড়েছে। কিন্তু সেই বই কেনার উপায় নেই। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা মূলত প্রদর্শনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকাশক ও বিপণনকারীরা এখানে আসেন। অনুবাদ ও বইয়ের স্বত্বের জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হন।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে এককথায় বলা যেতে পারে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন বুক’। মাত্র একটি ক্ষেত্রে এত বিচিত্র ধরনের শস্য এক অনন্য বিস্ময়। বিভিন্ন জাতির ও ভাষার লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রকাশক এবং বইপ্রেমী পাঠকের অন্তহীন মিলনমেলা। জ্ঞানের কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই। মানবজ্ঞানের সমৃদ্ধ ভান্ডার যেন খণ্ড খণ্ড করে সমগ্র মানবজাতির জন্য সাজানো।  v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন র বইম ল র মন ত র র জন য উপস থ ফ টবল বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

সবজিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন এক কৃষক। রাস্তার পাশের জমিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের সঙ্গে মাজরা ও লাল পোকা দমনে ব্যবহার করছিলেন থায়ামেথোক্সাম (২০%) ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল (২০%) গ্রুপের কীটনাশক। কিছুদূর এগিয়ে সাধুহাটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ক্ষেতে ফল ছিদ্রকারী পোকামাকড় দমনে পানির সঙ্গে এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক মেশাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ক্ষেতে স্প্রে করেন।
এসব কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় দেওয়া হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি দুই কৃষক। কিছুদিন ধরে সদর উপজেলার নগরবাথান, সাধুহাটি, হলিধানী, পবহাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন অসংগতি পাওয়া গেছে। কৃষক জানিয়েছেন, নিজেদের ধারণা ও দোকানির পরামর্শে এসব স্প্রে করেন তারা। এক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা, প্রয়োগ ও নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানও মানা হয় না। এতে প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে করছেন তারা।
সবজি তোলার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না সময়ের ব্যবধান। হাতেগোনা কিছু কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করছেন। দরিগোবিন্দপুর গ্রামের চাষি আল মমিন প্রায় এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে এক সপ্তাহ পর পর ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি ওষুধ (কীটনাশক) দিতে হয়। গরমের সময় প্রায় প্রতিদিনই দিতে হচ্ছে। স্প্রে করার এক থেকে দু’দিন পর বাজারজাত করেন সবজি।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বেগুন ৩২০ হেক্টর, টমেটো ১৭০, শিম ৮৫, লাউ ২৫০ হেক্টরসহ অন্যান্য সবজি রয়েছে। ধানের আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে। এসব ফসলে আইসোসাইক্লোসেরাম, এবামেকটিন, ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল, থায়ামেথোক্সামসহ নানা গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
বোতলের লেবেল বা প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগুনে ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে আইসোসাইক্লোসেরাম ১৬ লিটার পানিতে ৯ দশমিক ৬ মিলি ব্যহারের নিয়ম রয়েছে। কৃষক ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। এটি প্রয়োগের অন্তত ১৪ দিন পর সবজি সংগ্রহের কথা থাকলেও কৃষক দু-এক দিন পরই বাজারজাত করেন।
টমেটোর পোকামাকড় দমনে ১৬ লিটার পানিতে ১৯ দশমিক ২ মিলি এবামেকটিন মিশিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ লিটার স্প্রে করার নিয়ম। কৃষক প্রতি ১৬ লিটারে ১৬ মিলি ব্যবহার করছেন। সাত দিন অন্তর এটি ব্যবহার করতে হয়। এটি প্রয়োগের ২১ দিন পর ফল সংগ্রহের নির্দেশনা থাকলেও সাত দিনে সংগ্রহ করার তথ্য মিলেছে। ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামেথোক্সাম গ্রুপের কীটনাশক ১৬ লিটার পানিতে ৮ মিলি মেশানোর কথা থাকলেও কৃষক ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। অনুমোদিত মাত্রায় এটি প্রয়োগ করলে দু’দিন পর বেগুন ও টমেটো সংগ্রহ করা যাবে। ১৪ দিন পর সংগ্রহ করা যাবে শিম।
এক সপ্তাহ পর পর স্প্রে না করলে মাজরা পোকা দমন হয় না বলে দাবি সাগান্না এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদের। তিনি বলেন, ৮-১০ বছর আগের তুলনায় এখন পোকার সংক্রমণ হয় বেশি। কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম দোকানি ও কেম্পানির লোকদের কাছ থেকে নেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও দেন। টমেটো চাষি রাশেদুল ইসলামের ভাষ্য, স্প্রে করার এক সপ্তাহ পর সবজি তুলে বাজারজাত করেন। তাঁর দাবি, এতে বিষের প্রতিক্রিয়া থাকে না। এবামেকটিন ১৬ লিটার পানিতে ১৬ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করেন। কৃষি বিভাগ থেকেও মাত্রা বলে দেওয়া হয়।
থায়ামেথোক্সাম ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল গ্রুপের কীটনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ধানে স্প্রে করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির উপকারী জীবাণুও মরে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিমিত ব্যবহারে পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীল ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে স্প্রে করলেও বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ।
জানা গেছে, জেলায় পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান আছে ২ হাজার ৫৮৮টি। এ লাইসেন্স দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়। উপজেলার বহাটি বিশ্বাসপাড়ার কীটনাশক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধি কিংবা গায়ের নির্দেশনার ভিত্তিতেও কৃষককে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলা হয়।
কৃষককে উঠান বৈঠক বা মাঠে গিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান একটি কোম্পানির জেলা বিপণন কর্মকর্তা সুবোধ বকশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাত্রা মানতে বললেও অনেক সময় কৃষক বিশ্বাস করেন, বেশি দিলে কাজ করবে। তখনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
কৃষকদের ফসলে পোকার ধরনভেদে মাত্রা বলে দেওয়া হয় বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী। তিনি বলেন, অনেক কৃষক দোকান থেকে শুনে ও নিজেদের মতো করে স্প্রে করেন। এতে মাত্রা ঠিক না থাকায় পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীলতা বাড়ে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, চাহিদামতো উৎপাদনে ও চাহিদা পূরণে সবজি চাষে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। সেটি নির্দেশনা মেনে হতে হবে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাজারজাত করলে মানবদেহের ক্যান্সারসহ জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান মেনে সবজি বাজারজাত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ফলিত পুষ্টি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারটান) ঝিনাইদহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সোনিয়া শারমিন। তিনি বলেন, এ নিয়ম মানলে সেটি নিরাপদ হবে। সবজি বা ফল খাওয়ার আগে এক লিটার পানিতে দুই চামচ লবণ ও চার চামচ ভিনেগার দিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কীটনাশক চলে যায়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ