বিএসইসির অস্থিরতা দ্রুত সমাধান চায় বিএমবিএ
Published: 6th, March 2025 GMT
দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অভ্যন্তরে চলমান অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
সেই সঙ্গে এ উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির দ্রুত ও সুষ্ঠভাবে সমাধানের লক্ষে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আরো পড়ুন:
অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করব না: বিএসইসির চেয়ারম্যান
পুরনো জাহাজ বিক্রি করবে এমজেএল
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় এক বছর ধরে পুঁজিবাজারে নতুন অর্থের যোগান না থাকায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বাজারে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজমান রয়েছে। বিএমবিএ মনে করে উদ্বুদ্ধ পরিস্তিতির কারণে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা কারো কাম্য নয়। বর্তমানে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এই সংকটের দ্রুত সমাধান না করা হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে এবং উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে নিরুৎসাহিত হবেন। বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে চলমান সংকট দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সমাধানের লক্ষে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে বিএমবিএ।
গত ৪ মার্চ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর নির্দেশ জারি করে কমিশন। একে কেন্দ্র করে সংস্থাটিতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। বুধবার সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এ আদেশকে আইনবহির্ভূত উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের জন্য কমিশনের কাছে দাবি জানায়। কিন্তু কমিশন তাদের অবস্থানে অনড় থাকলে এক পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চেয়ারম্যানের কার্যালয় ঘেরাও করে।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমিশন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর শরানাপন্ন হয। তারা এসে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরকে নিরাপদে অফিস ত্যাগ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা সাইফুর রহমানের অবসরের আদেশ প্রত্যাহার ও বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি জানান। এসব দাবি পূরণ না হলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন। সে ঘোষণা অনুসারে, বৃহস্পতিবার বিএসইসির কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন।
ঢাকা/এনটি/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ব এসইস র ব এমব এ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসি লাভে ফিরলেও ভোগাচ্ছে বিপণন দুর্বলতা
টানা তিন বছর লোকসান দেওয়ার পর লাভে ফিরেছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্র বলছে, গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) তারা ৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। তবে বিপণন দুর্বলতার কারণে করপোরেশনটির তিনটি কারখানা এখনো লোকসানে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার ২৮ বছরের (১৯৯৬–৯৭ থেকে ২০২৩–২৪ অর্থবছর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ের শুরুর দিকে বিএসইসি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৯৯–২০০০ সালে করপোরেশনটি প্রথম লাভে আসে। তারপর টানা ২১ বছর তারা লাভে ছিল। ২০২০–২১ অর্থবছরে এসে এটি লোকসানে পড়ে। টানা তিন বছরে (২০২০–২১ থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছর) ২৬ কোটি টাকা লোকসান দেয় তারা। অবশ্য সেই লোকসান কাটিয়ে এবার লাভে ফিরল করপোরেশনটি।
বিএসইসির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, বিপণন ব্যবস্থাপনায় পেশাদারি আনা, কারখানার জন্য কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা, ক্রয়–বিক্রয়সহ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা ও তদবির ঠেকাতে পারায় লাভে ফেরা সম্ভব হয়েছে।
বিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে।যেভাবে লাভে ফিরলবিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় লাভে থাকা অবস্থায় ২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসি যখন লোকসানে পড়ে, তখন তাদের নয়টির মধ্যে চারটি কারখানা লোকসান দেয়। গত অর্থবছর যখন লাভে ফিরল, তখন তাদের লোকসানি কারখানার সংখ্যা কমে তিনটি হয়েছে। লোকসানে থাকা কারখানাগুলোর লোকসানের পরিমাণও কমেছে।
২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসির যে পাঁচ কারখানা লাভ করেছিল, তাদের লাভের পরিমাণও ছিল সীমিত, যা টাকার অঙ্কে ছিল পাঁচ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে কারখানাগুলোর লাভও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি লাভ বেড়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের, যারা গাড়ি উৎপাদন করে থাকে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ২০২০–২১ অর্থবছরে লাভ ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা, সেখানে কারখানাটি গত অর্থবছরে লাভ করেছে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা। মূলত এই কারখানাই বিএসইসিকে বড় লাভে নিয়ে এসেছে।
যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব। অধ্যাপক আলী আক্কাস, সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গাড়ি বিক্রি কমে যায়। মূলত এ কারণে তাদের লাভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। লাভ বাড়ানোর জন্য তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়, উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় এবং বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছেও গাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এতেই তাদের লাভ অনেক বেড়েছে।
২০২২–২৩ অর্থবছরে ন্যাশনাল টিউবস প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। এটি গত অর্থবছর লাভ করেছে ৮ কোটি টাকার বেশি। এই কারখানায় এমএস, জিআই, এপিআই পাইপ তৈরি করা হয়। বিএসইসি চেয়ারম্যান দপ্তর জানায়, কাঁচামালের অভাবে এই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যে প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানির দায়িত্ব পেয়েছিল, তারা যোগ্য ছিল না এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। একপর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেড় কোটি টাকার বেশি জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল টিউবসের মতো বিএসইসির অন্য কোনো কারখানায় কাঁচামালের অভাবে যেন উৎপাদন বন্ধ না হয় বা দেরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য বিএসইসি ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়। তারা লোকসানের কারণ অনুসন্ধান করেছে এবং সমাধান সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রয়–বিক্রয়, কারখানায় কী পরিমাণ পণ্য আছে ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ কাজ নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা গেছে। তদবিরের ভিত্তিতে নয়, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিএসইসিকে লাভে ফেরাতে সহযোগিতা করেছে।
সামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ।বিপণন দুর্বলতায় তিন কারখানা লোকসানেসামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এসব কারখানা লোকসানে পড়েছে।
বিএসইসির উৎপাদনে থাকা নয়টি কারখানার বাইরে বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামের আরও একটি কারখানা রয়েছে। যারা সোর্ড ব্র্যান্ডের ব্লেড উৎপাদন করে। তবে কারখানার আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০১৯ সাল থেকে এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু সাঈম প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর নাগাদ তাদের বাণিজ্যিক উৎপাদনের আশা রয়েছে। উৎপাদনে গেলে তাদের লাভে ফেরা সম্ভব।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে লাভে ফেরা সম্ভববিএসইসির লোকসান থেকে লাভে ফেরার বিষয়টি ইতিবাচক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরোর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আক্কাস প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব।
কোনো প্রতিষ্ঠান লাভে থাকলে কর্মসংস্থান হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটায় এবং আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমায়, যা একটি দেশের জন্য ভালো বলেও উল্লেখ করেন আলী আক্কাস।