বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক আশুলিয়া থানার রিয়াজুল ইসলাম হত্যা মামলায় ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেকের চার  দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগ এ আদেশ দেন। এদিন তাকে আদালতে উপস্থিত করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মো.

ওমর ফারুক। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক। এর আগে গতকাল বুধবার রাতে তাকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাকে রিমান্ডে নেওয়া মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ১১টায় আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন রিয়াজুল ইসলাম (৩৮)। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে আনা হলে মৃত্যুবরণ করেন রিয়াজুল।

এম এ মালেক ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমদের কাছে পরাজিত হন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ আওয় ম ল গ ন ত

এছাড়াও পড়ুন:

খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামল

আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও অসহনীয়। চালের ভরা মৌসুম ও শীতের সবজির ভালো সরবরাহ থাকলেও খাদ্যেপণ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের নিচে নামেনি। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি টানা তিন মাস সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে আসার মধ্যেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসে এসে এ হার এক অঙ্কে নেমে এলো। মাসটিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১১ মাস পর এ হার এখন দুই অঙ্কের নিচে। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এপ্রিলে তা বেড়ে হয় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সে ধারা অব্যাহত ছিল। 

সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত ২৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মূলস্ফীতি এর চেয়ে কম ছিল। ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছিল ওই মাসের মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি নিয়ে টানা তিন মাস মূল্যস্ফীতি কমছে। 
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রাম-শহর সব জায়গায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। মাসটিতে গ্রাম এলাকার মূল্যস্ফীতি আগের মাসের ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। শহরাঞ্চলে যা ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। 
বিবিএসের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্বিক এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। মাসটিতে এ খাতের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। 

খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে কিছুটা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। গতকাল সমকালকে তিনি বলেন, সব আমলেই সরকারকে খুশি রাখাই যেন আমলাদের কাজ। বিবিএসের প্রতিবেদনে এমন উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বাজার এখন স্থিতিশীল। বেশির ভাগ পণ্যের দাম আর বাড়েনি। আবার সবজি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম কমেনি। তাহলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমলো কীভাবে? উপরন্তু চাল, তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ক্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হবে বলে জানান তিনি। 
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি জাতীয় অর্থনীতিতে মাথা ব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে এ পরিস্থিতি শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমিয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানি প্রবাহ ঠিক রাখতে আরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘরে নেমে আসবে। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত বছর থেকে মূল্যস্ফীতি হিসাব পদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এখন ২০২১-২২ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হচ্ছে। পণ্য ও সেবার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা মূল্যসূচকে ৭৪৯ ধরনের ৩৮৩ আইটেমের পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৪২২টি পণ্যের বাজারদর হিসাব করা হতো। নতুন হিসাবের আওতায় এসেছে সন্তানের শিক্ষার খরচ, পরিবারের ইন্টারনেটের খরচ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে খাবারের খরচসহ বেশ কয়েকটি খাত। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ