রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের যাওয়াকে কেন্দ্র করে একপক্ষের প্রতিবাদী স্লোগান ও পরবর্তী সময়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার পরে আবাসিক এলাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মো. মুশতাক তাহমিদ নামের এমবিএ’র ওই শিক্ষার্থীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। সেখানে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আহত মুশতাক তাহমিদ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকে সাংবাদ সম্মেলন করেন। হামলায় দায় সংগঠনকে না দিয়ে ব্যক্তিকে দিয়েছেন মুশতাক তাহমিদ। এ সময় তার সঙ্গে আরও চার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুশতাক তাহমিদ বলেন, ‘আমাকে ছুরিকাঘাত করা আহমেদ শাকিল ছাত্রদলের নেতা হতে পারে না, সে সন্ত্রাসী। শাকিল যে কাজ করেছে এটা তার ব্যক্তির দায়, এতে ছাত্রদল তার দোষের দায় নেবে না। আমি মনে করি, গতকালের (বুধবার) ঘটনায় ছাত্রদলের কোনো দোষ নেই। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কখনো সংগঠনের হতে পারে না। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাব, শাকিলের দায় আপনারা নেবেন না।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুশতাক বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ঘটনায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে আমি কয়েকজনকে নিজে চিনি। তবে এদের মধ্যে আহমেদ শাকিল ও মাসরুর হামলা করে। এর মধ্যে আহমেদ শাকিল আমাকে ছুরিকাঘাত করে এবং মাসরুর মাথায় কামড় দেয়। এই ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ সেখানে ছিলেন না।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল ভাটারা থানায় আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা যখন মামলা করতে গিয়েছিল, তখন সেখানে আহমেদ শাকিল উপস্থিত ছিল। সে বলেছিল, এমন মামলা তার নামে অনেক হয়েছে, এতে তার কিছু যায় আসে না। পরে ভাটারা থানার ওসি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মামলাটি নেয়নি। থানা থেকে বলা হয়েছে, তাদের ওপর থেকে নির্দেশ আছে যে কারণে মামলা নিতে পারবে না।’ 

মুশতাক তাহমিদ আরও বলেন, আমি মনে করি, ছাত্রলীগ এখন না থাকলেও তারা বিভিন্ন দলের ব্যানারে ঢুকে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি এই ঘটনায় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহম দ শ ক ল য় ছ ত রদল র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

জমজমাট তরমুজ আড়ত দিনে বিক্রি কোটি টাকা

ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরমুজ আসে এ হাটে। একেকটি ট্রাক আড়তে আসতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতারা। হাতে হাতে নামানো হয় তরমুজগুলো। ট্রলার থেকে আড়তে আসে ঝুপরি ভরে। আকার অনুসারে আড়তের সামনে ১০০ থেকে ১৫০টি করে স্তূপ করা হয়। মৌসুমের শুরুতে বেচাকেনায় এভাবে জমে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর আড়তগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তত ১২টি আড়তে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ। ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। পাশেই ধলেশ্বরী নদী। অপর পাশে মুন্সীগঞ্জ প্রবেশের মূল সড়ক হওয়ায় নদী ও সড়কপথে আনা যায় তরমুজ। সামনে এ ফলের আমদানি ও বিক্রি আরও বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাষি ও ব্যবসায়ীরা ট্রলারে তরমুজ ও বাঙ্গি এনে নদীর ঘাটে ভিড়িয়ে রাখেন। এক ট্রলারের ফল বিক্রি করতে অনেকের কয়েক দিনও লেগে যায়। এসব কেনার জন্য মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনাও বাড়ে।
আড়তে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী এলাকার কৃষক গোবিন্দ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, এবার চারা রোপণ মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ২৫ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি ও সারের দাম বেশি। এবার প্রতিটি তরমুজ উৎপাদনে ১০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে। সবে ফল উঠতে শুরু করায় দাম বেশি হলেও সামনে কমে যাবে।
জানা গেছে, আড়তে বড়, মাঝারি ও ছোট তরমুজ পৃথক স্থানে স্তূপ রাখা হয়। সেগুলোকে আকার অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করেন আড়তদাররা। সরেজমিন দেখা যায়, বড় আকারের তরমুজ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিগুলো ৩০০ থেকে ৪০০ এবং ছোটগুলো প্রতিটি ৩০ থেকে ১০০ টাকা। অনেকে কিনে ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। তরমুজের পাশাপাশি বাঙ্গিও বিক্রি হচ্ছে।
আড়ত মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ছয় থেকে সাত বছর আগে দু-একজন আড়তদার এখানে বসা শুরু করেন। সে সময় দু-চারজন ব্যবসায়ী ও কৃষক তাদের উৎপাদিত ফল নিয়ে আসতেন। তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা ছিল কম। গত তিন বছরে পাল্টে গেছে সে চিত্র। ব্যাপকভাবে বেড়েছে বেচাকেনা। আড়ত ও ক্রেতা-বিক্রেতাও বেড়েছে। প্রতিদিন বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা থেকে আসে অন্তত এক লাখ পিস তরমুজ। ভরা মৌসুমে এ সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ, কুমিল্লা, চাঁদপুর থেকে আসে বাঙ্গি।
কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তরমুজ আনেন আড়তে। আড়তদাররা এসব ফল স্তূপ করে ডাকেন ক্রেতাদের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা এ সময় ভিড় করেন। একজন ডাকতে শুরু করেন তরমুজের দাম। বড়গুলো প্রথমে ৪০০ টাকায় ডাক শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ দামে যিনি কিনতে রাজি হন, তার কাছে একসঙ্গে একেক স্তূপের ১০০ থেকে ১৫০টি ফল বিক্রি করেন আড়তদার।
বাজারে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে বলে জানান কৃষক রকি মিয়া। তাঁর ভাষ্য, এ বছর বৃষ্টিতে অনেক চারা মরে যাওয়ায় অন্যান্য বারের তুলনায় তরমুজ কম হয়েছে। টঙ্গিবাড়ীর বালিগাঁও বাজারের বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, ‘আমি তিন দিন পর পর এ বাজারে আসি তরমুজ কিনতে। এখানে সারাদিন ফল পাওয়া যায়। সব আকারের তরমুজ পাওয়া যাওয়ায় দূর থেকে পাইকাররা কিনতে আসেন।’
১০-১২টি আড়তে চলতি মৌসুমে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মায়ের দোয়া আড়তের মালিক মো. জনি গাজী। তিনি বলেন, নদী ও সড়ক পথে তরমুজ আসে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি। সব আড়ত মিলে দিনে অন্তত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ