ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা তথা বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সাম্প্রতিক ভাষণে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন ভোটে তাঁর প্রশাসন রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্কসংক্রান্ত হুমকি দীর্ঘদিনের মৈত্রী সম্পর্ক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সহযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এভাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও আত্মকেন্দ্রিক নীতিতে চলে যায়, তাহলে বিশ্বশৃঙ্খলায় গুরুতর প্রভাব পড়বে। রাশিয়া এই সুযোগ নিয়ে ইউরোপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। এমনকি তারা ইউরোপে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আধিপত্য কায়েম করতে পারে।

এ অবস্থা তৈরি হলে ইউরোপকে তখন আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই নিতে হবে; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা তখনো গুরুত্বপূর্ণ থাকবে।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অনুপস্থিতির সুযোগে চীনও এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে। কারণ, বেইজিং ইতিমধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এশিয়ার দেশগুলো এ পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সতর্ক রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরস্পর যুক্ত। তাই একটি দেশের পরিবর্তন অন্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার শক্তির ভারসাম্য, আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নীতিমালা এবং যৌথভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা নির্ভর করে।

একটি বিশ্বব্যবস্থা ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হতে পারে। তাতে সামগ্রিক অবস্থায় বড় ধাক্কা লাগে না। তবে নেতৃত্বদানকারী শক্তির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যদি আচমকা বড় পরিবর্তন আসে, তাহলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে।

এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তাই রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের মধ্যকার শৃঙ্খলাব্যবস্থাকে আসলে একটা আপেক্ষিক ব্যাপার বলা যেতে পারে।

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আগে এই শৃঙ্খলা সাধারণত বলপ্রয়োগ ও যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতো এবং এটি আঞ্চলিক সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল (যেমন চীন ও রোমান সাম্রাজ্য)।

শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়টি মূলত নির্ভর করত ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর; নীতি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফরাসি বিপ্লব রাজতান্ত্রিক নিয়মকানুন ও ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচলিত বিধিনিষেধগুলো ভেঙে দেয়। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়; বিশেষ করে মস্কো থেকে তাঁর পিছু হটার পর এই ব্যর্থতার শুরু হয়েছিল। তবে তাঁর সেনাবাহিনী ইউরোপের অনেক প্রচলিত ভূখণ্ডের সীমান্ত পরিবর্তন করেছিল এবং নতুন নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল।

উদাহরণস্বরূপ, রোমান ও পারস্য (বর্তমান ইরান অঞ্চলের) সাম্রাজ্যে পাশাপাশি সীমানা থাকায় তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধ হতো। কিন্তু রোমান সাম্রাজ্য চীন এবং মেসোআমেরিকার সাম্রাজ্যগুলো ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকায় তারা সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি।

তখনকার দিনে শক্তিপ্রয়োগ (হার্ড পাওয়ার) ও প্রভাব (সফট পাওয়ার) উভয়ের ওপর নির্ভর করে সাম্রাজ্যগুলো টিকে থাকত। চীনের ঐক্য বজায় থাকত সাধারণ নীতিমালা, উন্নত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থের মাধ্যমে। রোম সাম্রাজ্যেও বিশেষ করে প্রজাতন্ত্রের আমলে একই অবস্থা ছিল।

রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (পোপতন্ত্র) ও বংশগত রাজতন্ত্রের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তখন অঞ্চলগুলোর শাসন পরিবর্তিত হতো মূলত রাজবংশীয় বিয়ে ও পারিবারিক জোটের মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ইচ্ছার তোয়াক্কা করা হতো না।

যুদ্ধগুলোর পেছনে সাধারণত বংশগত স্বার্থ কাজ করত। তবে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণে নতুন ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন, রোমান ক্যাথলিক চার্চের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা এসব সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফরাসি বিপ্লব রাজতান্ত্রিক নিয়মকানুন ও ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচলিত বিধিনিষেধগুলো ভেঙে দেয়। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়; বিশেষ করে মস্কো থেকে তাঁর পিছু হটার পর এই ব্যর্থতার শুরু হয়েছিল। তবে তাঁর সেনাবাহিনী ইউরোপের অনেক প্রচলিত ভূখণ্ডের সীমান্ত পরিবর্তন করেছিল এবং নতুন নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল।

এর ফলে ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসে প্রথমবারের মতো সচেতনভাবে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ভিয়েনা কংগ্রেস-পরবর্তী ইউরোপে একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল। এটিকে ‘কনসার্ট অব ইউরোপ’ বলা হয়। তবে এই শৃঙ্খলা বেশ কিছু সময় ধরে বিভিন্ন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৮৪৮ সালে ইউরোপজুড়ে যে জাতীয়তাবাদী বিপ্লব হয়, সেটি এ ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর ওট ফন বিসমার্ক জার্মানিকে একত্র করতে একাধিক যুদ্ধ করেন এবং এর ফলে দেশটি ইউরোপের কেন্দ্রীয় শক্তি হয়ে ওঠে। ১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসে এই শক্তির প্রতিফলন দেখা যায়।

বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে মিলে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ১৮৯০ সালে জার্মান সম্রাট তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে এই স্থিতিশীলতা ভেঙে যায়।

এরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। তবে লিগ অব নেশনস একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ তৈরি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ এবং ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়।

এসব উদ্যোগ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের অংশ ছিল। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তখন সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ এবং এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল, তাই ১৯৪৫ সালের পরের সময়কে ‘আমেরিকান শতক’ বলা হয়।

এরপর ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে ওঠে। এরপর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মতো বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কোনোটি গঠিত হয়, কোনোটিকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করা হয়।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেও কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা শেষের পথে। একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে। এটিকে অনেকেই এশিয়ার উত্থান (বা সঠিকভাবে বললে, পুনরুদ্ধার) হিসেবে বর্ণনা করেন।

১৮০০ সালের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়ার অংশ ছিল সবচেয়ে বড়। কিন্তু পাশ্চাত্যে শিল্পবিপ্লবের ফলে এশিয়া পিছিয়ে পড়ে। তা ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে তারা নতুন উপনিবেশবাদ চালু করে। এটি অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়ারও ক্ষতি করে।

এখন এশিয়া আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে। তবে এশিয়ার অগ্রগতির জন্য ইউরোপকে মূল্য দিতে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে নয়।

আসলে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, যা ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবধান কমিয়ে আনলেও এখনো সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করতে পারেনি—না অর্থনৈতিকভাবে, না সামরিকভাবে, না কূটনৈতিক মিত্রতার দিক থেকে।

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যেভাবে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে, তাতে চীনের উত্থানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও সমানভাবে দায়ী। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি যুক্তরাষ্ট্রের পতনের একেবারে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি, নাকি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ‘আমেরিকান সেঞ্চুরি’র প্রতিষ্ঠান (যেমন ন্যাটো, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ) ও মিত্রজোটগুলোর ওপর আক্রমণ শুধুই একটি চক্রাকার পতন (ইতিহাসে আমেরিকার শক্তি কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। ট্রাম্পের নীতিও হয়তো এমনই একটি অস্থায়ী পতন, স্থায়ী পতন নয়) হিসেবে প্রমাণিত হবে?

এর সঠিক উত্তর হয়তো ২০২৯ সালের আগে জানা যাবে না।

জোসেফ এস নাই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষাসচিব

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শত ব দ যবস থ র প রচল ত ব যবস থ ল র ওপর ইউর প র র জন ত কর ছ ল আম র ক অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়

যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ সামনে এলে বলা হয় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। বিশ্বাসীরা কেবল মুখে বলা নয়; বরং মনে মনে এ কথা স্বীকার করে নেওয়া যে আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব—এর অর্থ হচ্ছে, চিরকাল এ দুনিয়ায় থাকা যাবে না। একদিন আল্লাহরই কাছে যেতে হবেই।

‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থ সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থ (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহরই আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব। কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে পড়েন। অনেকে মনে করেন, মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হয়। বরং ইন্না লিল্লাহ পড়ার অনেক কারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। এই পবিত্র বাক্য আল্লাহকে স্মরণ রাখার বড় উপায়।

আরও পড়ুন যেকোনো সময় এই দোয়া করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে (কাউকে) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, আর (কাউকে) ধনে–প্রাণে বা ফল–ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের তুমি সুখবর দাও। (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, [ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন] ‘আমরা তো আল্লাহর আর নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব।’ এসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশীর্বাদ ও দয়া বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎ পথপ্রাপ্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭) এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারা ইন্না লিল্লাহ পড়বেন, কোনো পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং পড়লে কী উপকার।

বিশ্বাসীরা বিপদে পড়লে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেন। কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোয়াটি পাঠ করে। একাধারে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে পাঠ করা হয়, তবে বিপদের মধ্যেও শান্তি লাভ করবে বিপদ থেকে উত্তরণও সহজ হয়ে যায়। 

কোনো বিপদে বান্দার মুখে উচ্চারিত হয় এই দুটি বাক্য—এর অর্থ আল্লাহর ফয়সালা সর্বান্তঃকরণে মেনে নিচ্ছি। আর আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাই এ বিপদে সবরের বিনিময় তাঁর কাছে প্রত্যাশা করছি। দুটি বাক্যে ইমানের মৌলিক সাক্ষ্য দেওয়া হয়। তাই এর ফজিলতও অনেক। 

আরও পড়ুনতওবা করলে আল্লাহ খুশি হন ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

বিপদের সময় বলতে হবে উম্মে সালামা (রা.)–এর বরাতে হাদিস থেকে জানা যায়। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)–কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের ওপর বিপদ এলে যদি সে বলে, আল্লাহ যা হুকুম করেছেন—ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থাৎ আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা ইল্লা আখলাফাল্ল হুলাহ খয়রাম মিনহা (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসিবতে সওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।) উম্মে সালামা (রা.) আরও বলেন, আবু সালামা যখন ইন্তেকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, আবু সালামা থেকে উত্তম মুসলিম আর পাব না। এরপর আমি দোয়া পড়লাম। এরপর মহান আল্লাহ আবু সালামার স্থলে রাসুল (সা.)–এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমার কাছে রাসুল (সা.) বিয়ের পয়গাম দেওয়ার জন্য হাতিব ইবনে আবু বালতা (রা.)–কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা মেয়ে আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তার মেয়ে সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তিনি তাকে তার মেয়ের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দোয়া করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (মুসলিম: ৯১৮)

আরও পড়ুনপরিবারের জন্য অভিভাবক দোয়া করবেন০৭ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক লাইফ সাপোর্টে
  • অস্ত্র ঠেকিয়ে তিন অটোরিকশাচালক ও শ্রমজীবীর ঘরে ডাকাতি
  • নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক থেকে ট্রাক ঢুকে গেল দুই দোকানে, এরপর যা হলো
  • ঋণখেলাপি মামলায় আহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান শহিদুল আহসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
  • তারা কেন দুটো করে ঘড়ি পরেন?
  • বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ৫৬ জেলেকে ধরে গিয়ে গেছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • সরকারি গাড়ি ভাঙচুর, ৮০০ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা
  • ডিজেএডির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন চিস্তি 
  • যে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়