কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি ও সেমিস্টার ফি কমানোর দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
Published: 6th, March 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (সম্মান) ভর্তি ও সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশসহ অন্যান্য বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে স্বাক্ষরনামাসহ এ–সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির থিয়েটার নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের সামনের সড়কে গণস্বাক্ষর নেওয়া হয়।
উপাচার্য বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমাদের জন্য অতিরিক্ত ফি বহন করা কষ্টসাধ্য। বার্ষিক আয় বাড়ানোর কথা বলে শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিক ধকল বাড়ানোর বিষয়টি অমানবিক। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আমরা তাগিদ জানাই। শিক্ষার্থীদের জীবন পরিচালনা সহজ করার জন্য সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশ কমানোর জোর দাবি জানাই। পাশাপাশি স্নাতকে ভর্তি ফি অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে, সেখান থেকেও ৪০ শতাংশ কমানোর দাবি জানাই। একই সঙ্গে বর্ধিত সব ফি কমানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্নাতক প্রথম বর্ষে ফি বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বর্ষে ৫৫০ টাকা। স্নাতকোত্তরে (বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসায় ও আইন) অনুষদের ভর্তির ফি আগে ৭ হাজার ৮০০ টাকা ছিল, সেটি বাড়িয়ে ৮ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে। হল ফি ১০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। স্নাতকের নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও প্রায় দুই হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।
থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হান্নান রাহিম বলেন, ‘২০১৮ সালে থিয়েটারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন খাতে ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আজকে আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। বার্ষিক আয় বাড়ানোর নাম করে শিক্ষার্থীদের ওপর বিপুল অর্থের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ান, শিক্ষার্থীদের ওপর কোনোভাবে জুলুম করবেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম রকল প কম ন র র জন য বর বর
এছাড়াও পড়ুন:
কেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যটির অর্থ, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’ যে কাজটি আমরা করব, বা করতে চাই, তা যে মহান আল্লাহর নামে সম্পাদন হচ্ছে, এটা বলাই এই বাক্যের উদ্দেশ্য। সুরা তাওবা ছাড়া কোরআনের প্রতিটি সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর নামে’ বাক্যটি আছে।
নবী নুহকে (আ.) আল্লাহ জাহাজে ওঠার আদেশ দেন। কোরআনে আছে, তখন ‘তিনি [নুহ] বলেন, এতে ওঠো, আল্লাহর নামে যার গতি ও স্থিতি হয়। আমার প্রতিপালক তো ক্ষমা করেন দয়া করেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪১)।
প্রথম ‘বিসমিল্লাহ’
চিঠিতে বা বাণীতে প্রথম বিসমিল্লাহ লিখেছেন সুলাইমান (আ.)। কোরআনে আছে, সাবার রানি বললেন, ‘নিশ্চয় এটা সুলাইমানের কাছ থেকে আসা [চিঠি]। তাতে লেখা, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’’ (সুরা নমল, আয়াত: ৩০)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) লিখেছেন, ‘এই আয়াতে তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। এর একটি হলো, চিঠি বা বার্তায় ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা। আয়াতের ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রেরকের নামের পরে বিসমিল্লাহ লেখা ফকিহরা বৈধ বলেছেন। তবে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে চিঠি, বার্তা বা বাণীর শুরুতে প্রথমে বিসমিল্লাহ লেখা উত্তম।’ (তাফসিরে কুরতুবি, সুরা নমল, আয়াত: ৩০)
আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিসমিল্লাহ’র আগে
ইসলামের প্রথম দিকে রাসুল (সা.) লিখতেন ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা। সুরা নমলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পূর্ণাঙ্গ বাক্য নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি সেটাই লেখার প্রচলন ঘটান। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পুরোটা ঐতিহাসিক মদিনা সনদেও লেখা হয়েছিল। সমকালীন রাজা-বাদশাহদের কাছে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা চিঠি পাঠিয়েছেন মহানবী (সা.)। হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রেও তিনি পুরো বিসমিল্লাহ লিখতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অবিশ্বাসীদের আপত্তির কারণে পরে ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লেখা হয়। (তাফসিরে রুহুল মাআনি; আহকামুল কোরআন)
বিসমিল্লাহ বলার বিধান
‘বিসমিল্লাহ’ বলে সব শুরু করা সুন্নত। ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো, যেকোনো ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা। কোরআনে আছে, ‘আর যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা তোমরা খেয়ো না, কেননা, তা তো অনাচার । আর শয়তান তো তার বন্ধুদের উসকানি দেয় তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করতে। যদি তোমরা তাদের কথামতো চল তবে তোমরা তো অংশীবাদী হয়ে যাবে। (সুরা আনআম, আয়াত: ১২১)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ওই কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয়; তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৪০)
রাফি ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত, জুল-হুলাইফায় অবস্থানকালীন একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি বাঁশের ধারালো ফলা দিয়ে জবাই করব? রাসুল (সা.) বললেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যা জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে; তা আহার করো। (বুখারি, হাদিস: ৩,০৭৫)
আরও পড়ুনকাজের শুরুতে কেন বিসমিল্লাহ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘বিসমিল্লাহ’ ভুলে গেলে
ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো, ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা খাওয়া ‘হালাল’ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাওয়া শুরু করে, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। আর যদি সে (খাওয়ার শুরুতে) বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে সে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫,১০৬)
৭৮৬ মানে কী
প্রথমে মনে রাখতে হবে, ‘৭৮৬’ বিসমিল্লাহর বিকল্প নয়। বিসমিল্লাহ উচ্চারণে কাজে বরকত আসার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হয়। পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতও পালন হয়। বিভিন্ন নবী-রাসুলসহ সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছেন এবং লিখেছেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর পরিবর্তে অনেকেই ‘৭৮৬’ সংখ্যার ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বলেন, যেহেতু ‘বিসমিল্লাহ’ নির্মিত এবং আরবি বর্ণ ‘বা’, ‘সিন’ ও ‘মিম’-এর সংখ্যা মানের যোগফল ‘৭৮৬’। কিন্তু ইসলামের মূলনীতির আলোকে এ ব্যবহারের কোনো বৈধতা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এর মাধ্যমে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ ও লেখার সওয়াব তো অর্জিত হবেই না । (আহসানুল ফতোয়া)
আরও পড়ুনবিসমিল্লাহ এর ফজিলত০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫