অপহরণের পর হেনস্তা করে ভিডিও ধারণ, গ্রেপ্তার চার
Published: 6th, March 2025 GMT
রংপুর নগরীতে এক যুবককে অপহরণের পর সমকামে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। সেই ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এসব অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ ঘটনায় বিকেলে মহানগর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী যুবক। গ্রেপ্তার চারজন হলো– শুভ (১৮), নাইম (১৯), জিহাদ (১৮) ও কাদের (১৮)।
অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে রংপুর নগরীর অভিরাম এলাকা থেকে স্থানীয় কিশোর গ্যাং ও দুর্বৃত্তের একটি দল ২৫ বছরের ওই যুবককে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তারা মোবাইল ফোন ও ঘড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার পর মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে ২৫ হাজার ৫০০ টাকাও নেয়। পুরো মুক্তিপণ না পাওয়ায় নাইম ও জিহাদ ভুক্তভোগীকে সমকামিতায় বাধ্য করে এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। পরে তারা হুমকি দেয়, বাকি টাকা না পেলে ভিডিওটি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এর কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেয় দলটি। পরে স্থানীয় থানায় ও সেনাক্যাম্পে অভিযোগ করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর রেফায়েত ওসমানের নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশের যৌথ দল রংপুরের জুম্মাপাড়া সুইপার কলোনি এলাকা থেকে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তাররা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়াতে আসা বন্ধুকে তুলে দিলেন অপহরণকারীদের হাতে, এরপর যেভাবে উদ্ধার
বগুড়া জেলার মো. সবুজের সঙ্গে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবদুল আমিন নামের তরুণের পরিচয় হয় দুই বছর আগে। বন্ধুত্বের সূত্রে একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া-আসাও করতেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল আমিনের আমন্ত্রণে সবুজ তাঁর ভাইয়ের ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে আসেন। বেড়াতে আসার পর বন্ধু সবুজ ও তাঁর ভাইপো মেহেদীকে কৌশলে রোহিঙ্গা অপহরণ চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দেন আবদুল আমিন। এরপর অপহরণকারীরা দুজনকে নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও ধারণের পর সবুজের স্ত্রীর কাছে পাঠায়। এ সময় দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। সবুজের স্ত্রী মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠান। তবে এরপরও দুজনের মুক্তি মেলেনি।
এ ঘটনায় ২ মার্চ মো. সবুজের বোন সুলতানা বেগম থানায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে মো. সবুজ ও মেহেদী হাসান হ্নীলার আবদুল আমিনের বাড়িতে বেড়াতে এসে অপহরণের শিকার হন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি মুঠোফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকার লেনদেনের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ চক্রের অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় অপহৃত সবুজ ও মেহেদীকে। একই সময় অপহরণে জড়িত তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মুক্তিপণের জন্য দেওয়া টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইউসুফ (৩০) ও মৌলভীবাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল (১৯)।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সবুজ ও মেহেদীকে অপহরণকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া আবদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অপহরণকারীর একটি পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপহরণ চক্রের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, অপহরণকারী চক্রের অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার মেরিন ড্রাইভে গাড়িসহ ইজিবাইকের কিশোর চালক মোহাম্মদ ফারুককে (১৬) অপহরণ করা হয়। তাকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফারুক টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের লামার বাজার এলাকার নুরুল হকের ছেলে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ নিয়ে গত ১৪ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২২৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে একই সময়ে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৭ জনকে অপহরণ করা হয়।