রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে থানা পুলিশ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকা থেকে নুরুল আমিন ওরফে বাবু (২৫) ও টঙ্গীরঘাট এলাকা থেকে মিজানুর রহমান (২২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার মুড়াপাড়া ও তার আশপাশের এলাকায় অবাদে মাদক বিক্রি করতো। 

জানা গেছে, উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও দেওয়ানবাড়ী এলাকার মৃত শফিউদ্দিনের ছেলে নুরুল আমিন বাবু এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। সে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত ছিল। টঙ্গীরঘাট এলাকার মিলন মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্য বিক্রিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বুধবার রাতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমান ও নুরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে মাদক কারবারি বাবু ও মিজানকে গ্রেপ্তার করায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী। 

রূপগঞ্জ থানার এসআই রিয়াদুল ইসলাম ও আবুল কালাম আজাদ জানান, মিজানুর রহমান ও নুরুল ইসলাম বাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রিসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল।

বুধবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ওই দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ৩দিনের রিমান্ড চেয়ে বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য মশিউর সিকিউরিটিজের (ট্রেক নং-১৩৪) বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার শেয়ার বিক্রির ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। একক কোনো ব্রোকারেজ হাউজ হিসেবে এটাই সবচেয়ে বড় জালিয়াতি।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিতে মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শেয়ার ও তহবিল তছরুপের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালক-কর্মকর্তারা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দুদকে জরুরি ভিত্তিতে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিষয়ে ইতোপূর্ব গঠিত তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির একাধিক সূত্র রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত বিএসইসি সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ডিএসইর পরিদর্শন দল মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঘাটতি পায়। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সরিয়ে ফেলার তথ্য পায় পরিদর্শন দল। পরে এসব তথ্যে উল্লেখ করে ওই বছরের গত ২৮ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হাসান, সহকারী পরিচালক অমিত কুমার সাহা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মোহাম্মদ ইকরাম হোসাইন ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ম্যানেজার শরীফ আলী ইরতেরাজ। 

তদন্ত কমিটি মশিউর সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের হিসাব, ব্যাক অফিস সফটওয়্যার, অনুমোদিত ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশনের তালিকা এবং নেতিবাচক ইকুইটির অবস্থা যাচাই করে। একই মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ব্যাংক হিসাব দিয়ে দুটির বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কি না এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, সিইও, অনুমোদিত প্রতিনিধি ও অন্যান্য কর্মচারীর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোনো লেনদেন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়।

এর আগে ২০২০ সালের ২৪ জুন ক্রেস্ট সিকিউরিটিজে ১২৪ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ১৫ জুন বানকো সিকিউরিটিজে ১২৮ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর তামহা সিকিউরিটিজের ১৪০ কোটি টাকা সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে ঘাটতি পাওয়া যায়।

এদিকে, চলতি বছরের গত ১০ এপ্রিল রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সঙ্গে প্রতারক প্রতিষ্ঠান মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালক, কর্মকর্তাসহ ডিএসই ও বিএসইসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন, মশিউর সিকিউরিটিজ অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্লায়েন্টের শেয়ার বিক্রি করে এবং অনুমোদনহীন ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লায়েন্টের ই-মেইলে জাল পোর্টফলিও পাঠায়, যা মূল পোর্টফোলিওর অনুরূপ। যাতে করে গ্রাহক বুঝতে না পারে তার পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি হয়েছে। পরবর্তীতে তারা টাকা আত্মসাৎ করে। শেয়ার বিক্রয় কিংবা ক্রয় করলে সিডিবিএল থেকে কনফার্মেশন মেসেজ আসে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের মোবাইল নম্বর চালিয়ে দেয় মশিউর সিকিউরিটিজ। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এছাড়া, রেকর্ড ডেটের আগে বেশি দামে যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে রেকর্ড ডেটের পর সেই পরিমাণ শেয়ার কিনে রেখে দিত। যাতে বিনিয়োগকারী বুঝতে না পারে। ফলে, বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পেত না এবং বিক্রি ও ক্রয়ের মূল্য পার্থকের টাকা হিসাব থেকে সরিয়ে নিত। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে রক্ষিত নগদ টাকা গ্রাহককে ফেরত না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছে। মশিউর সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নাকের ডগায় বসে অর্থ লোপাট করেছে, যা দুঃখজনক এবং স্পর্শকাতর। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দীর্ঘদিন গ্রাহকের অর্থ ও শেয়ারের প্রকৃত তথ্য আড়াল করার মাধ্যমে ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত

আইন বিভাগ, মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগের একটি সমন্বিত প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো—প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে এনফোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। মানিলন্ডারিং ও অর্থ আত্মসাতের (প্যানেল কোড, ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ভঙ্গ) বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে। এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লিখিত মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিত করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি পাঠানো হবে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি পাঠানো হবে। এসব বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। বিএসইসির তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই, ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নিতে দুদকে অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে মশিউর সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ