সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিকাশ ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে তিন কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুধীজন, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। 

আসিফ মাহমুদ বলেন, “কুষ্টিয়া সংস্কৃতি চর্চার একটি অন্যতম কেন্দ্র। কুষ্টিয়ায় সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিকাশে এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজ ও জরুরি কাজের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের জন্য তিন কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা করছি।” 

তিনি বলেন, “ক্রীড়া সংস্থাকে কারো পার্টি অফিস বানাতে দেব না। প্রকৃত ক্রীড়া অনুরাগী ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের মাধ্যমে আগামীতে ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত হবে। তারা প্রত্যেকটি ক্রীড়া সংস্থার কমিটিকে পার্টি অফিস বানিয়ে রেখেছিল। সে কারণে সার্বিকভাবে ক্রীড়ার কোনো উন্নতি হয়নি। টুর্নামেন্টের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। আমরা শুধু কমিটি করেই ক্ষান্ত হব না। তারা কীভাবে কী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছে কি-না, সেই সব রিপোর্ট নেব এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। বিপ্লবোত্তর সময় পার করছি। পৃথিবীর কোনো দেশেই জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো উদাহরণ নেই। ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যেকটা ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে।”

দেশের রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা গণহত্যায় জড়িতের বিচারসহ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সার্বিকভাবে নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে সহযোগিতা করবেন।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো.

তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান। 

এর আগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা শহীদ আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান। সেখানে তিনি আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন। পরে আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আবরার ফাহাদ জামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শিল্পকলা একাডেমির মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আবর র ফ হ দ উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর এ ঘোষণার পর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এক পর্যায়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় ও ৩ মার্চ সারাদেশে হরতালের ডাক দেন। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের বিশাল সমাবেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেখানেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেওয়ার কথা জানান।

৭ মার্চ বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে ওঠেন। ফাল্গুনের সূর্য তখনও মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। দরাজ কণ্ঠে তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ প্রায় ১৮ মিনিটের ভাষণ। ভাষণে বঙ্গবন্ধু সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভায়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিতে চাই– আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’

বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও এটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল। এই ভাষণে ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে ভাষণটি ছিল লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পথনির্দেশ।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ