বান্দরবানে টিসিবি পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার শিকার হয়ে এক রোজাদার নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

অজ্ঞান হওয়া ওই নারীর নাম বেলি আক্তার। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

টিসিবি পণ্য সংগ্রহ করতে আসা উপস্থিত ভুক্তভোগীরা জানান, পণ্য বিতরণে চরম অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কেউ নিয়ম মানছিল না। ফলে পণ্য নিতে আসা সাধারণ জনগণের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। শক্তির জোরে যে যার মতো পণ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এক সময় নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবক সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

টিসিবি পণ্য নিতে আসা কয়েকজন নারী জানান, এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেই প্রচণ্ড ভিড়ে ধাক্কা লেগে পড়ে যান রোজাদার বেলি আক্তার। পড়ে গিয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। উপস্থিত কয়েকজন তাকে দ্রুত রাস্তায় পাশের এক ছায়ায় নিয়ে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরে আসে। 

প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে টিসিবি পণ্য বিতরণের দাবি জানিয়েছেন এসব নারী।

বেলি আক্তার বলেন, “আমরা কয়েকজন মহিলা সকাল থেকে এসে বসে ছিলাম। আমাদের না দিয়ে অন্যদের দিচ্ছে। যার গায়ে জোর বেশি, তারাই পাচ্ছে। উৎসুক জনতা ভিড়ে প্রচণ্ড গরমের কারণে আমি জ্ঞান হারাই।”

ঘটনার পর স্থানীয়রা টিসিবি পণ্য বিতরণের অনিয়মের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ করে তারা বলেন, “সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিতরণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নারী ও বৃদ্ধদের জন্য আলাদা লাইন বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। দুর্বল ও অসহায়দের চেয়ে শক্তিশালীরাই পণ্য সংগ্রহে বেশি সুবিধা পেয়েছে।”

বান্দরবান পৌরসভা প্রশাসনিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব এডিসি) এস এম মনজুর রায়হান বলেন, “পৌরসভা ভিতরে টিসিবি পণ্য সরবরাহ ও বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা দেখভাল করে থাকেন। টিসিবি পণ্য নিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে একজন রোজাদার মহিলা আহত হয়েছেন। সে খবর আমরা পাইনি। এই ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে কেউ অভিযোগও করিনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আগামীকাল থেকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও নারী এবং পুরুষের বাধ্যতামূলক আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/চাইমং/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব তরণ র প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আইসিসিতে পাঠানোর আহ্বান টবি ক্যাডম্যানের

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মামলা হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান।

বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলায় কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই আইন বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি এই সুপারিশ তুলে ধরেন। খবর বাসসের

বৈঠকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এছাড়া বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ছত্রছায়ায় থাকা অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে পরিপূরক বিচারব্যবস্থার আওতায় আইসিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

বৈঠকের শুরুতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) কার্যক্রমের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাইব্যুনালটি পূর্ববর্তী সরকার, বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত নৃশংসতার বিচার করছে।

বৈঠকে বিভিন্ন আইনি কাঠামো, নতুন সংযোজন ও অতীতের স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জি৩৭ চেম্বার্সের প্রধান টবি ক্যাডম্যান আইসিটির আইনি ও বিধিবদ্ধ কাঠামো সংশোধনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা দরকার যাতে এটি আগের স্বৈরাচারী শাসনের ধারাবাহিকতা মনে না করা হয়।

এছাড়া মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত বিষয় ও প্রমাণ গ্রহণের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার বিষয়েও আলোচনা হয়, যাতে ন্যায়বিচার ও সুবিচারের সর্বোচ্চ মান বজায় থাকে।

ড. ইউনূস আইসিটি প্রসিকিউশন টিমের কাজের প্রশংসা করে বলেন, তাদের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'বিশ্বের জানা উচিত এক হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী ও শ্রমিকদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল কে এবং মূল অপরাধীরা কারা। জাতিসংঘের তদন্ত দল শেখ হাসিনা সরকারের আসল চেহারা উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'

বৈঠকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারের পদক্ষেপ, আইসিটি ও প্রসিকিউশন টিমের সম্পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা, সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান, অভিযুক্তদের জন্য সুবিচার নিশ্চিতে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়া আগের সরকারের আমলে লুট হওয়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ