সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। এনসিপির আত্মপ্রকাশের এক সপ্তাহের মাথায় ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে নতুন দল থেকে পদত্যাগ কর গণ অধিকার পরিষদের আগের পদে ফিরে গেছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার ইফতারের পর এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তরে সংযুক্ত) সালেহ উদ্দিন সিফাতের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবু হানিফ। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিফাত প্রথম আলোকে বলেছেন, পদত্যাগের জন্য আবু হানিফ ব্যক্তিগত কারণের কথা বলেছেন। তাঁর পদত্যাগপত্রটি বিবেচনাধীন আছে।

পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগ করে আমি গণ অধিকার পরিষদে স্বপদে (উচ্চতর পরিষদের সদস্য) ফিরেছি।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। এই দলে নুরুল হকের দলের অন্তত ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যোগ দেন। তাঁরা নতুন দলের বিভিন্ন পদে আসীন হয়েছেন। এ বিষয়ে গত বুধবার নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এনসিপিতে যোগ দিতে তাঁর দলের অনেককে ১০ কোটি টাকা ও সংসদ সদস্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো কোনো উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এ ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়েছে।

নুরুল হকের দাবি, আবু হানিফসহ তাঁর দলের উচ্চতর পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে এভাবে বিভ্রান্ত ও ‘ব্ল্যাকমেল’ করে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা ভুল বুঝতে পেরে গণ অধিকার পরিষদে ফিরে এসেছেন।

নুরুলের এ দাবির বিষয়ে আবু হানিফ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনসিপি বেটার কিছু হবে মনে করে আমি এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদে থেকেই ভালো কাজ করতে পারব। তাই আমি গণ অধিকারে ফিরে যাচ্ছি। শিগগিরই আমি এনসিপি থেকে পদত্যাগ করব।’

অবশ্য এনসিপিতে যোগ দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ও সংসদ সদস্য করার প্রস্তাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন হানিফ।

হানিফ আজ পদত্যাগ করলেও গণ অধিকার পরিষদ থেকে এনসিপিতে যোগ দেওয়া অন্য কেউ পদত্যাগ করেননি। এনসিপির দপ্তরে সংযুক্ত যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আবু হানিফ ছাড়া আর কেউ পদত্যাগপত্র জমা দেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক এনস প ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ওড়না ও নেকাব কাণ্ডের মধ্যে ঢাবিতে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাস্তায় ওড়না পরতে বলা ও তার পোশাক নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে পরীক্ষা হলে পরিচয় শনাক্তে পুরুষ শিক্ষকের সামনে নেকাব না খুলতে চাওয়ার পর তা নিয়ে এক ছাত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ঘটনা নতুন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই দুই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার ওঠার মধ্যে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে উপাচার্যের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে হিজাব-নেকাব পরা ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্ত করবেন নারী শিক্ষক, নারী কর্মকর্তা বা নারী কর্মচারী।

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বরখাস্তের দাবি

নেত্রকোণায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সড়ক অবরোধ, দুই পুলিশ প্রত্যাহার

এই সিদ্ধান্তের তথ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

এর আগে পরীক্ষা হলে নেকাব খুলতে না চাওয়া নিয়ে অস্বস্তির কথা জানাতে ও এই সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন তাহমিনা তামান্না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। 

সংবাদ সম্মেলনে তামান্নার ভাই আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আমির ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনিও কথা বলেন। তার প্রশ্ন, ওড়না পরতে বলায় যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে নেকাব খুলতে বলায় কেউ গ্রেপ্তার হয় না কেন? এখন এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সহকারী বুক বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণব রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ছাত্রীকে “পর্দা করেন নাই কেন”, “ওড়না ঠিক নাই কেন?” বলাসহ আরো কুরুচিপূণ কথা বলে তাকে যৌনপীড়ন করেন বলে ভুক্তভোগী মামলা করেছেন। 

ফেসবুক পোস্টে অর্ণবের ছবি দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী লেখেন, “এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে, আমার ড্রেস ঠিক নাই ইত্যাদি... এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌড় দিয়ে চলে যায়।”

এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অর্ণব আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন একদল মানুষ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও অর্ণবকে কেন, কী উদ্দেশ্যে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তর্কযুদ্ধ। 

এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ণবকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিচার দাবি করেছেন।  

ঘটনার রেশ অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। অর্ণবের জামিনের পর বিতর্ক শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসল ঘটনা উদঘাটনের আশ্বাস দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। 

সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটিতে রাখা হয়েছে সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ানকে। 

এ বিষয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, “তদন্ত কমিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করবে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্তসহ সবার সঙ্গে কথা বলবে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে যা যা করার, তা করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত চাকরিতে থাকতে পারবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী কীভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়ে গেলেন, তা নিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন কেউ কেউ।

এত দ্রুতসময়ে জামিন দেওয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। 

বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান ও সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ এই ঘটনায় আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছেন।

আবার একদল ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে অর্ণবকে শাহবাগে গণপিটুনি দেওয়ার পোস্টার ছেড়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষেও ব্যাপক বিতর্ক চলছে।

যেভাবে এল হিজাব-নেকাব পরা ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তের নতুন সিদ্ধান্ত
অর্ণবের ঘটনা নিয়ে যখন দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে, এমন দিনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাহমিনা তামান্না পরীক্ষার হলে শিক্ষকের সামনে নেকাব খুলতে না চাওয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানাল এখন থেকে হিজাব-নেকাব পরা ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তের নতুন নিয়ম।

দ্বিতীয় বর্ষে পড়া তামান্না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন, প্রথম বর্ষে কয়েকটি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উন্নীত হয়েছেন; এসব পরীক্ষার সময় তিনি কীভাবে তার পরিচয় শনাক্ত করিয়েছিলেন, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে বলেছেন, তাহলে এখন কেন নেকাব খুলতে বলায় সংবাদ সম্মেলনে আসতে হলো। অবশ্য এসব প্রশ্ন নিয়ে তামান্নার বক্তব্য জানতে পারেনি রাইজিংবিডি ডটকম।

হিজাব-নেকাব পরা শিক্ষার্থীদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা বিবেচনায় রেখে নারী শিক্ষক বা নারী কর্মকর্তা বা নারী কর্মচারীদের মাধ্যমে নেকাব ও হিজাব পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”

“উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ডিনস্ কমিটির সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনে নারী সহকারী প্রক্টরের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্টিং বা বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালুর সম্ভাব্যতার বিষয়টি যথাসময়ে যাচাই করা হবে।

সাংবাদ সম্মেলনে তামান্না অভিযোগ করেন, নেকাব খুলতে না চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ‘দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা’ বলে মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে রাইজিংবিডি ডটকম কথা বলেছে। তিনি বলেছেন, “পরীক্ষা চলাকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমি নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। দেশটা নরক হয়ে যাচ্ছে, আমি এটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলিনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে এটা বলেছি। সে হয়তো বুঝতে ভুল করেছে।”

“আমরা চাই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার স্থায়ী সমাধান হোক। এটা নিয়ে ডিন মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি স্থায়ী সমাধান করা হবে, যাতে কাউকে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়,” বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। 

তবে ঘটনার প্রতিবাদ করে তিন দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য রাখেন অভিযোগকারী ছাত্র তাহমিনা তামান্না।

ঘটনার বর্ননা দিয়ে তামান্না বলেন, “আজ (৬ মার্চ) থেকে আমার সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর পর স্যার খাতা সাইন করতে এসে আমাকে এটেন্ডেন্স শিটে সাইন করতে দিয়ে মুখ খুলতে বলেন। আমি আসলে কীভাবে না করব, এটা বুঝছিলাম না। তাই দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ছিলাম। স্যার বললেন, ‘বসো, বসে মুখ খোল, চেক করতে হবে তো আমার।’ আমি মাথা নিচু করেই ছিলাম, হাত কাঁপছিল। স্যার পরে বললেন, ‘কোনো সমস্যা?’ বললাম, জি স্যার। পরে স্যার বললেন, ‘মুখ খুলবে না?’ আমি না বললে তিনি আমার থেকে অ্যাটেন্ডেন্স শিটটা নিয়ে খাতাটা সাইন না করে দিয়ে দেন এবং বলেন ‘ঠিক আছে রাখ, তোমারটা একটু পর সাইন করছি।’ বুঝলাম, কিছু একটা ঝামেলা হবে।”

তিনি বলেন, “দেখলাম, স্যাররা সামনে বসে আলোচনা করছেন। একটু পর চেয়ারম্যান স্যার ওঠে আসেন। আমার পিছন থেকে ম্যাম দাঁড়ান এসে। তারপর ম্যাম বলেন, ‘কি ব্যাপার কোন সমস্যা? স্যারকে সাইন করাতে দাওনি কেন? কোন সমস্যা? মুখ দেখাবে না?’ ম্যাম ভালো করেই জিজ্ঞেস করেছিলেন। এ সময় চেয়ারম্যান স্যার ‘দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা’ বলে মন্তব্য করেন।”

তিনি আরো বলেন, “আমি ভয়ে কাঁপছিলাম, কারণ আমি ওতো সাহসী মানুষ না। মাথা নিচু করে ছিলাম। তখন ম্যাম তাকে দেখাতে। আমি একপাশ ফিরে ম্যামকে দেখালে তিনি সাইন করেন। পাশাপাশি তিনি বললেন, ‘সবসময় তো মহিলা টিচার থাকবেন না।’ তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করেন তো, ও ভাইভাতে কী করবে?’ তখন ম্যাম আমাকে বলেন, ‘ভাইভাতে কী করবে? মুখ খুলবে না?’ আমি না বললে তিনি বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে তো মহিলা টিচার নাও থাকতে পারেন, তখন?’ পরে চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ‘ওর জন্য কি অন্য টিচাররা সব ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে যাবে? ও মুখ খুলবেনা তাই চলে যাবে বের হয়ে? দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা।’ আরও কিছু হয়তো বলেছেন, কিন্তু আমার তা খেয়ালে নেই।”

বিভাগের নারী শিক্ষক সান্ত্বনা দেন বলে তুলে ধরে তামান্না বলেন, “আমার অলরেডি তখন চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়েছে। তখন ম্যাম বুঝতে পেরে আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আরে এ তো কান্নাকাটি শুরু করছে। নার্ভাস হইয়ো না। এ ঘটনার প্রভাব যেন পরীক্ষায় না পড়ে। এখন পরীক্ষা দাও, আমরা এ বিষয়ে পরীক্ষার পর কথা বলব।’ উনারা চলে যাওয়ার পরও লিখতে পারতেছিলাম না, ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরীক্ষা কেমন হইছে সেটা আর না বলি।”

এ অভিযোগ কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার আসলে শিক্ষকদের নিয়ে কিছু বলার নেই। তারা বরাবারই নিয়মের কথা বলেন। আর এটা সত্যি যে, নিয়মের মধ্যেই আসল ঝামেলাটা। আমি চাই নিয়মটা পরিবর্তন হোক। আমার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আমি চাই সিস্টেমটা পরিবর্তন হোক। কোন টিচারের কিছু হোক, সেটা চাই না। না হয় পরবর্তী পরীক্ষায়ও এটা ফেইস করা লাগবে, ভাইভাতেও।”

তিনি দাবি করে বলেন, “আমি চাই, সব বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা, ভাইভা, টিউটোরিয়ালে যারা হিজাব-নিকাব পরে, তাদের কোন সমস্যা যেন আর না হয়। চেক করার জন্য যেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই অন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হয়। পরীক্ষার নিয়মটাই পরিবর্তন হোক। হিজাব-নিকাব পরা আমারসহ প্রত্যেকটা মেয়ের স্বাধীনতা হোক।”

তিনি বলেন, “আমরা আগে বলতে পারতাম না। ৫ আগস্টের পরে আমরা বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। তাই আমি এটা নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেই। পরে আমি ফেসবুক আইডি ও শিক্ষার্থী সংসদে পোস্ট দেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি হিজাব-নিকাব পড়লে তাদের হেনস্তা করা হয়। আমি চেয়েছি এটার যেন সুষ্ঠু সমাধান হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে তামান্নার ভাই আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আমির ফয়সাল বলেন, “আমরা কোন আল্টিমেটাম দেব না। বিশ্ববিদ্যালয় এমনিতেই অনেক সহনশীল। তাই আশা করব, তারা এ বিষয়ে সমাধান বের করবেন। আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে আবেদন জানাব, এ বিষয়ে যেন স্ট্রংলি দেখেন এবং ব্যক্তি শনাক্তকরণের আইন সিনেটে উত্থাপন করেন।”

তিনি বলেন, “রাস্তায় ওড়না পরতে বলা যেমন ক্রাইম, তেমনই নিকাব খুলতে বলাও ক্রাইম। ওড়না পড়তে বলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু অসংখ্যবার হিজাব নিকাব খুলতে বলার পরও কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত তার দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের চেহারা দেখে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে; বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার পূর্ব পর্যন্ত পরীক্ষায় শিক্ষিকার মাধ্যমে শনাক্ত করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ইতোপূর্বে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘটিত প্রতিটি নিপীড়ন ও হেনস্তার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পরীক্ষা চলাকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আমি নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। দেশটা নরক হয়ে যাচ্ছে, আমি এটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলিনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে এটা বলেছি। সে হয়তো বুঝতে ভুল করেছে।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার স্থায়ী সমাধান হোক। এটা নিয়ে ডিন মহাদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি স্থায়ী সমাধান করা হবে, যাতে কাউকে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।”

ঢাকা/সৌরভ/মামুন/মেহেদী/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ