পারভেজের সেঞ্চুরি ও লিটন ফ্লপ, আবাহনীর জয়
Published: 6th, March 2025 GMT
জয়ে ফিরেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল দল আবাহনী লিমিটেড। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ, ২০২৫) আবাহনী হারিয়েছে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে। তাদের জয়ের নায়ক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১২৬ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলেন। তার সেঞ্চুরির ওপর ভর করে আবাহনী ৬ উইকেটে ৩২৩ রান করে। জবাব দিতে নেমে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব রাকিবুল হাসানের স্পিনে পরাস্ত হয়ে ১৬১ রানে গুটিয়ে যায়। ১৬২ রানের বিশাল জয় পায় লিগের বর্তমান শিরোপাধারীরা।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে আবাহনীতে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন পারভেজ ও জিসান। ৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তারা। জিসান ৩৪ রানে ফেরার পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২১ বলে ৯ রানে আজিজুল হাকিম তামিমের বলে বোল্ড হন। সেখান থেকে মোহাম্মদ মিঠুন ও পারভেজ জুটি বেঁধে দলের রান নিয়ে যান চূঁড়ায়।
আরো পড়ুন:
৩২ বলে ৭৮ রানের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে আলাউদ্দিন জেতালেন পারটেক্সকে
মুশফিকময় দিনে অঙ্কনের ফিফটি, হৃদয়ের ঝড়
১৭১ রানের জুটি গড়ার পথে দুজন পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। পারভেজ সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারলেও মিঠুন আটকে যান ৭২ রানে। ৬৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় মিঠুন ইনিংসটি খেলেন। পারভেজ ১২৪ বলে করেন ১২৬ রান। ৯ চার ও ৮ ছক্কায় সাজান তার ইনিংসটি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি।
আবাহনীর ইনিংসের শেষটা দারুণ করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহফুজুর রাব্বী। মোসাদ্দেক ২৮ বলে ৩৫ রান করেন ৩ চারে। মাহফুজুর ১৪ বলে ২৮ রান করেন ৩ চার ও ২ ছক্কায়। বল হাতে গুলশানের হয়ে ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন আসাদুজ্জামান পায়েল। ২ উইকেট পেয়েছেন আজিজুল হাকিম তামিম।
জবাব দিতে নেমে গুলশানের ভরসা ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু রান পাননি ডানহাতি ওপেনার। ২১ বলে ১ ছক্কায় ১৪ রান করে বিদায় নেন। স্পিনার রাকিবুলের বলে রাব্বীর হাতে ক্যাচ দেন। আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার ১৮ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে রাখেন অবদান। তিনে নেমে খালিদ হাসান দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন। বাকিরা এই ম্যাচে ছিলেন নিষ্প্রভ। তাতে বড় পরাজয়কে সঙ্গী করে গুলশান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া ইফতিখার হোসেন ইফতি এই ম্যাচে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ দিকে নিহাদুজ্জামানের ৩৫ রানে পরাজয়ের ব্যবধান কমায় গুলশান।
স্পিনার রাকিবুল ৪০ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন। ৩ উইকেট নেন পেসার মৃত্যুঞ্জয়।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
দিরাই-শাল্লায় এগারো বিলে ১০ কোটি টাকার মাছ লুট
বিএনপি নেতাদের অংশীদার করেও জলমহাল রক্ষা করতে পারছেন না দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগ ঘরানার ইজারাদাররা। গত ছয় দিনে সুনামগঞ্জের এই দুই উপজেলার ১১ বিলে লুটপাট হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালেও হালুয়া খাটুয়া ও দিরাই চাতল বিল লুট করেছে কয়েক হাজার মানুষ। এসব বিল থেকে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে দাবি জলমহাল ইজারাদারের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিরাইয়ের কামান বিলে মাছ লুটপাটের মধ্য দিয়ে জলমহাল লুটের উৎসব শুরু হয় দিরাই-শাল্লা উপজেলায়। কাগজপত্রে এই বিলের ইজারাদার চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির নামে ইজারা থাকলেও এই জলমহালের মালিক হিসেবে পরিচিত দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয় কুমার বৈষ্ণব।
সম্প্রতি কামান বিলের জলমহালের মাছ আহরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল ইজারাদার পক্ষ। এর মধ্যেই শুক্রবার ভোরে পাশের নোয়াগাঁও, কার্তিকপুর, মাইতি, হাসনাবাদ, শ্যামারচর, আটগাঁও, মির্জাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে জলমহালে মাছ ধরা শুরু করে।
এভাবে গেল ছয় দিনে একে একে উদীর হাওর (মুরগা নদী), সউত্বা, জয়পুর-আতনি, বেতইর নদী, লামা বেতইর, হালুয়া-ঘাটুয়া, দিরাই-চাতল, কলকলিয়া, বড়গাঁও-ইয়ারাবাদ গ্রুপ ও জোয়ারিয়া বিলে লুটতরাজ চালায় তারা।
চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সুধীর বিশ্বাস জানান, বছরে এ জলমহালে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দেন তারা। এবার নিয়ে ছয় বছর হয় বিলের ইজারায় রয়েছে তাদের সমিতি। ইজারা নিতে অনেক টাকার প্রয়োজন, এজন্য ‘বছর-বছর চুক্তিতে’ আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ মিয়া ও জয় কুমার বৈষ্ণবকে শরিক রেখেছেন তারা। শুক্রবারের ঘটনায় বিল থেকে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উদীর হাওরের ইজারাদার সুধীর রঞ্জন দাস বলেন, ১৮ বছর হয় বিলের ইজারাদার তাদের সমিতি। এ বছর ৯০ লাখ টাকা ইজারামূল্য ছিল। ইতোমধ্যে এক কোটি টাকার মাছ তারা আহরণ করেছেন। লুট হয়েছে কমপক্ষে তিন কোটি টাকার মাছ। এই লুটপাটে কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষ ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থককেও জলমহাল লুটপাটে অংশ নিতে দেখা গেছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের জলমহালে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের পুঁজি রয়েছে।
জয়পুর-আতনি জলমহালের ইজারাদার জয়পুর আতনি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। চলতি বছর ভ্যাটসহ ৮৬ লাখ টাকায় জলমহাল ইজারা নেয় এই সমবায় সমিতি। গত কয়েক দিনে এখান থেকে ৫ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে বলে দাবি করেন ইজারা সমিতির সভাপতি বিকাশ রঞ্জন দাস। জানা গেছে, এই বিলে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়।
শাল্লার আটগাঁওয়ের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রাহুল দাস জানালেন, তাদের এলাকার লুট হওয়া বিলের ইজারাদার সমিতির সঙ্গে অংশীদার ছিলেন দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর মিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান কাজী।
বিভিন্ন জলমহাল লুটের ধরনের ঘটনাকে বিগত সময়ে সরকারদলীয়দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
দিরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দিরাই-শাল্লার সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই মইনুদ্দিন চৌধুরী মাসুক বলেন, গেল ১৫ বছর যারা অত্যাচার-নির্যাতন, শাসন-শোষণ করে মানুষকে অতিষ্ঠ করেছিল, তাদের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ নেতাদের জলমহাল লুটে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে সবাই।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে দিরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলের ভাষ্য, জলমহাল লুট শুরু করেছে অন্য উপজেলার লোকজন। পরে দিরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ উৎসবের মতো পলো বাওয়া শুরু করে। এমনও হয়েছে, ৫০০ টাকার মাছ ধরতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেছেন উৎসাহীরা।
লুটপাটে বিএনপির কেউ জড়িত নয় দাবি করে তাহির রায়হান চৌধুরী বলেন, জলমহাল লুটের ঘটনায় দিরাই-শাল্লার মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। জলমহালের ইজারায় শরিক বিএনপির কেউ কেউ থাকতেই পারেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, টাকা থাকলে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা অপরাধের কিছু দেখছি না।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জলমহাল লুটপাটের ঘটনায় ইজারা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইজারাদাররা যদি মামলা করেন, আমরা আইনানুগভাবে শক্ত ব্যবস্থা নেব। যাতে এ ধরনের দুষ্কৃতিকারীরা ছাড় না পায়। লুটের আশঙ্কায় থাকা অন্য বিলগুলোর দিকে নজর রাখতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গ্রাম পুলিশকে বলা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেউ যাতে এ ধরনের ঘটনায় যুক্ত না হন এবং রাষ্ট্রের রাজস্বের ক্ষতি না করেন।