জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর ৮ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁদের মধ্যে সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন পপগুরু আজম খান।

বাংলা পপ গান গেয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন আজ খান। শুধু তাই নয়, তিনি এ ঘরানার গান গেয়ে ‘পপ সম্রাট’ উপাধি পেয়েছিলেন। সবাই তাকে গুরু বলেও সম্বোধন করতেন।

আজম খান ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন আজম খান। একবার শোনার পর যে গান ভালো লাগতে সেটাই কয়েকবার শুনতেন। এভাবে প্রিয় গানগুলো পরে হুবহু গাইতে পারতেন।

আজম খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আজম খান ক্লাস নাইনের ছাত্রাবস্থায় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি শাসকরা বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে অনেক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এমন অনুভব শক্তি আজম খানকে বিপ্লবী চিন্তার মানুষে পরিণত করে। সেই সময় তিনি জানতে পারেন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর কথা। গণসংগীতের চর্চা করতেন এই শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। বন্ধুদের সঙ্গে এই শিল্পীগোষ্ঠী সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন আজম খান।

ধীরে ধীরে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার পর এই শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন। তাদের সাধারণ মানুষের জীবনের অভাব ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হতো গানে গানে। প্রতিবাদী গান গাওয়ার জন্য পুলিশের লাঠির বাড়িও খেয়েছেন আজম খান। গণ–আন্দোলনের সময়গুলোতেও গান করে গেছেন আজম খান।

আজম খানের গাওয়া অনেক জনপ্রিয় গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এত সুন্দর দুনিয়ায়’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ও চাঁদ সুন্দর’, ‘বাধা দিয়ো না’, ‘ও রে সালেকা ও রে মালেকা’ও ‘জীবনে কিছু পাব না রে’।

২০১১ সালের ৫ জুন এ গায়ক অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান পপ সম্রাট।

আজম খান ছাড়া আরও যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পাচ্ছেন তারা হলেন, এম এ জি ওসমানী, বদরুদ্দীন উমর, ফজলে হাসান আবেদ, নভেরা আহমেদ, আল মাহমুদ ও আবরার ফাহাদ। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র প্রদান হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আজম খ ন ন আজম খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভ্যাটিকানের মানব ভ্রাতৃত্ব সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ভ্যাটিকান সিটিতে আগামী ১২-১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মানবভ্রাতৃত্ব বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।

ভ্যাটিকানের ফন্ডাজিওনে ফ্রাতেল্লি তুত্তির মহাসচিব ফাদার ফ্রান্সেস্কো ওক্কেত্তা বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ব্যক্তিগতভাবে এই আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।

সাক্ষাতের সময় ওক্কেত্তা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের বৈশ্বিক প্রভাবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আপনি একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, আপনি এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।”

আরো পড়ুন:

চীনের গ্রাম ও নগরায়নের সমন্বিত উন্নয়ন নিয়ে ঢাকায় সেমিনার

গঙ্গার পানি প্রবাহ খতিয়ে দেখলেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা

মানব ভ্রাতৃত্ব বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনকে একটি ঐতিহাসিক আয়োজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে বিশ্বনেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং চিন্তাবিদরা একত্রিত হবেন ঐক্য, শান্তি ও সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য।

এই আয়োজনে ‘টেবিলস অব হিউম্যানিটি’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি খসড়া করা হবে, যেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সার্বজনীন নীতিমালা নির্ধারণ করা হবে এবং পোপ ফ্রান্সিসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি নতুন মানব সনদ গঠনের দিকনির্দেশনা থাকবে।

সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এক বিশাল জনসমাগমের প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা এই সম্মেলনের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন হবে। পাশাপাশি, এতে বৈশ্বিক কনসার্ট, আলোচনা সভা ও প্রতীকী মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা থাকবে, যা মানব ভ্রাতৃত্বের মূলনীতিগুলোকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবে।

ওক্কেত্তা অধ্যাপক ইউনূসকে জানান, বিশ্বের বিশিষ্ট নেতারা এই আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন।

সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং তার প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “তিনি একজন অসাধারণ মানুষ।”

জবাবে ওক্কেত্তা বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা শুধু আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে আসিনি বরং বাংলাদেশকে সমর্থন, যত্ন ও ভালোবাসা জানাতেও এসেছি।”

অধ্যাপক ইউনূস এই আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমি এই সম্মেলনের জন্য আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছি।”

ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসের ‘থ্রি জিরো প্রিন্সিপল’-শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ-এর প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করেছে, যা তার রূপান্তরমূলক নেতৃত্ব ও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বিশ্ব গঠনের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

ঢাকা/হাসান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ