জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি রাজনীতিতে তাঁদের নিষিদ্ধের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছে জুলাই মঞ্চ। তিনটি দাবিতে ১৭ দিন ধরে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসাইন। তিনি বলেন, গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভ্যুত্থান–পরবর্তী সরকার। সরকারের এমন অনীহার ব্যাপারে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছে জুলাই মঞ্চ। তিনি বলেন, গণহত্যার স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও গ্রেপ্তারকৃতদের বিচারে ধীরগতি জনমনে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না।

এই সরকারকে সাত মাস সময় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জুলাই মঞ্চের এই প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এই ৭ মাসে আমাদের শহীদদের আত্মাকে শান্ত করতে পারব গণহত্যাকারীদের বিচার করার মাধ্যমে। কিন্তু এত দিন পার হওয়ার পরও সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা শহীদদের প্রতি দায়বদ্ধ। গণহত্যার বিচার আগে হতে হবে, তারপর সংস্কার বা নির্বাচন যা ইচ্ছা করুন।’

বাংলাদেশে গণহত্যা হবে আর বিচার হবে না—এটা মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমরা নাগরিক দায়িত্ববোধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শাহবাগে অবস্থান করছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে সুস্থ ধারার রাজনীতি কোনো রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জুলাই বিপ্লবের পর লাশের রাজনীতি বন্ধ করে আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার একটি বড় সুযোগ এসেছে।’ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাকিব হোসাইন বলেন, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর যুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ীদের সমস্বরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বাংলাদেশবিরোধী এই গণহত্যাকারী চক্রের শাস্তি কীভাবে নিশ্চিত করবে এবং তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাকিল মিয়া, আরিফুল ইসলাম তালুকদার, অর্ণব হোসেন প্রমুখ।

জুলাই মঞ্চের দাবিগুলো হলো জুলাই গণহত্যার বিচার; গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য সরাসরি গণহত্যায় জড়িত তাঁদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য ক র দ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শাহ আজিজুরের নামে হলের নামকরণ, বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চারটি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের আদেশ জারির পরপরই বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে হলের নামকরণ করায় সমালোচনা বেশি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী।

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংসদ। বুধবার এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম এ ব্যাপারে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাওলানা ভাসানীর নামে হলের নামকরণ করার দাবি জানান।

বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, শাহ আজিজুর রহমানের মতো একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীর নামে আবাসিক হলের নামকরণ জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাপরিপন্থী। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে লুট হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বৈষম্যহীন দেশ গড়ার শপথই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শাহ আজিজুর রহমানের নামে আবাসিক হলের নামকরণের মধ্য দিয়ে ইবি প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে তাঁরা মনে করেন।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আরও বলেন, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরে পাকিস্তান ন্যাশনাল ল

লিগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জাতিসংঘে পাঠানো প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।

শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে অন্যায় কিছু করেনি। স্বাধীনতাসংগ্রামের নামে সেখানে যা চলছে, তা হলো ভারতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উচিত সেটাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করা।’ এ ছাড়া তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিলেন। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে আবাসিক হলের নামকরণের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন ক্ষুব্ধ। তাঁরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।

মুক্তিযুদ্ধ, ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী ও মানুষের অধিকার আদায়ের অগ্রনায়ক মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, চারটি আবাসিক হল ও একটি ভবনের নাম পরিবর্তন করা হলো। কিন্তু সেখানে মাওলানা ভাসানীর মতো জাতীয় নেতার নামে কোনো স্থাপনা রাখা হয়নি, যা দুঃখজনক। ইবি প্রশাসনের কাছে রাজাকারের নাম পরিবর্তন ও মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের আহ্বান জানান দুই নেতা।

ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান লেখেন, ‘জনগণের টাকায় তৈরি রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নাম হবে স্ব-স্ব স্থানের নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ক্ষেত্রেও তাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু একাধিক হল বা ছাত্রাবাস থাকে, সেগুলোর নামকরণ হবে রাষ্ট্রের জন্ম ও বিকাশের নানা পর্যায়ে ভূমিকা রাখা গুণীজনের নামে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্ম, সংস্কৃতির নানা অঙ্গনের গুণীজন স্থান পাবেন। রাজনৈতিক ক্যাটাগরি বিবেচনায় নিলে ভাসানী, শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের কাউকেই বাদ দিলে হিংসা জিইয়ে রাখা ছাড়া কিছুই হবে না। আজ শেখপাড়ার পাশের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন যে কাজটা করেছে, এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে এনাবল করার ষড়যন্ত্র।’

আরেক শিক্ষার্থী জিকে সাদিক লিখেছেন, ‘শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী; বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই লোক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে কাজ করে গেছে। তার নামে আবাসিক হল, জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, সেটার বিরুদ্ধে যায়।...‘জুতা নিক্ষেপ করে’ এমন কর্মের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এর নিন্দা জানিয়ে রাখলাম।’

আরও পড়ুনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর হলের নাম বদলে করা হলো শাহ আজিজুর হল২ ঘণ্টা আগে

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, আমরা বড়ই মুনাফেক।’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের স্থপতিকে অসম্মান করে কোনো প্রতিষ্ঠান বড় হতে পারে না।’

যোগাযোগ করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এটা ঠিক হয়েছে। কেননা বিগত ১৬ বছর সেই পরিবারতন্ত্র করে গেছে। তবে প্রশাসন পরিবর্তিত নামের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে পারত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২৫ মার্চ গণহত্যা ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতিমূলক সভা
  • শাহ আজিজুরের নামে হলের নামকরণ, বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদ
  • ‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ঢাবিতে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন 
  • রাজাকারের ছেলে’ বলায় ঢাবিতে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন