ইনস্টাগ্রাম
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইফতার রাজনীতিতে দল চাঙ্গা করতে চান নেতারা
তৃণমূল নেতাকর্মীকে আরও চাঙ্গা ও ঐক্যবদ্ধ করতে পুরো রমজানে বিভাগজুড়ে ইফতার মাহফিল আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট বিএনপি। এর মাধ্যমে দল গোছানো এবং নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। কেউ কেউ এই ইফতার মাহফিলকে ভোটের প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছেন।
এ ছাড়া প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও এখন নতুন নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলের নেতাকর্মীকে। বিশেষ করে তারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত। এ কারণে দলকে সংগঠিত করাই মূল কাজ বলে তারা মনে করছেন।
শেখ হাসিনার পতনের আগে সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের। ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে সিলেট বিএনপি। গত সাত মাসে দলে ঘটে গেছে নানা বিতর্কিত ঘটনা। চোরাই চিনিকাণ্ড, পাথর লুট, দলীয় কোন্দলে কর্মীর মৃত্যু, মামলা বাণিজ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের ভরাডুবি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি বাতিল, জেলা ও নগর বিএনপির চার নেতাকে শোকজসহ নানা ঘটনায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ঐক্য না থাকায় এই মুহূর্তে সিলেট বিএনপিতে শৃঙ্খলা নেই। কর্মীরা নেতাদের কথা কোনোভাবেই মানতে নারাজ। দলের চেইন অব কমান্ড অনেকটা ভেঙে পড়েছে।
ফলে ইফতারের মাধ্যমে মাঠ নিজেদের দখলে রাখা, মাহফিল থেকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো করা এবং নির্বাচন কোনোভাবে বিলম্বিত হলে নেতাকর্মীরা যাতে ভেঙে না পড়েন, সেজন্য তাদের ধরে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে জানান নেতারা।
জানা গেছে, বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলটির নেতাদের ইফতার মাহফিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাহফিল সফল করতে সিলেটজুড়ে প্রচারও চালাচ্ছে দলটি। এ জন্য একাধিক টিমও গঠন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দল চাঙ্গা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে সিলেটে বিএনপি নেতাদের ওপর চাপ বেশি। সব স্থান থেকেই তাদের চাপে রাখা হয়েছে। এবার তাদের নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
নগর বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ইফতার মাহফিল এমনভাবে করতে বলা হয়েছে, যাতে সব মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া এবার সাধারণ মানুষকে যেমন সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে, ঠিক তেমনি হাটবাজার, খোলা ময়দানে ইফতার মাহফিল করারও নির্দেশনা রয়েছে।
ইফতার মাহফিল সফল করতে ২ মার্চ নগর বিএনপির আওতাধীন নবগঠিত ছয় থানার আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জরুরি সভা করেন। সভায় সব থানা কমিটির ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম বলেন, তারেক রহমানের ইচ্ছা তাঁর দলের নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হন। তাই সবাইকে এবারের ইফতারে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিভেদ নয়, ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে, দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাদামাটা ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ আহমদ সিদ্দিকী বলেন, অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে টিকে আছেন নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন গণতান্ত্রিক যাত্রা টিকিয়ে রাখতে হলে জনসম্পৃক্তার বিকল্প নেই। এই ইফতার মাহফিল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করা হবে।