জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিতে হবে। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখন আমরা নানা রকম অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নয়ন ঘটেনি আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী। পুলিশকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হবে। পুলিশের কাজটা পুলিশকেই করতে দিতে হবে। আমরা নিজেরা কেউ আইন হাতে তুলে নেব না।’

আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডে নিম্নবিত্তদের জন্য মাসব্যাপী ‘গণমানুষের ইফতার’ আয়োজন শুরু করেছে এনসিপি। আজ আয়োজন শুরুর আগে নাহিদ সেখানে এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আমাদের সুখ-দুঃখ সবকিছুই আমরা এই দেশের জনগণের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব। আমরা একসঙ্গে রাজপথে ছিলাম। সামনে আমাদের ভবিষ্যৎও একসঙ্গেই হবে। আমরা একসঙ্গেই ভালো থাকব, না হলে একসঙ্গেই খারাপ থাকব। একসঙ্গে লড়াই করেই আমরা বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব।’

সমাজে এখন নানা রকম অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে করতে হবে এবং সবাই মিলেই আমরা এই সময়টা কাজে লাগাব, যাতে আমাদের দেশের  সমৃদ্ধি হয়। রমজান মাসজুড়েই যাতে দ্রব্যমূল্য আরও নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানুষ স্বস্তিতে ঈদের বাজার করতে পারেন, নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন, সড়কে নিরাপদ থাকেন—সেই বিষয়গুলো সরকার নিশ্চিত করবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।’

এ সময় এনসিপির কার্যক্রম প্রসঙ্গেও কথা বলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক জায়গা থেকে তো আমরা এনসিপির মাত্র কার্যক্রম শুরু করেছি। রমজান মাসে আমাদের খুব বেশি বড় কোনো কর্মসূচি থাকবে না। আমরা মূলত আমাদের গঠনতন্ত্র, পরবর্তী পরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছাব। হয়তো রমজান মাসের পরে আমাদের দেশব্যাপী কার্যক্রম শুরু হবে।’

নাহিদের আগে বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি প্রতিটি জেলায় দলের প্রতিনিধিদের ছাত্র-জনতা, খেটে খাওয়া মানুষ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে যেন আমরা ভাগাভাগি করে খাই। সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেই আজকের এই উদ্যোগ।’

বক্তব্য পর্ব সঞ্চালনা করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মশিউর রহমান। সেখানে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম এনস প র একসঙ গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চেরনোবিলে কিসের ভুলে পারমাণবিক চুল্লিতে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিস্ফোরণ হয়েছিল

১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল (২৫ এপ্রিল দিবাগত রাত)। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলে অবস্থিত ভি আই লেনিন নামের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চতুর্থ চুল্লিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। সেই সময় একদল প্রকৌশলী চুল্লিটিতে একটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেন। তবে তা করতে গিয়ে নানা ভুল পদক্ষেপ নেন তাঁরা। এ ঘটনায় পারমাণবিক কেন্দ্রটির ভেতরে হঠাৎ বিদ্যুৎপ্রবাহ বেড়ে চুল্লিটি উত্তপ্ত হয়ে যায়। এরপর একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক চুল্লির মূল অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাগা একাধিক আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পরে হেলিকপ্টার থেকে বালু ও অন্যান্য পদার্থ ছড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও তেজস্ক্রিয়তার বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। পারমাণবিক দুর্ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনাটাকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তারা শুরুতে এ দুর্ঘটনার কথা গোপন রাখে। বাতাসের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তা ইতিমধ্যে সুইডেন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেখানকার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীরা তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি টের পেয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে এর ব্যাখ্যা চায়। প্রথমে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও অবশেষে ২৮ এপ্রিল তারা দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পারমাণবিক শক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ইউক্রেন ও বর্তমান বেলারুশ সীমান্তের ঠিক দক্ষিণে চারটি আরবিএমকে ধরনের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করেন। প্রিপিয়াত নদীর তীরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। প্রতিটি চুল্লি ১ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদনে সক্ষম ছিল।

প্রকৌশলীদের অদক্ষতা

১৯৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় একদল প্রকৌশলী চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে একটি বৈদ্যুতিক প্রকৌশলভিত্তিক পরীক্ষা শুরু করেন। চুল্লির টারবাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তার জড়তাজনিত শক্তি ব্যবহার করে জরুরি পানির পাম্পগুলো চালানো সম্ভব কি না, তা দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে এই প্রকৌশলীরা পারমাণবিক চুল্লির পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। তাঁদের পরীক্ষণ পরিকল্পনাটি ছিল ভুলে ভরা। পরীক্ষা চালাতে গিয়ে প্রথমেই তাঁরা চুল্লির জরুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। এরপর তারা খুব কম বিদ্যুৎপ্রবাহ দিয়ে চুল্লিটি চালাতে থাকেন। এতে চুল্লিটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎপ্রবাহ আবার স্বাভাবিক করার চেষ্টায় তাঁরা অনেকগুলো কন্ট্রোল রড সরিয়ে ফেলেন।

এতে চুল্লির উৎপাদন ২০০ মেগাওয়াটের বেশি হয়ে ধীরে ধীরে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তবে রাত ১টা ২৩ মিনিটের দিকেও প্রকৌশলীরা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন। তাঁরা টারবাইন জেনারেটর বন্ধ করে দেন। তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন, টারবাইনের ঘূর্ণনশীল জড়তা দিয়ে চুল্লির পানির পাম্প চালানো যায় কি না, তবে সেই শক্তি যথেষ্ট ছিল না। চুল্লি যথাযথভাবে ঠান্ডা না হওয়ায় ভেতরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় গলন ঠেকাতে অপারেটররা একসঙ্গে প্রায় ২০০টি কন্ট্রোল রড চুল্লির ভেতরে ঢুকিয়ে দেন।

তবে সমস্যা হলো, রডগুলোর নকশায় ত্রুটি ছিল। প্রতিটি রডের ডগায় ছিল গ্রাফাইট টিপ। এতে রডের পাঁচ মিটার দীর্ঘ শোষণকারী অংশ ঢোকার আগেই একসঙ্গে ২০০টি গ্রাফাইট টিপ চুল্লিতে প্রবেশ করে। এ কারণে তাপমাত্রা আরও বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে চুল্লির ভারী ইস্পাত ও কংক্রিটের ঢাকনা উড়ে যায়।

স্বাস্থ্যগত প্রভাব

ঘটনার পর দ্রুতই বিশ্ববাসী বুঝতে পারে, তারা একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। চেরনোবিলের চুল্লির মোট ১৯০ মেট্রিক টন ইউরেনিয়ামের প্রায় ৩০ শতাংশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখান থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয় এবং চুল্লির চারপাশে প্রায় ১৯ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ‘এক্সক্লুশন জোন’ বা ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ অঞ্চল’ ঘোষণা করে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্য বলছে, দুর্ঘটনার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ২৮ জন প্রাণ হারান এবং ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন।

জাতিসংঘের পারমাণবিক বিকিরণের প্রভাববিষয়ক বৈজ্ঞানিক কমিটি (ইউএনএসসিইএআর) বলেছে, বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে ছয় হাজারের বেশি শিশু-কিশোর থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক গবেষকেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, উচ্চমাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে আসা প্রায় চার হাজার মানুষ এবং অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় আক্রান্ত আরও প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভবিষ্যতে বিকিরণ-সংশ্লিষ্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।

চুল্লির অবশিষ্টাংশের চারপাশ এখন বিশাল ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। তেজস্ক্রিয়তার বিস্তার ঠেকাতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে এ ইস্পাতের কাঠামোটি স্থাপন করা হয়।

পরিবেশগত প্রভাব

চেরনোবিল বিপর্যয়ের পরপরই প্রায় ৪ বর্গমাইল এলাকা ‘রেড ফরেস্ট’ বা ‘লাল বন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। কারণ, ওই অঞ্চলের অসংখ্য গাছ উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা শোষণ করে লালচে-বাদামি রং ধারণ করে এবং মরে যায়।

বর্তমানে চেরনোবিলের প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকাটিতে একদিকে যেমন ভুতুড়ে নীরবতা, আবার অন্যদিকে জীবনের এক আশ্চর্য উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানে অনেক গাছপালা আবার গজিয়ে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা কিছু বন্য প্রাণীর মধ্যে চোখে ছানি পড়া, উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ঘাটতি থাকার মতো কিছু প্রমাণ পেয়েছেন।

চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত একটি অংশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে চলে যেতে বলছে না
  • ঢাবি প্রশাসনকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চান উপাচার্য
  • বগুড়ায় একসঙ্গে জন্ম নিল চার নবজাতক, মা নাম রাখলেন মোহাম্মদ, আহম্মেদ, ওমর ও রহমান
  • বগুড়ায় একসঙ্গে ৪ সন্তান জন্ম দিলেন জুঁই
  • পুকুরে গোসলে নেমে একসঙ্গে তলিয়ে গেল দুই শিশু, লাশ উদ্ধার
  • চেরনোবিলে কিসের ভুলে পারমাণবিক চুল্লিতে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিস্ফোরণ হয়েছিল