চেয়ারম্যান-কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে অনড় বিএসইসির কর্মচারীরা
Published: 6th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং কমিশনারদের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিএসইসির চেয়ারম্যান ‘অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত না করার’ প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও তার পদত্যাগের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনড় অবস্থানে আছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ও বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মিরাজ উস সুন্নাহ লিখিত বক্তব্যে চার দাবি জানিয়েছেন। এ সময় বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দাবিগুলো তুলে ধরে মিরাজ উস সুন্নাহ বলেছেন, বর্তমান কমিশনকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ডেকে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঠিচার্জ করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিএসইসির জন্য পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে বিএসইসিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন-স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি ও দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ মার্চ কমিশনের কাছে তাদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করেছেন। এর কোনো সুরাহা না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানোয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ কর্মস্থলে লাঠিচার্জ ও হামলার শিকার হওয়া বিএসইসি তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়।
বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি স্পষ্ট—আমরা কারো ক্রীড়নক না হয়ে আইন কানুন মেনে দেশের মানুষের জন্য, বিনিয়োগকারীদের জন্য ও সর্বোপরি পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। কিন্তু, অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, একইরকম নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আর পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পেল একদল অনভিজ্ঞ নেতৃত্ব। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই ইতোমধ্যে জানে যে, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ অন্য কমিশনারদের পুঁজিবাজারে নিয়ে ভালো ধারণা নেই, অভিজ্ঞতা নেই, এমনকি পুঁজিবাজারের উন্নতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের সদিচ্ছা নেই। এভাবে কাজ করা যায় না। তাদের অদক্ষতায় একদিকে যেমন পুঁজিবাজারে দুর্দিন যাচ্ছে, অন্যদিকে তাদের সীমাহীন দুর্ব্যবহার, স্বেচ্ছাচারী ও আইনবহির্ভূত মনোভাব ও কাজে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হতাশ। এমতাবস্থায় পুঁজিবাজারের উন্নতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বার্থে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও অন্য কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করছি। অন্যথায়, আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কর্মবিরতি পালন করবেন।
ঢাকা/এনটি/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র কর মকর ত র পদত য গ ব এসইস র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা কমাতে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ
বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মার্জিন ঋণের বিপরীতে অনাদায়ী ক্ষতি (নেগেটিভ ইক্যুইটি) দেশের পুঁজিবাজারের অন্যতম বড় সমস্যা। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। গত ১৫ বছরের পুঞ্জিভূত এ সমস্যা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। তাই, এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করে সহায়তা ও পরামর্শ চেয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহায়তা ও কার্যকরী পরামর্শে পুঁজিবাজারে উদ্ভুত নেগেটিভ ইক্যুইটি-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করেতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যভুক্ত সকল ব্রোকারেজ হাউজ বা ট্রেক এবং সকল মার্চেন্ট ব্যাংক নিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি সভা আহ্বান করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
সম্প্রতি বিএসইসি থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে বিএসইসি জানিয়েছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের সিকিউরিটিজের আকস্মিক বড় দরপতন এবং এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বছরগুলোতে এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন হিসাবে অনাদায়কৃত ক্ষতি পুঞ্জিভূত হয়, যা বিনিয়োগকারীদের হিসাবে নেগেটিভ ইক্যুইটি আকারে দীর্ঘদিন যাবত ক্যারি ফরওয়ার্ড হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে কমিশন বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনাসহ এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও বিদ্যমান নেগেটিভ ইক্যুইটি পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিগত সময়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজার থেকে বিদ্যমান নেগেটিভ ইক্যুইটি অবলোপন করার উদ্দেশ্যে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখার নির্দেশনা দেয়, যার সময়সীমা চলতি বছরের গত ৩১ জানুয়ারি অতিক্রান্ত হয়েছে। এমতাবস্থায়, উপযুক্ত বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং আপনার দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সভা আহ্বান করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতা ও কার্যকরী পরামর্শে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন উদ্ভুত নেগেটিভ ইক্যুইটি-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ভূমিকা রাখবে।
চিঠিতে ২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পাঠানো চিঠি সদয় বিবেচনা করার অনুরোধ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করতে বিএসইসির কাছে অবেদন করা হয়েছে। এছাড়া, নেগেটিভ ইক্যুইটির রিফাইন্যান্সের (পুনঃঅর্থায়ন) জন্য ডিএসই থেকে একটি আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসইসির পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
পুঁজিবাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিস্থিতি
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারোজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৭টি মার্জিন বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মোট মার্জিন ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ১১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ১৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফলে, ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।
সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সুদ ২১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ফলে, সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অপরদিকে বিএসইসির অনুমোদিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ২ হাজার ৭০৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ৪৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট প্রভিশন রেখেছে ২ হাজার ৭০১ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
২০২৩ সালের ২৭ মার্চ জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পোর্টফোলিওর মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে প্রভিশনিং সংরক্ষণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা, নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধানের বিষয়টি অর্থ উপদেষ্টার ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অবহিত করেছে ডিএসই ও ডিবিএ।
ঢাকা/এনটি/রফিক