‘সব দিক থেকে সরকারের ব্যস্ততা হলো আরেকটি নতুন শক্তি, নতুন দল গড়ে তুলতে হবে। এই দিকেই সরকারের সব কর্মকাণ্ডের মনোযোগ’—এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। সংস্কারের কথা বললেও সংস্কারের দিকে সরকারের মনোযোগ আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

সিপিবির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ কথা বলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। দিবসটি উপলক্ষে এর আগে সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। কার্যালয়ের নিচে অস্থায়ী শহীদবেদি তৈরি করে গত ৭৭ বছরে আত্মত্যাগকারী দলের নেতা-কর্মীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান সিপিবি নেতারা। এ ছাড়া সারা দেশে পার্টির পতাকা উত্তোলন, সমাবেশ-র‌্যালি-মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

বক্তব্যে সিপিবি সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘অনেকে সবকিছু ’২৪ থেকে শুরু করতে চায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও শেখ হাসিনার বিরোধিতা কি এক? মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা।’ বিভিন্ন ঘটনার জন্য শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী মনোভাব ও স্বৈরতন্ত্রকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘এই যে ওরা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে সাহস দেখাচ্ছে, ’৭২–এর সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দেবে, ৩২ নম্বর ভেঙে দিচ্ছে, লালনের অনুসারীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, মাজার ভেঙে দিচ্ছে, একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে। করতে পারছে কেন? এসবের দায় কার? এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা।’

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে শত্রু ছিল স্বৈরাচার ও স্বৈরতন্ত্র। এরপর আমাদের শত্রু সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ।’

ভোট হলেই পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। তবে ভোটের ধারায় এলে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা যাবে বলে উল্লেখ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। তিনি বলেন, ‘ভোট হলে কিছুটা জবাবদিহির মধ্যে হয়তো আনতে পারব। অপশক্তি, অপকর্ম ঠেকাতে পারব।’

গত সাত মাসে বাংলাদেশে যেসব অপকর্ম হয়েছে, সেগুলোর দায় অন্তর্বর্তী সরকারের বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সম্মতি ছাড়া এসব ঘটনা ঘটতে পারে না। আজকে সংস্কারের নামে আমরা নতুন নাটক দেখতে পাচ্ছি।’

অন্তর্বর্তী সরকার কথা রাখছে না অভিযোগ করে রুহিন হোসেন আরও বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে বসেনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

আলোচনায় নেতারা বলেন, ১৯৯০–এর গণ-অভ্যুত্থান ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে গণতন্ত্র ও বৈষম্য মুক্তির কথা সামনে এলেও এই ধারায় দেশকে অগ্রসর করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রেখেই পথ চলছে। এমনকি বাজারব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টানা যায়নি। জনজীবনে এখনো স্বস্তি ফিরে আসেনি। জানমালের নিরাপত্তাহীনতা চলছে। দখলদারি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ভোটের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা আহ্বান জানান তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হ আলম সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় পৌরসভা চত্বরে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কমিটির আয়োজনে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মশালায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তারেক রহমান। এতে পঞ্চগড় অংশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদসহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিন সকাল ১০টার দিকে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি শুরু হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের সময় পঞ্চগড় ছাড়াও দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ জেলা থেকে কর্মশালায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমরা সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের দাবি-দাওয়া নিয়ে একসঙ্গে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে সামনে নিয়ে যেতে। কোনোভাবেই যেন গণতন্ত্রের উত্তরণ, মানুষের ভোটের অধিকার, মানুষের রাজনৈতিক অধিকার বাধাগ্রস্ত না হয়। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের রাজনৈতিক অধিকার এবং মানুষের ভোটের অধিকার যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। সবকিছু বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত ১৫ বছরে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সমাজে বিভিন্ন প্রকার অধঃপতন শুরু হয়েছে, অনাচার শুরু হয়েছিল।

তারেক রহমান বলেন, আমরা সুযোগ পেলে ৩১ দফার বাস্তবায়ন করব। একইভাবে আমরা যে সংগ্রামে রাজপথে নেমে এসেছিলাম, বিগত পনেরো বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রামে আমাদের বহু নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার হয়েছেন, বহু নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের এই বলিদানকে কোনোভাবে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশে যুদ্ধ না হলে শিশু হত্যা হয় না, কিন্তু জুলাই আগস্ট আন্দোলনে আমরা দেখেছি সেই পলাতক স্বৈরাচারের নির্বিচার অত্যাচারের কারণে এই দেশে একশোর মতো শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এই শিশুদের বলিদান ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু পঞ্চগড়ে দিনভর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনারগাঁয়ে কারুপণ্যের বৈশাখী মেলা
  • সংস্কার কি ‘থাই পাহাড়ের’ মতো স্থায়ী ব্যাপার, প্রশ্ন রিজভীর
  • নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে
  • সংবিধান অর্থবহ করতে বিচার আরও সহজলভ্য হতে হবে: প্রধান বিচারপতি
  • সংবিধান অর্থবহ করতে বিচার আরও সহজলভ্য করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
  • সংস্কার নিয়ে সবক ও শঙ্কা
  • স্মরণসভায় বক্তারা: মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের
  • বিএনপি দেশে সংস্কার শুরু করেছিল শহীদ জিয়ার সময় থেকে: তারেক রহমান
  • যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
  • জব্বারের বলীখেলার মেলা: রাস্তা থেকে দোকান তুলে দিল পুলিশ, বসবে শুধু মাঠে