নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এর মধ্যে এক পক্ষ ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে, অন্য পক্ষ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ওছখালীতে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। কমিটি গঠনে ক্ষুব্ধ অংশের নেতা-কর্মীরা কমিটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান ওরফে শামীমকে হাতিয়াতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তাঁরা এ সময় বিএনপি নেতা মাহবুবের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, হাতিয়া উপজেলা যুবদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীন, উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুর ইসলাম, হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের বিদায়ী সদস্যসচিব মো.

মোছলেহ উদ্দিন, পৌরসভা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওই কাজটি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমানের ইশারায়। কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় নেতাদের কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। যাঁদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা গত ১৭ বছর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে ছিলেন না। তাই অবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে দলের ত্যাগী ও যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান ওরফে শামীমকে হাতিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।

অন্যদিকে একই দিন দুপুর ১২টার দিকে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ও সদস্যসচিব ফাহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মাহবুবুর রহমান শামীমের অনুসারীরা পাল্টা আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা এ সময় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে এ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে একই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ঘোষিত কমিটির বিপক্ষে বিক্ষোভের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় যুবদলের পক্ষ থেকে হাতিয়া উপজেলা ও হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মো. ইসমাইল হোসেনকে আহ্বায়ক ও ফাহিম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের কমিটি এবং মোমিন উল্যাহকে আহ্বায়ক এবং কাউসার মোস্তফাকে সদস্যসচিব করে পৌরসভা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক ন দ র য় সদস যসচ ব ঘ ষ ত কম ট য বদল র স কম ট র প রসভ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত পথরেখা ঘোষণা করা হোক

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতদ্বৈধতা সত্ত্বেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও গত ঈদের ছুটিতে ছোট–বড় ও পুরোনো–নতুন দলের নেতারা প্রকাশ্যে এসেছেন। অনেকে দলের নামে দোয়া চেয়ে পোস্টারও ছেড়েছেন। যদিও এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ৩৯টি আসনে জনসংযোগ করেছেন ঈদের ছুটিতে। এসব গণসংযোগ হয়েছে নানা উপলক্ষে। কোথাও আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা করতে, কোথাও প্রীতি ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা উপলক্ষে।

এ কথার অর্থ এই নয় যে অন্য দলগুলোর নেতারা চুপচাপ বসে ছিলেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, বামপন্থী দলের নেতারা ঈদের ছুটিতে জনসংযোগ করেছেন। জনসংযোগের ক্ষেত্রে বিএনপির সমস্যা হলো, প্রায় সব আসনে তাদের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। এ নিয়ে ভবিষ্যতে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কোথাও কোথাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, তার আলামত ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে বিভিন্ন স্থানে হানাহানি চলছে, তার পেছনেও আছে নির্বাচনী হিসাব–নিকাশ।

রাজনৈতিক নেতাদের এই জনসংযোগ দেখে এ ধারণা করা অমূলক হবে না যে ভেতরে–ভেতরে তাঁরা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এখনো অনেক দল বাকি আছে। যেকোনো সিদ্ধান্তে আসতে হলে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর্বটি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা যখন চলমান, তখন রাজনৈতিক মহলে দুটি বিপজ্জনক প্রচার লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমটি হলো সংস্কারের কী প্রয়োজন, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। দ্বিতীয় প্রচার হলো আপাতত নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, যত দিন দরকার এই সরকার থাকুক।

স্বাভাবিকভাবেই সংস্কার ও নির্বাচন দুটি বিষয় নিয়েই জনমনে একধরনের সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আগে কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথম প্রশ্ন আসত, নির্বাচনটি কবে হবে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হবে তো?

রাজনীতিকদের অনেকেই সংস্কারকে নির্বাচনের এবং নির্বাচনকে সংস্কারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তবে তো একটি আরেকটির প্রতিপক্ষ নয়; বরং পরিপূরক। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন সংস্কারের অংশ, তেমনি স্বৈরতন্ত্রের পুনরাগমন ঠেকাতে সংস্কার জরুরি। কতটা সংস্কার নির্বাচনের আগে হবে, কতটা পরে হবে, এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার অপরিহার্য।

আমরা মনে করি, সংস্কার ও নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সব দলের সঙ্গে কথা না বললেও তাদের মতামত পেয়েছে; এর ভিত্তিতে তারা কোনো উপসংহার টানতে পারে। তবে উত্তম পন্থা হলো সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি বিলম্ব কাম্য নয়, তাতে সংশয়–সন্দেহ আরও বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করে সরকার সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত একটা পথরেখা ঘোষণা করবে, এটাই প্রত্যাশিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ