কলকাতায় ‘গঙ্গা চুক্তি পর্যালোচনা’ নিয়ে বৈঠক শুরু
Published: 6th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি পর্যালোচনা করতে দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৮৬তম বৈঠক কলকাতায় শুরু হয়। গত সোমবার কলকাতায় পৌঁছনোর পর মঙ্গলবার ফারাক্কায় পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। সেখানে পানি পরিমাপের পরিমাপের পর কলকাতায় ফিরে এসে বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক হোটেলে বৈঠকে বসেন ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমিটির প্রতিনিধিদল।
কলকাতায় আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের হয়ে অংশ নেন জয়েন্ট রিভার কমিশনের (জেআরসিবি) সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তার নেতৃত্বে আছেন জেআরসিবি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিদরী জাহান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, জেআরসিবি সদস্য (কারিগরি কমিটি) মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সিলেট) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কুমিল্লা) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ঢাকা) হাইড্রো ইনফরমেটিক্স এবং ফ্লাড ফোরকাস্টিং বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট প্রকৌশলী ড.
বৈঠকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য ও জল-শক্তি মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ অফিসার শরত চন্দ্র, ফারাক্কা ব্যারেজের জেনেরাল ম্যানেজার আর ডি দেশপান্ডেসহ অন্যান্যরা।
বৃহস্পতিবার বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা পানি কম পাওয়ার কারণে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করেন। পানি কম পেলে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে সেচের সমস্যা হয়। জৈববৈচিত্রের সমস্যা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে সমস্যা হয়। সেগুলো আলোচনায় জানানো হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব মোহাম্মদ আবুল হোসেন এদিনও বলেন, পানি বণ্টন নিয়ে সন্তুষ্ট তারা। তবে, এবছর প্রবাহ কম থাকার জন্য কম পানি পাচ্ছে দুই দেশ।
শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের টেকনিক্যাল বৈঠক। এই বৈঠকে দুই দেশেরই আরো কয়েকজন প্রতিনিধির যোগ দেওয়ার কথা। বৈঠকে নদীর পানি সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি, বন্যা রিপোর্ট, সীমান্ত নদীগুলোকে কেন্দ্র করে দুই দেশের পরিকল্পনা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত সেই সভায় আলোচিত হওয়ার কথা।
বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ (৩৮%) গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল। মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই পানির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছরের। আগামী বছর ২০২৬ সালে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
৩০ বছরের সামগ্রিক চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মে মাস নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সরবরাহের কথা উল্লেখ রয়েছে। ওই চুক্তিতে বলা হয়, নদীতে ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, অবশিষ্ট পানি পাবে বাংলাদেশ। নদীতে ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, অবশিষ্ট পাবে ভারত। আবার ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানি থাকলে তা প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যেই সমান ভাগে ভাগ হবে।
যদিও বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা কিংবা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন মমতা ব্যানার্জি। এমনকি গত বছরের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা তিন পাতার চিঠিতে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে মমতা লিখেছিলেন ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি বুঝতে পেরেছি যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি (১৯৯৬) পুনঃনবীকরণের প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে, কারণ এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এটি এমন একটি চুক্তি, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের নীতিগুলো বর্ণনা করে এবং আপনি জানেন যে রাজ্যের মানুষের জীবন-জীবিকা বজায় রাখার জন্য ফারাক্কা থেকে পাওয়া পানির বিশাল প্রভাব রয়েছে এবং ফারাক্কা ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে যে পানি আসে, তা কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর তার জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্যতা হারাবে।’
একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তিতে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি, একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কলক ত য জ আরস সমস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খান মাসুদের সহচর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী পিতা-পুত্র বাহিনী বেপরোয়া
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যাকারী পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসর বন্দরের আওয়ামী সন্ত্রাসী খান মাসুদের একান্ত সহযোগী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুব ও তার সন্ত্রাসী পুত্রের অনৈতিক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এমন কথা গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর এলাকার মৃত আব্দুল মোতালিব মিয়ার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুব, তার ভাই বাবু, ছেলে রাহিম মিলে নয়ানগর, কল্যান্দি, জিওধরা, আদমপুরসহ কয়েকটি গ্রামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে।
এদের বিরোদ্ধে বন্দর থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। পুলিশ এদের কর্মকান্ড জেনেও ধরছে না। এমনকি ৫ আগষ্টের পর এসব মাদক সন্ত্রাসীর শেল্টার দাতা সন্ত্রাসী খান মাসুদ বিদেশে পালিয়ে গেলেও বয়াল তবিয়তে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে এরা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইয়াবা,ফেন্সিডিল বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছি হাজার হাজার টাকা। মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুবের ছেলে রাহিমের রয়েছে একটি কিশোর গ্যাং বাহিনী। কেউ প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসী রাহিম বাহিনী গোটা এলাকা অস্ত্র প্রদর্শন করে দাবড়িয়ে বেড়ায়। তাই কেউ তাদের বিরোদ্ধে আঙ্গুল তুলতে সাহস পায় না।
মাদক ব্যবসায়ী পিতা ও সন্ত্রাসী পুত্রের কারনে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরাও আতংকে দিন কাটাচ্ছে। এলাকাগুলোতে এই সন্ত্রাসীদের কারনে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আইন শৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটছে। তাই এলাকাবাসী এদের বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে।
আদমপুর এলাকার বিএনপি নেতা ফরিদ হোসেনের ঘনিষ্ট এক ব্যাক্তি জানান, গত ৫ আগষ্টের পূর্বে দেশে যখন স্বৈরাচার সরকারের বিরোদ্ধে ছাত্র জনতা আন্দোলন করছিল সেই সময় আওয়ামী সন্ত্রাসী খান মাসুদের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা ফরিদ হোসেনের বাড়িঘরে হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছিল মাহাবুব ও তার ছেলে মাহিনের সন্ত্রাসী বাহিনী।
এমনকি তারা বন্দর খেয়াঘাটে ছাত্রদের উপর হামলা করেছিল। এখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে মাহাবুব বাহিনী।
সন্ত্রাসী খান মাসুদ বিদেশে বসে এদের নিয়ন্ত্রন করছে। স্বৈরাচারের দোসর মাহাবুব ও তার সন্ত্রাসী পুত্রকে দ্রুত গ্রেফতার করতে আইণ শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করছি।