মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সন্তোষ গৌড় মুন্না (২৭) চা-বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন। গতকাল বুধবার রাতে তাঁর বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। বরযাত্রী কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি মারা যান। তাঁর এমন মৃত্যুতে এলাকায় মাতম চলছে।

সন্তোষ গৌড় জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রাজকি চা-বাগানের বাসিন্দা আশুক গৌড়ের ছেলে। এক ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে সন্তোষ বড় ছিলেন। দুই সন্তানকে ছোট রেখে তাঁদের মা মারা যান। পাশের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি চা–বাগানের এক শ্রমিকের মেয়ের সঙ্গে সন্তোষের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সন্তোষদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেয়ালঘেরা ছোট ঘরের ভেতরে, উঠানে ও সামনের রাস্তা লোকে লোকারণ্য। উঠানের এক পাশে বাঁশের তৈরি খাটিয়ায় সাদা কাপড়ে মোড়ানো তাঁর লাশ। স্বজন, প্রতিবেশীদের কেউ হাউমাউ করে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। এ মৃত্যু তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। শেষবারের মতো সন্তোষকে দেখতে ছুটে এসেছেন কনে ও তাঁর স্বজনেরাও। সন্তোষদের ঘরের সামনে মাটিতে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন কনে। সঙ্গে আসা স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় শ্মশানঘাটে।

সন্তোষের ছোট বোন দীপ্তি গৌড় কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘একটা মাত্র ভাই (সন্তোষ) ছিল। আত্মীয়স্বজন সবাই বিয়েতে আইলো। সবাই আনন্দ-ফুর্তি করল। বিয়া করি আইজ (আজ) নতুন বউ বাড়িতে নিয়া আওয়ার কথা। সব শেষ। ভাইটা সবাইরে কাঁদাইয়া ফাঁকি দিয়া চলি গেল।’

স্বজনেরা বলেন, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বাড়ি থেকে বরযাত্রীরা একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা সাতটায় বিয়ের লগ্ন ছিল। কনের বাড়িতে পৌঁছার আগেই সন্তোষের বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। পরে স্বজনেরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে (স্ট্রোকে) সন্তোষের মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল রাতে সন্তোষের লাশ নিয়ে স্বজনেরা বাড়িতে ফেরেন। আক্ষেপ করে রাজকি চা-বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সন্তোষদের মামা সুবোধ চাষা বলেন, ‘কাইল বরের সাজে আর আইজ সাদা কাপড়ে শ্মশানে গেল ছেলেটা। মনটারে সান্ত্বনা দিতে পারি না। কেউ পারছে না। আগে এলাকায় এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

এমন মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্তোষদের বাড়িতে ছুটে আসেন স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলীম। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছি না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর এ ঘোষণার পর স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এক পর্যায়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হলে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় ও ৩ মার্চ সারাদেশে হরতালের ডাক দেন। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের বিশাল সমাবেশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। সেখানেই বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেওয়ার কথা জানান।

৭ মার্চ বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে ওঠেন। ফাল্গুনের সূর্য তখনও মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। দরাজ কণ্ঠে তাঁর ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি...।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ প্রায় ১৮ মিনিটের ভাষণ। ভাষণে বঙ্গবন্ধু সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভায়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিতে চাই– আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’

বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও এটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল। এই ভাষণে ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে ভাষণটি ছিল লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পথনির্দেশ।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ