ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এমদাদ সাগর (৩২) গ্রেপ্তার এড়াতে পলিয়ে ছিলেন। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পারলেও কিন্তু মৃত্যুকে আর এড়াতে পারেননি। ঢাকার শাহজাদপুর এলাকায় একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর খবর তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার জানতে পেরেছে তাঁর পরিবার। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আজ ঢাকা গিয়ে স্বজনেরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।

মারা যাওয়া এমদাদ সাগর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের খাদুরাইল গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে। তিনি বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে এমদাদ এলাকাছাড়া। তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা আছে।

পুলিশ ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার ভাটারা থানার শাহজাদপুরে বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের সৌদিয়া হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন এমদাদ সাগর। নাম ও পরিচয় শনাক্ত না করতে পারায় তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাসান ফোন করে বিজয়নগর থানা–পুলিশকে পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়ে নিহত যুবকের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন। বিজয়নগর থানা–পুলিশ এমদাদের মামাতো ভাই লিটন মুন্সিকে বিষয়টি জানান। এরপরই এমদাদের মৃত্যুর বিষয়টি স্বজন ও পরিবারের লোকজন জানতে পারেন।

এ বিষয়ে আজ বেলা পৌনে ৫টার দিকে লিটন মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, এমদাদের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এক মাস আগে এমদাদ মালয়েশিয়ায় যান। সেখান থেকে আবার শ্রীলঙ্কা যান। গত ২ ফেব্রুয়ারি দেশে এসে রাজধানীর শাহজাদপুরে সৌদিয়া হোটেলে উঠেছিলেন।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

রওশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে বিজয়নগর থানা-পুলিশকে ফোন করে এবং পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়ে নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় র ব জয়নগর থ ন এমদ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয়নগরে অবৈধ মাটিকাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অবৈধ মাটির ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও যুবদলের বহিষ্কৃত নেতার নেতৃত্বে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

মাইনুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও দেশ রূপান্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। তিনি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিবের পদ থেকে বহিষ্কৃত মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম মিয়াসহ তাদের ৩০-৪০ জন লোক এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়ায় দল থেকে মোখলেছুরকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম মিয়া গত ৫ আগস্টের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার পুকুরসহ ফসলি জমি অবৈধভাবে ভরাট করছেন। কাইয়ুমের এই কাজ দেখাশোনা করছেন তাঁর ছেলে মো. মুন্না, রাসেল মিয়া ও মোবারক হোসেন, চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া ও ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনিছ মিয়া। এসব কাজে সহায়তা করছেন বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোখলেছুর। এ নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করেন মাইনুদ্দিন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে ব্যক্তিগত কাজে বিজয়নগর থানার দিকে যাচ্ছিলেন মাইনুদ্দিন। এ সময় বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সামনে মোখলেছুর, কাইয়ুমসহ অন্যরা অতর্কিত সাংবাদিক মাইনুদ্দিনের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা ভাগিনা মো. সোহাগ, স্থানীয় মো. শিপনসহ কয়েকজন মিলে চেষ্টা করেও মাইনুদ্দিনকে রক্ষা করতে পারেননি। তাঁদের হামলায় মাইনুদ্দিন মাথার ডান পাশে আঘাত পান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। মাইনুদ্দিনের মাথার ডান পাশে ছয়টি সেলাই লেগেছে।

আহত সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেল বলেন, ‘মাটি কাটার নিউজ করায় কাইয়ুম, তার ছেলেরা ও ভাইয়েরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। বাড়ির সামনে পেয়ে লিটন মুন্সি ও কাইয়ুমের নেতৃত্বে তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। কাইয়ুম নিজে আমাকে মেরেছে। তারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিকতা করা কি অন্যায়?’

আহত সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের ভাগিনা সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ তাঁদের ‘‘বকা দিয়েছে’’ এই কথা বলেই তারা মামার ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে। ফেরাতে গিয়ে আমরাও আহত হয়েছি।’

একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোখলেছুর রহমান ও কাইয়ুম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইউপি সদস্য আনিছ মিয়া বলেন, ‘আমি তো দৌড়ে গেছি।’ আপনি হামলা করেছেন উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘ওরা বাড়ির সামনে এসে ঝগড়া করেছে। আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। সেটা তো কিছু বলছেন না।’

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা শুনেছি। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজয়নগরে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ১৩ জনের নামে মামলা
  • বিজয়নগরে অবৈধ মাটিকাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ